ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশাল-ভোলা মহাসড়কে বিপুল কর্মযজ্ঞ

ফুল সরণি পরিবেশ সচেতনতায় অভূতপূর্ব উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

ফুল সরণি পরিবেশ সচেতনতায় অভূতপূর্ব উদ্যোগ

খোকন আহম্মেদ হীরা পরিবেশ সচেতনতায় বরিশাল-ভোলা মহাসড়কের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়কের দুইপাশে সম্প্রতি কৃষ্ণচূড়া, সোনালু ও জারুলের তিন সহস্রাধিক চারা রোপণের মধ্যদিয়ে দেশের প্রথম ফুল সরণি বিনির্মাণের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। ফুল সরণি নির্মাণ কর্মসূচীতে বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুলের শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সিটি কর্পোরেশন, মুক্তিযোদ্ধাসহ ৯৬টি এনজিওর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এ কর্মসূচীতে পুরো সড়কজুড়ে মনোরম পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ৪৮টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কৃষ্ণচূড়া দলের সদস্যরা মাথায় লাল ফিতা, সোনালু দলের সদস্যরা সোনালী ফিতা ও জারুল দলের সদস্যরা ফুলের রঙের বেগুনী ফিতা মাথায় বেঁধে গাছের চারা রোপণ করেন। এ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণকারীদের উজ্জীবিত রাখতে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বরিশাল উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ একাধিক সাংস্কৃতিক দলের শিল্পীরা পরিবেশ বিষয়ক সংগীত পরিবেশন ও বাদক দল বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রে পুরো এলাকা মাতিয়ে রাখে। দেশের প্রথম স্বীকৃত ফুল সরণিতে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু ও জারুল গাছের চারা রোপণ করে সড়কটিকে রঙিন ফুলে ভরিয়ে তোলার জন্যই এ কর্মসূচী বলে জানিয়েছেন ফুল সরণির স্বপ্নদ্রষ্টা বরিশাল জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান। তিনি বলেন, চারা রোপণের তিন বছরের মধ্যে মহাসড়কের ওই অংশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ স্থান হয়ে উঠবে। বর্তমান ও আগামী প্রজন্ম ফুল সরণির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে। এ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণকারী আনিকা আক্তার আন্নি নামের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বলেন, এ সড়কে ফুলের গাছ লাগানোর ফলে সৌন্দর্য অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। ইতিহাসের সাক্ষী এ ফুল সরণির কর্মসূচীতে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পেরে নিজেকে আজ গর্বিত মনে হচ্ছে। বরিশাল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ফুলে-ফুলে একটি সড়ক সাজিয়ে তুলতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের হিরণ পয়েন্ট থেকে চরকাউয়া পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার মহাসড়কের দুইপাশে তিন হাজার ফুলের বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে গত ১৫ জুলাই ‘ফুল সরণি’ বির্নিমাণ কাজের উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শহিদুজ্জামান। জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান জানান, বরিশালের ফুল সরণিটি হবে দেশের প্রথম ‘ফুল সরণি’। তিনি আরও জানান, পরিবেশ সচেতনতায় ফুলের সরণি নির্মাণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সবাই এগিয়ে এসেছেন। অনেকে নেচে, গেয়ে উৎসাহ দিয়েছেন বৃক্ষরোপণে আসা অংশগ্রহণকারীদের। এ কাজে অংশগ্রহণকারী সকলের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সনদ প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রুপ ও ব্লক ভিত্তিক মূল্যায়নে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জন্য গাছের চারা রোপণের মান, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, রোপণকারীর আচরণ, সময় ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিবেচিত হবে। ফুল সরণির ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কে ১০০ মিটার করে ৪৮টি খ-ে ভাগ করে সেখানে চারা রোপণের জন্য ৪৮টি দলের সদস্যরা নান্দনিকতা ফুটিয়ে তুলতে পর্যায়ক্রমে একেক খ-ে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু এবং জারুল গাছের চারা রোপণ করেছেন। দেশের প্রথম স্বীকৃত ফুল সরণি বিনির্মাণ অভিযান সরাসরি জেলা প্রশাসনের ফেসবুক টিভিতে সম্প্রচার করা হয়েছে। গত ৩১ মে থেকে অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করে গত ১ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত চারা সংগ্রহ ও মহাসড়কের দুইপাশে গর্ত করা হয়। ১৫ জুলাই বরিশাল সদর উপজেলার কর্নকাঠিতে বরিশাল-ভোলা মহাসড়কের প্রায় ৫ কিলোমিটার অংশের দুই পাশে ফুলের গাছ লাগানো শুরু হয়। এদিকে চারা ও আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ ফুল সরণি নির্মাণের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্বেচ্ছায় এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য আগে থেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং নগরীর তিনটি সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ, দুইটি ইউনিয়ন পরিষদসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
×