ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জনকণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের পর

চট্টগ্রামে ৬০ কোটি টাকার সম্পত্তি উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

চট্টগ্রামে  ৬০ কোটি টাকার সম্পত্তি উদ্ধার

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে গণপূর্ত ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা প্রায় ৬০ কোটি টাকা মূল্যের দুটি বাড়ি অবৈধ দখলের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে চাকরিচ্যুত এক পুলিশ সদস্যের। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ভূমিদস্যু ইকবাল কাট্টলী ভূমি অফিসের কর্মচারীদের যোগসাজশে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সরকারী দফতর প্রতিহত করার চেষ্টার পাশাপাশি এক মুক্তিযোদ্ধার নামে গণপূর্ত দফতর থেকে ভুয়া বরাদ্দ নিয়ে ভাড়া বাণিজ্য গড়ে তোলার অভিযোগ ছিল। এ বিষয়ে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় গত ১৩ অক্টোবরসহ বিভিন্ন সময়ে দুই বা ততোধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর টনক নড়ে জেলা প্রশাসনের। এছাড়াও মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর স্বাক্ষর ও সীল জাল করে এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে এইসব ভূমি বরাদ্দ নিতে ডিও লেটার বানিয়েছে এই অবৈধ দখলদার। অবশেষে জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ ভূমি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের আদেশ দেয়া হয়। কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ জোবায়ের আহমেদ ও জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুস সামাদ শিকদার মঙ্গলবার উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে দুটি সরকারী বাড়ি ও জমি থেকে মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ভূইয়াকে সপরিবারে ভাড়াটিয়াসহ উচ্ছেদ করেন। এসময় পিডিবি ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ইকবালের ভাড়াঘর থেকে অবৈধ ৪টি গ্যাসের চুলা উদ্ধার করা হয়। দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর ধরে জসিম উদ্দিনের রাইজার থেকে রাতের আঁধারে অবৈধ সংযোগ নিয়ে ভাড়া বাণিজ্য চালিয়ে আসছিল এই ভূমিদস্যু। পরিবেশ অধিদফতরের সামনে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাট্টলী সার্কেল অফিস প্রতিহত করতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে উচ্চ আদালত থেকে গত ৬ মাসের স্থগিতাদেশও নিয়েছিল এই ভূমিদস্যু। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালতে শুনানি শেষে স্থগিতাদেশ বাতিল হওয়ায় অগত্যা মামলা তুলে নেয় এই ভূমিদস্যু। তবে রিট আবেদনের মাধ্যমে ৬০ কোটি টাকার সরকারী সম্পত্তি দখলের চেষ্টায় এলাকাবাসীর মধ্যে কৌতূহল ছিল। এ ব্যাপারে কাট্টলী সার্কেলর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ জোবায়ের আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, দীর্ঘ শুনানির পর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বাতিল ও ভূমিদস্যু মামলা তুলে নেয়ায় উচ্ছেদ অভিযান করা হয়েছে। তবে ভুয়া কাগজপত্র সৃজন করে সরকারী সম্পদ অবৈধ দখলে রেখেছিল। এমনকি কাট্টলী ভূমি অফিসের জন্য বরাদ্দকৃত ভবনও অবৈধ দখলে রাখতে মামলা দায়েরের মত ঘটনা ঘটিয়েছে সে। জানা গেছে, আকবর শাহ থানাধীন জাকির হোসেন রোড সংলগ্ন পরিবেশ অধিদফতরের ঠিক সম্মুখে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ৫৫ নং দ্বিতল বাড়ি। পরিত্যক্ত সম্পত্তির ওপর মাত্র ১০ শতক গড়ে ওঠা এ বাড়িটির আশপাশের ভূমিসহ ৪৬ শতক জায়গার আয়তনে রয়েছে। আরএস খতিয়ান নং-১০৭ এর আওতায় বি.এস দাগ নং-৮১ এ ভূমির পরিমাণ ১৯ শতক, ৮৯ নং দাগে ১৭ শতক ও ৯৫ নং দাগে ১০ শতক ভূমি রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র দশ শতক ভূমির ওপর গণপূর্তের নিয়ন্ত্রণে একটি দ্বিতল বাড়ি রয়েছে। সরকারী হিসেব অনুযায়ী এ পরিত্যক্ত বাড়িটি বর্তমানে বরাদ্দপ্রাপ্ত হিসেবে তথ্য ও প্রকাশনা অধিদফতর ও গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মচারীরা সপরিবারে বসবাস করেন। এদিকে, গণপূর্ত বিভাগের অধীনে থাকা ৫৫ নম্বর বাড়িটি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে এ চাকুরিচ্যুত পুলিশ সদস্য ইকবাল হোসেন ও স্থানীয় নুরুজ্জামান। ৪৬ শতক ভূমির প্রায় ১৬ শতক নুরুজ্জামান গংয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ দখলে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তখন জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ ভবনের সম্মুখে থাকা লট-৯ পাহাড়তলী মৌজার বিএস ৮৯ দাগের একটি অংশ দখলে নিয়েছে গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ।
×