ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আইনী সহায়তা দিন

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

আইনী সহায়তা দিন

দুর্ঘটনার জন্য দোষী ব্যক্তির শাস্তি দানের বিষয়টি কাগজে-কলমেই বেশি মেলে। বাস্তবে এর প্রয়োগ খুব বেশি একটা দেখা যায় না। ভিকটিম সুবিচার পান না অনেক সময় অপরাধী ও অপরাধনির্মূূল সংস্থার মধ্যে সমঝোতার কারণেও। এমন বাস্তবতায় দুই গুণীজন মিশুক-তারেকের সড়ক দুর্ঘটনার মামলার বিচারের রায় দেশের বহু ভুক্তভোগীর সামনে আশার আলো জ্বালিয়ে দেবে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বাসের মালিক, চালক ও ইনস্যুরেন্স কোম্পানিকে এই ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে হবে। তিন মাসের মধ্যে ওই অর্থ দিতে রায়ে বলা হয়েছে। বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মোঃ ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার এ রায় দেয়। সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এটি এখন প্রতিদিনের দুঃসংবাদ। দেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ৫ হাজার ১৬২ জনের মৃত্যু ঘটছে। এর মধ্যে ঘটনাস্থলেই মারা যাচ্ছেন ৩ হাজার ১৬৭ জন। এটা সত্য যে, কোন গাড়ি মৃত্যুদূত হিসেবে সক্রিয়তার নজির রাখলে দোষী করা হয় সংশ্লিষ্ট গাড়িচালককে। এখানে যুক্তি হলো গাড়িচালকের অবহেলা বা অদক্ষতার কারণে তার গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। অনেক সময় মাদক সেবনের পর গাড়ি চালনারও অভিযোগ ওঠে চালকের বিরুদ্ধে। এইসব অভিযোগের কিছুটা সত্যতা তো অবশ্যই রয়েছে। বিশেষ করে নৈশযাত্রায় অনেকেরই অভিজ্ঞতায় পাওয়া যাবে ঘুম-ঢুলুঢুলু চোখে চালকের গাড়ি চালনার বিষয়টি। দেশের লাখ লাখ পেশাদার গাড়িচালকের ভেতর কত ভাগ যোগ্যতাসম্পন্ন? গাড়িচালকের সহকারীরাইÑ হেলপার নামেই যাদের পরিচয়, তারাই এক পর্যায়ে ‘ওস্তাদের আশীর্বাদ’ নিয়ে স্টিয়ারিং হাতে তুলে নেন। যেহেতু একটি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের প্রাণ হরণের মতো কাণ্ডের জন্ম দিতে পারে তাই গাড়ির ফিটনেস এবং গাড়িচালকের সুস্থতার গ্যারান্টি খুব জরুরী। আমরা আশা করব সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হলে প্রশাসনের ওপর কোন অন্যায্য চাপ প্রয়োগ করা হবে না। আদালত অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করলে ধর্মঘট আহ্বানের মাধ্যমে অরাজকতা সৃষ্টি করা হবে না। তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘যে ঘটনায় তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীরসহ এতগুলো প্রাণ ঝরে গেল, সেটি নিছক দুর্ঘটনা নয়। এমন ঘটনার পেছনে অনেক মানুষেরই দায়দায়িত্ব আছে। শুধু চালকের নয়, বাস বা ট্রাক কোম্পানি, মালিক, বীমা প্রতিষ্ঠানেরও দায়দায়িত্ব আছে। রায়ের মধ্য দিয়ে আমরা তাদের যতটা দায়বদ্ধ করতে পারব ভবিষ্যতে তারা ততটাই সতর্ক হবে। আমরা সবাই তাহলে তা থেকে একটি ফল পাব।’ উচ্চ আদালতের রায় থেকে দেশের মানুষ অবগত হতে পারছে যে, দুর্ঘটনার ফলে যে ক্ষতিপূরণ চাওয়া যায়, মোটরযান অধ্যাদেশেও এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা আছে। তাই সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে অবশ্যই ভুক্তভোগীর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা কাম্য। ভুক্তভোগীকে বিনামূল্যে আইনী সহায়তা প্রদান করা হলে ন্যায় বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সে উপকৃত হতে পারবে। আমাদের প্রত্যাশা জনস্বার্থে সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়ে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সেবায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।
×