ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্রহণযোগ্য শান্তি পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

অগ্রহণযোগ্য শান্তি পরিকল্পনা

ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গত মাসে সৌদি আরব সফরের সময় ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানতাকে এমন একটি শান্তি প্রক্রিয়া মেনে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন যা কোন স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনী নেতা মেনে নিতে পারেন না। তবে তাদের দুজনের মধ্যে আসলে কি কথা হয়েছিল তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। নিউইয়র্ক টাইমস। ওই সফরকালে আব্বাস ও বিন সালমানের মধ্যে রুদ্ধদার বৈঠক হয়। তারা কোন যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেননি। তাদের মধ্যে কি কথা হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে আব্বাস সাংবাদিকদের যা বলেছেন তা মনে হয় সৌদি প্রস্তাবটি ছিল পুরোপুরো ইসরাইলের স্বার্থের অনুকূলে। মধ্যপ্রাচ্যে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য ফিলিস্তিনীরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করে এসেছে। বিন সালমানের দেয়া প্রস্তাব অনুযায়ী স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও ফিলিস্তিনীরা পূর্ণ সার্বভৌমত্ব পাবে না। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদী বসতিগুলো তাদের মেনে নিতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবেও এই বসতিগুলো বেআইনী স্থাপনা হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। পূর্ব জেরুজালেমের ওপর ফিলিস্তিনীরা নিজেদের রাজধানী করার অধিকার পাবে না। যেসব ফিলিস্তিনী নিজ ভূমি ছেড়ে অন্যদেশে শরণার্থী হয়েছেন তারা বা তাদের পরবর্তী প্রজন্ম প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে ফিরে আসার অধিকার পাবেন না। যেসব ভূখ- নিয়ে ফিলিস্তিনীরা নিজেদের স্বাধীন দেশ গড়ার প্রত্যাশা করে সেগুলো তারা পাবে না, পশ্চিম তীরের কিছু বিচ্ছিন্ন ভূমি তাদের দেয়া হবে। সব মিলিয়ে এই প্রস্তাব কোনভাবেই ফিলিস্তিনীদের স্বার্থের অনুকূলে ছিল না। তবে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে আব্বাসের কাছে এ ধরনের কোন প্রস্তাব দেয়া হয়নি। ফিলিস্তিনীদের স্বার্থের জন্য হানিকর এই প্রস্তাব মেনে নিলে নেতা হিসেবে আব্বাসের রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে। কারণ এতে এটাই প্রমাণিত হবে যে তিনি রিয়াদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছেন। পরিকল্পনাটি একতরফা যা কোন ফিলিস্তিনী নেতাই মেনে নিতে পারেন না। বিন সালমান এবং আব্বাসের মধ্যে আসলে কি ধরনের শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে কথা হয়েছে তা নিয়ে আঞ্চলিক পর্যায়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে এ ধরনের অবস্থান গ্রহণের কথা অস্বীকার করেছে রিয়াদ। অন্যদিকে হোয়াইট হাউস রবিবার বলেছে তারা এ ধরনের পরিকল্পনা সমর্থন করেন না। ফিলিস্তিন বিষয়ে মার্কিন পরিকল্পনা চূড়ান্ত হতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে বলে জানা গেছে। যদিও এ বিষয়ে পূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার কথা ভাবছে এ রকম খবর প্রকাশের পর আব্বাসের বক্তব্য অনুযায়ী সৌদি পরিকল্পনাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। যদি তাই হয় তবে এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নের মুখোমুখি হবে। কারণ মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রকে তাত্ত্বিকভাবে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখা হয়। পরিকল্পনার তথ্যটি সঠিক হলে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। ওয়াশিংটনের নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত খালিদ বিন সালমান ই-মেইলে বলেছেন, তার দেশ এখনও ২০০২ সালে দেয়া আরব শান্তি পরিকল্পনার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আছে। ওই পরিকল্পনায় ১৯৬৭ সালের সীমানার ভিত্তিতে পূর্ব জেরুসালেম রাজধানী করে একটি ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের সব দায় দায়িত্ব জামাতা জারেড কুশনার, উপদেষ্টা জেসন গ্রিনব্লাট ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা গত এক বছরে অনেকবার মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন। এখন তারা নিজেদের একটি পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছেন বলে জানা গেছে।
×