ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী

ডব্লিউটিও মিনিস্ট্রিয়াল ॥ বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জোরালো অবস্থান নেবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

ডব্লিউটিও মিনিস্ট্রিয়াল ॥ বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জোরালো অবস্থান নেবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আসন্ন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ অতীতের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের জোড়াল দাবি জানাবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে অতীতের চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে। তাহলে আর যুক্তরাষ্ট্রকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে শুল্কমুক্ত কোটা মুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দিতে হবে না। কিন্তু আমরা এটা মানব না। আমরা চাইব, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য হিসেবে সব দেশ সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের অতীতের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করুক। কারণ বিশ্বের অনেশ দেশ বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত ও কোটা মুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দিলেও যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সেই সুবিধা দেয়নি। ফলে আমাদের পণ্যকে ১৬ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করতে হচ্ছে। এতে আমাদের পণ্য অন্যান্য দেশের সঙ্গে অপ্রতিযোগী হয়ে পড়ছে। আগামী ১০ থেকে ১৩ জানুয়ারি আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ ১১তম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শুরু হচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ বৈঠকে ২৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নিচ্ছে। বৈঠকে যোগদানের আগে বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি বলেন, ১০তম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আমরা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত পেয়েছি। ওই বৈঠকে ওষুদের মেধাস্বত্বের বাধ্যবাধকতা থেকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অব্যাহতির মেয়াদ আমরা ১৭ বছর বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। এই অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল, তা এখন ২০৩৩ সালের জানুয়ারি মাসে শেষ হবে। এতে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প আরও বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে। আগামী ২০২১ সাল নাগাদ এ শিল্পের রফতানি আয় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, দশম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সেবা খাতে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রদত্ত অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে দেয়া এই সুবিধার এখনও কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত ২৪টি দেশ এ সিদ্ধান্ত কার্যকরে তাদের নোটিফিকেশন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় জমা দিয়েছে। ১১তম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠককে সামনে রেখে এ ব্যাপারে আর কোন কর্মকা- গৃহীত হয়নি। মন্ত্রী বলেন, এবারের সম্মেলনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। সেটি হলো ‘ক্রসবর্ডার পেপারলেস ট্রেড’। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পেপারলেস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। আশা করছি, এবারের সম্মেলনে এ বিষয়ে অগ্রগতি হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অচিরেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের কৌশলপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০২৪ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করবে। তখন বাংলাদেশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ উন্নতবিশ^ থেকে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাবে। এজন্য আমরা ‘জিএসপি প্লাস’ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলেও আমরা তিন বছর গ্রেস পিরিয়ড পাব। যা কাজে লাগিয়ে আমরা উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে মধ্যম আয়ের দেশের সুবিধাদী অর্জন করতে সক্ষম হব। এছাড়া, বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষর চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ১ম থেকে ১০ম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন দাবি করবে বাংলাদেশ। বিশেষ করে, শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা, সেবা খাতে সার্ভিসেস ওয়েভারের কার্যক্রম বাস্তবায়ন, রুলস অব অরিজিন বিষয়ক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং স্পেশাল এ্যান্ড ডিফারেনশিয়াল ট্রিটমেন্ট সুবিধা বাস্তবায়নের বিষয়ে জোড়াল অবস্থান নেবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, উন্নত বিশ^ এলডিসিভুক্ত দেশকে জিএসপিসহ বিভিন্ন বাণিজ্য সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু অনেক উন্নত দেশ তা দিচ্ছে না। আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিতব্য ১১তম ডব্লিউটিও মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে বিষয়গুলো সর্বাধিক গুরুত্বসহ আলোচনা করা হবে এবং চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানানো হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন বিশ^বাণিজ্য সংস্থায় এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। এবারে কম্বোডিয়া কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব পালন করছে। মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে অনেককিছু পেয়েছে। এর আওতায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ অনেক দেশ বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা প্রদান করছে। ডব্লিউটিও মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সের সিদ্ধান্ত মোতাবেক রুলস অব অরিজিন ৩০ ভাগ থেকে ২৫ ভাগে নেমে আনা হয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা প্রদান করছে না। কনফারেন্সে ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক, ইউএসটিআর এবং বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। বাংলাদেশের পণ্য রফতানি বিষয়ে প্রচেষ্টা চালানো হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বাধীন ও উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, আজ তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে স্বপ্ন পূরণ করে চলছেন। বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী। অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ হবে মধ্য আয়ের ডিজিটাল দেশ।
×