ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রসিক নির্বাচন

মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ৪ ডিসেম্বর ॥ সোমবার দুপুরে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টু পেয়েছেন দলীয় প্রতীক নৌকা, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছেন দলীয় প্রতীক লাঙ্গল, বিএনপি প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা পেয়েছেন দলীয় প্রতীক ধানের শীষ, জাপার বিদ্রোহী নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ পেয়েছেন হাতি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের গোলাম মোস্তফা পেয়েছেন হাতপাখা, বাসদের আব্দুল কুদ্দুস পেয়েছেন মই ও এনপিপির সেলিম আক্তার পেয়েছেন আম মার্কা। এছাড়া, সংরক্ষিত কাউন্সিল ৬৫ ও সাধারণ কাউন্সিলর ২১১ পদপ্রার্থীকেও প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সোমবার প্রতীক বরাদ্দের নির্ধারিত দিনে সকাল থেকে প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে জমায়েত হতে থাকেন। শত শত উৎসুক মানুষের সমাগমে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে। প্রতীক পাওয়ার পর পরই নগরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে প্রচার মাইক। নানা প্রকার নির্বাচনী সেøাগানে সরগরম হয়ে ওঠে মহানগরের অলি-গলি, পাড়া-মহল্লা। এবারের সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন বর্ধিত এলাকার ভোটাররা। কারণ অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে তারা ইউনিয়ন থেকে রংপুর সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। সিটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য অনেক ইউনিয়নের মানুষ তদ্বির করেছেন, আন্দোলনও করেছেন। তাদের ধারণা ছিল সিটিতে যুক্ত হলে তাদের নাগরিক সুবিধা বাড়বে, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবার মান বাড়বে, গ্রামের মধ্য দিয়ে পাকা রাস্তা, বিদ্যুতের আলোয় ঝলমল করবে। কিন্তু তাদের সে আশা পূরণ হয়নি। নাগরিক সুবিধা তো বাড়েইনি, বেড়েছে করের বোঝা। এ নিয়ে বর্ধিত এলাকাবাসীর অভিযোগ ও ক্ষোভের শেষ নেই। তাদের এই ক্ষোভ ও বঞ্চনার সুযোগ নিচ্ছেন প্রার্থীরা। তাদের ভোট পক্ষে টানতে প্রার্থীরা বেশি সময় ব্যয় করছেন তাদের পেছনে। নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তাদের সামনে তুলে ধরছেন ওই এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা। কাউন্সিলর প্রার্থীরাও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। ১৫ টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত রংপুর পৌরসভার আয়তন ছিল মাত্র ৫২ বর্গকিলোমিটার। ২০১২ সালে সাবেক পৌরসভার ১৫ টি ওয়ার্ডের সঙ্গে সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী কাউনিয়া উপজেলার সারাই এবং পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী ইউনিয়নসহ ১০ টি ইউনিয়নের মোট ১১২ টি মৌজাকে অন্তর্ভুক্ত করে রংপুর সিটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়। ৩৩ ওয়ার্ডে বিভক্ত রংপুর সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান আয়তন ২০৩ দশমিক ৬৩ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে ১৫১ বর্গকিলোমিটার বর্ধিত এলাকা। সিটির মোট ভোটারের অর্ধেকের বেশি বাস করে বর্ধিত এলাকায়। কাজেই, সিটি নির্বাচনে বর্ধিত এলাকার ভোট প্রধান ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিলুপ্ত তামপাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাসান আলী মিঞা অভিযোগ করেন, আমরা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাস করি, অথচ ব্যবহার করি পল্লী বিদ্যুত। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে আমাদের বাড়তি বিল দিতে হয় ৩৪ পয়সা। নগরীর পুরাতন ৬টি ওয়ার্ডে নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু নতুন কোন ওয়ার্ডে নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়নি। আমাদের জমির মূল্য আগের মতোই আছে। কারণ সবই চাষের জমি। সেই আবাদি জমির কর দিতে হচ্ছে বাণিজ্যিক এলাকার হারে। তিনি বলেন, কর বেশি দিতে আপত্তি নেই, কিন্তু সুবিধাও তো বাড়াতে হবে। আমরা তাদেরই ভোট দেব যারা নাগরিক সুবিধার ক্ষেত্রে বর্ধিত এলাকার মানুষ যাতে বৈষম্যের শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এ বিষয়ে সদ্য সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ প্রার্থী সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টু বলেন, এই সিটির কর আদায়ের হার সন্তোষজনক নয়, সরকারী অনুদান এবং বিদেশী সাহায্যই প্রধান অবলম্বন। ২০৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সিটির পুরো এলাকার উন্নয়নের জন্য যে পরিমাণ অর্থের দরকার তা পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, পুরো এলাকার চাহিদামতো নাগরিক সুবিধা সৃষ্টি করতে ৫ বছর যথেষ্ট সময় নয়। তারপরও বর্ধিত এলাকার উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়েছি। বর্ধিত এলাকার সব পাকা সড়ক আমার হাতে করা। অনেক এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল করেছি। তিনি বলেন, আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। আমার আমলের আরও কিছু উন্নয়ন কাজ চলমান আছে। আমার পরিকল্পনা আছে পুনরায় নির্বাচিত হলে সিটির সব এলাকায় সুষম উন্নয়ন করব। কোন বৈষম্য থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন রংপুরের উন্নয়নে কাজ করার, এখন রংপুরবাসীর দায়িত্ব হবে আমাকে নির্বাচিত করে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সেই দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া। তবে, বর্ধিত এলাকায় সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন জাপা প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। গত মেয়াদে লক্ষাধিক ভোট পেয়ে তিনি সদর উপজেলার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। সেই সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন এখন সিটির অন্তর্ভুক্ত। স্বাভাবিকভাবে সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে তিনি বর্ধিত এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। ওই এলাকাকে নিজের ভোট ব্যাংক হিসেবে বিবেচনা করছেন তিনি। কারণ বর্ধিত এলাকায় জাপার কর্মী-সমর্থক রংপুর শহরের চেয়ে বেশি। সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে রংপুরকে একটি তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ভোটারদের কাছে। বিএনপি প্রার্থী কাওছার জামান বাবলাও বর্ধিত এলাকার ভোটারদের বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রায় প্রতিদিনই বর্ধিত এলাকার কোন না কোন ওয়ার্ডে গণসংযোগ করছেন। তাদের সামনে হাজির হচ্ছেন নানা রকম প্রতিশ্রুতি নিয়ে।
×