ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শ্রীমঙ্গলে প্রবীণ রিসোর্ট হচ্ছে

প্রবীণের বয়সসীমা ৬৫ বছর করা প্রয়োজন ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রবীণের বয়সসীমা ৬৫ বছর করা প্রয়োজন ॥ অর্থমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। তাই প্রবীণের বয়সসীমা ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বছর করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সোমবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সিনিয়র সিটিজেন মেডিক্যাল রিসোর্ট ‘অবসর আমার আনন্দ ভুবন এর দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, যেহেতু আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে। একটি প্রস্তাবনাও এসেছে প্রবীণের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে। আমারও মনে হয়, প্রবীণ হওয়ার বয়স ৬৫ বছরে নিয়ে যাওয়া উচিত। বর্তমান সরকারের আরও এক বছর সময় আছে। এর মধ্যেই বিষয়টি সংশোধনী আনা হবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। আয়োজকদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রবীণদের তৃপ্তির বিষয়টা যেন ভাল হয় এবং তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসার বিষয়টা যেন ভাল হয় সে বিষয়টাতে নজর দিতে হবে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) আওতায় রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হাসপাতাল (প্রাক্তন আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল) এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজ সেবার অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে প্রবীণদের জন্য নিরাপদ আবাসন ‘অবসর’। দৃষ্টিনন্দন জেলা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শীঘ্রই নির্মিত হতে যাচ্ছে এই মেডিক্যাল রিসোর্ট। যেখানে থাকবে ১০০টি নিরাপদ আবাসন, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। থাকবে খোলা মাঠ, জলরাশি, প্রকৃতির সমারোহসহ সব ধরনের নাগরিক সেবা। অনুষ্ঠানে একটি প্রামাণ্য চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয় সেবার ধরন। এক সমীক্ষার তথ্য দিয়ে জানানো হয়, বাংলাদেশে পুরুষের গড় আয়ু ৭০ এবং নারীদের ৭২ বছর। যা কখনও ৮০ থেকে ৯০ বছরেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশে ষাটোর্ধ প্রবীণদের সংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি। যা প্রতি বছর ৪.৪১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালে ষাটোর্ধ প্রবীণের সংখ্যা দাঁড়াবে সোয়া দুই কোটি এবং ২০৫০ সালে চার কোটিতে পৌঁছাবে। প্রবীণদের একাকিত্বের কারণে শারীরিক মানসিক রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রবীণদের একাকিত্ব দূর করতে, তাঁদের প্রতি দায়িত্বশীল ও যত্নবান হতেই এই প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে বলে জানানো হয়। ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সিনিয়র সিটিজেন নিয়ে ভাবেন এবং স্বপ্ন দেখেন প্রধানমন্ত্রী। তারা যেন হারিয়ে না যান সেজন্য বয়স্ক ভাতার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রবীণদের থেকে আমাদের অনেক কিছুই পাওয়ার আছে। আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রবীণরা ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মোঃ আব্দুল মান্নান বলেন, আমি বিশ^াস করি এই হাসপাতাল প্রবীণদের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে তার সেবার প্রয়াস ভাল এবং উন্নত হবে। সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহ্মেদ বলেন, জীবন প্রদীপ নিভে গেলেও মঙ্গল প্রদীপ কখনও নিভে না। সিনিয়র সিটিজেনদের এই প্রকল্প এখন বাস্তবায়নের পথে। দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড এগিয়ে যাচ্ছে আমরা তা মনে রেখে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। এর আগে অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ জিল্লার রহমান বলেন, যারা বিভিন্নভাবে অসুবিধাগ্রস্ত আছে এমন মানুষের জন্য আমরা চার হাজার একশ’ কোটি টাকা পাই এবং তা দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছি। এ সময় তিনি প্রবীণের বসয়সীমা ৬০ থেকে আরেকটু বৃদ্ধি করা যায় কিনা তার জন্য অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরে ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হাসপাতালের সঙ্গে সমাজসেবা অধিদফতরের চুক্তি অনুষ্ঠিত হয়। হাসপাতালের পক্ষে হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী এবং সমাজসেবা অধিদফতরের পক্ষে সংস্থাটির মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ নুরুল কবির চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ আশীষ কুমার চক্রবর্তী। এছাড়াও পিপিপির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আফসর এইচ উদ্দিন বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও নয়াদিল্লীর প্রকৌশলী অনিল শর্মা তার উপস্থাপনায় নক্সার ধারণা দেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সঙ্গে গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে আর তার সঙ্গে বাড়ছে প্রবীণদের সংখ্যা। প্রবীণদের একটু ভাল রাখার জন্য এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেখানে সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ সেবায় ভাল থাকবেন সিনিয়র নাগরিকরা। উল্লেখ্য, জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা-২০১৩ অনুযায়ী ৬০ ও এর বেশি বয়সী নাগরিকদের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
×