ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পিছিয়ে যাচ্ছে বোরো আবাদ

পলিতে ভরাট নদীর গতিপথ হাওড়ে পানি নামছে ধীর গতিতে

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

পলিতে ভরাট নদীর গতিপথ হাওড়ে পানি নামছে ধীর গতিতে

সঞ্জয় সরকার, এমরানুল হক চৌধুরী, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ থেকে ॥ বর্ষার পানি ধীরগতিতে সরার কারণে জেলার হাওড়াঞ্চলের বোরো আবাদ পিছিয়ে যাচ্ছে। বীজতলা এখনও পানির নিচে থাকায় অনেক কৃষক এখনও ধানের বীজ রোপণ করতে পারেননি। এ কারণে আবাদ বিলম্বিত হচ্ছে। আর বিলম্বিত আবাদের কারণে ফের আগাম বন্যার ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছেন তারা। নেত্রকোনার খালিয়াজুরি, মোহনগঞ্জ ও মদন উপজেলা মূলত হাওড় এলাকা। এছাড়া কলমাকান্দা এবং আটপাড়া উপজেলারও আংশিক এলাকা হাওড়ের অন্তর্গত। বোরোই এখানকার একমাত্র ফসল। অকাল বন্যার কারণে গত বোরো মৌসুমে এসব এলাকার সিংহভাগ কৃষক ফসল মার খেয়েছেন। সে ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও নতুন আরেক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছেন হাওড়ের কৃষকরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাওড়ের নি¤œাঞ্চলের পানি এবার খুব ধীরগতিতে নামছে। ধনুসহ হাওড়ে প্রবাহমান নদ-নদীর বিভিন্ন অংশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ (ফসল রক্ষা বাঁধ) এবং পর্যাপ্ত স্লুইসগেটের অভাবে অনেক এলাকায় এখনও বর্ষার পানি আটকে আছে। এসব কারণে অনেক কৃষক সময়মতো বোরোর বীজতলা প্রস্তুত করতে পারেননি। অথচ বীজতলা তৈরির মৌসুম চলে যাচ্ছে। খালিয়াজুরি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, ‘হাওড়ে সাধারণত বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ জাতের ধান চাষ হয়। নবেম্বরের ১৫ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে বিআর-২৯ জাতের বীজতলা তৈরির উৎকৃষ্ট সময়। আর বিআর-২৮ জাতের বীজতলা তৈরির উৎকৃষ্ট সময় নবেম্বরের ১৫ থেকে ডিসেম্বরের ৭ তারিখের মধ্যে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অপেক্ষাকৃত অধিক ফলনের কারণে অনেক কৃষক বিআর-২৯ চাষে উৎসাহ বোধ করেন। কিন্তু বিআর-২৯ ধানের বীজ রোপণের সময় ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেলেও অনেকে আজও বীজতলাই প্রস্তুত করতে পারেননি। আবার বিআর-২৮ জাতের জন্য আর কয়েকদিন সময় বাকি থাকলেও বীজতলার জমি পানির নিচে থাকায় অনেকের পক্ষে সেটিও সম্ভব হবে না। কৃষকরা জানান, দেরিতে বীজ রোপণ করলে আবাদ এবং ফলন দুটিই বিলম্বিত হবে। উৎপাদনেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আর ফলন যত বিলম্বিত হবেÑ আগাম বন্যার ঝুঁকিও তত বাড়বে। কারণ অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, হাওড়াঞ্চলে চাষীদের বোরো ধান যখন পাকতে শুরু করেÑ ঠিক তখনই অতি বৃষ্টি শুরু হয়। আর তার সঙ্গে উজান থেকে ধেয়ে আসে পাহাড়ী ঢলের পানি। খালিয়াজুরির কুড়িহাটি গ্রামের কৃষক মনির হোসেন জানান, তার ৬০ একর জমির জন্য অন্তত দেড় একর বীজতলা আবাদ করা প্রয়োজন। কিন্তু বীজতলা পানির নিচে থাকায় প্রায় অর্ধেক বীজ এখনও বপন করতে পারেননি। উঁচু জমি (কান্দা) নতুন করে প্রস্তুত করে কিছু বীজ বপন করেছেন। বাকি বীজতলা আবাদ করতে তার আরও ১০-১৫ দিন লাগবে। তিনি জানান, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার তার বোরো আবাদ অন্তত ১৫ দিন পিছিয়ে গেছে। আর এর সঙ্গে বেড়েছে আগাম বন্যার ঝুঁকি। একই উপজেলার পুরানহাটি গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, অন্যান্য বার আরও ১০-১৫ দিন আগেই বোরোর বীজ বপন করি। কিন্তু বীজতলা না জাগায় এবার এখনও বীজ বপন শেষ করতে পারিনি। কৃষক মনির হোসেন এবং শফিকুল ইসলাম তালুকদারের মতে, হাওড়ে প্রবাহমান ধনুসহ অন্যান্য নদীর গতিপথ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং পর্যাপ্ত স্লুইসগেট না থাকার কারণেও পানি সরতে পারছে না। এ কারণেই বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষার পানির ধীরগতিতে নামার কথা স্বীকার করেছেন খালিয়াজুরির কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামও। তিনি বলেন, সরকারের কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচীর কারণে এবার বীজের অভাব হয়নি। কৃষকদের কাছে পর্যাপ্ত বীজ আছে। কিন্তু বীজতলা তৈরিতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণে কৃষকদের অপেক্ষাকৃত দ্রুত ফলনশীল বিআর-২৮ ধান আবাদে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিলাস চন্দ্র পাল বলেন, বর্ষার পানি একটু দেরিতে নামলেও বিআর-২৮ ধান চাষাবাদে কোন সমস্যা হবে না। কৃষকরা এখন পুরোদমে বীজতলা আবাদ করছেন বলে জানান তিনি। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর নেত্রকোনার ১০ উপজেলায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৩০১ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৩ হাজার ২৭১ হেক্টর অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক জমিই হাওড়ের পাঁচ উপজেলায় (খালিয়াজুরি, মোহনগঞ্জ, মদন, কলমাকান্দা ও আটপাড়া) অবস্থিত। সূত্রমতে, এবারের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা গতবারের চেয়ে কিছুটা বেশি। সুনামগঞ্জের ১৫৪টি হাওড়ের বেশিরভাগ হাওড়ই চাষাবাদের উপযোগী হয়নি। হাওড়ে বীজ বপনের সময় পার হয়ে গেলেও কোন কোন হাওড়ের পানি নিষ্কাশনের খাল বা স্লুইসগেট, ভার্টিকেল গেট বা পাইপ স্লুইসগেট ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এই অবস্থায় বেশিরভাগ হাওড়পাড়ের কৃষকরাই বেকায়দায় পড়েছেন। পাউবো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা স্লুইসগেট বা খাল পলিভরাটের কারণে কোন কোন হাওড়ে পানি নিস্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে স্বীকার করে বলেন, ‘হাওড়ের পাশ দিয়ে বহমান নদীর পানির উচ্চতা হাওড়ের সমান সমান থাকায় কোথাও কোথাও পানি নিষ্কাশনে বিলম্ব হচ্ছে। তাছাড়া কোন কোন জলমহালের ইজারাদারদের বিরুদ্ধে বাঁধ না কেটে পানি বিলে আটকে রাখার অভিযোগও রয়েছে। সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা মিলে হালির হাওড়ের অবস্থান। হাওড়ে জমি রয়েছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর। এই হাওড়ের নিচু এলাকা মাছুমপুর প্রামের রাতলার খাল স্লুইসগেট। রাতলারখাল স্লুইসগেট দিয়ে পানি বৌলাই হয়ে সুরমা নদীতে নিষ্কাশন হয়। সরেজমিনে রাতলার খাল স্লুইসগেটে গিয়ে দেখা গেছে, স্লুইসগেটের কয়েকটি পলবোর্ড না তোলায় পলি আটকে গেছে এবং পলবোর্ডগুলো মাটির নিচে পড়ে গেছে। রাতলার খালের মুখও ভরাট হয়ে গেছে। স্থানীয়রা বলেন, খালের মুখ খনন করতে হবে, পলির নিচে পড়া পলবোর্ড তুলে মাটি ছাড়িয়ে দিতে হবে। পুরো খালই পরিষ্কার রাখতে হবে। কেবল রাতলার খালের স্লুইসগেট নয়। আরও অনেক হাওড়েরই পানি নিষ্কাশনের খাল বা স্লুইসগেটের অবস্থা এমনই রয়েছে বলে জানালেন হাওড়পাড়ের কৃষকরা। এই হাওড়ের কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘রাতলারখালের মুখের পলি কেটে দিলে এবং স্লুইসগেটের নিচের পলবোর্ড উঠানো গেলে পানি নিষ্কাশনের গতি আরও বেড়ে যাবে। এটা করা না গেলে চাষাবাদে বিলম্ব হবে এবং আবার ফসল নিয়ে বিপদে পড়ব আমরা। তিনি জানান, ১৯৮৮ সালে এই স্লুইসগেট যখন হয়, তখন খাল অনেক গভীর ছিল, ভরাট হতে হতে এখন পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হয়ে গেছে। খাল খনন না করলে, এই স্লুইসগেট কাজে আসবে না।’ এই হাওড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিহার রঞ্জন দাস রাতলারখালে পলিভরাটের কথা স্বীকার করে বললেন, ‘অন্যান্য বছর পানি নিষ্কাশনে এত সমস্যা দেখা দেয়নি। এজন্য কাজ করা হয়নি। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা এ সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব।’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া (পওর-১) জানান, ‘৫৬টি স্লুইসগেট এবং ১৮টি পাইপ স্লুইসগেটের ৯০ ভাগেই সমস্যাগ্রস্ত। হয় খাল ভরাট, না হয় স্লুইসগেটের ভার্টিকেল গেট বা পলবোর্ড ঠিকভাবে নেই। এটি মেরামত করার জন্য ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে, দ্রুত পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) গঠন করে দেয়া হবে এসব সমস্যা দূর করার জন্য।’ এখনও কাজ শুরু করা যাচ্ছে না কেনই এখনও বা পিআইসি গঠন হলো না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে পওর বিভাগ-২’এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহীনুজ্জামান বলেন- পিআইসি শীঘ্রই হয়ে যাবে। হাওড়ের পানি না নামায় বাঁধের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গেই কাজ শুরু হবে। জানা যায়, আগামী বোরো মৌসুমের ফসল অকাল বন্যা ও পাহাড়ী ঢল থেকে রক্ষার লক্ষ্যে হাওড়রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য অনুন্নয়ন খাতে ৭৫ কোটি টাকার চাহিদা থাকলেও অনুন্নয়নে বরাদ্দ অনুমোদিত হয়েছে ২৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ৫২ হাজার টাকা। এছাড়া উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ হয়েছে ৩১ কোটি ৫২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ৬০ কোটি ৪০ লাখ ৯৫ হাজার টাকার বরাদ্দের চিঠি এসেছে। এর মধ্যে পিআইসিগুলোকে বিল বাবদ দেবার জন্য দুই কিস্তির ১৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা উপজেলা কমিটির হিসাবে পাঠানো হয়েছে। জেলার ১১ উপজেলার ৩৬টি বৃহৎ হাওড় ও ১৭টি উপ প্রকল্পসহ মোট ৫৩ টি হাওড়ের বোরো ফসল রক্ষায় ৯১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এবার পিআইসি গঠনের দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বাধীন কমিটির। পাউবোর সুনামগঞ্জ পওর (পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) বিভাগ ১ এর অধীনে উন্নয়ন প্রকল্পে ১৪০টি ও অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতের ৩৭২টি, পওর বিভাগ-২ এর অধীনে উন্নয়ন খানের ২৩১ ও অনুন্নয়ন খাতে ২২০টিসহ মোট ৯১৪ পিআইসি গঠন করার কথা। ৩০ নবেম্বরের মধ্যে এসব পিআইসি গঠনের সর্বশেষ সময়সীমা। পিআইসি গঠনের ক্ষেত্রে উপজেলা কমিটি বাঁধের সন্নিকটবর্তী জমির প্রকৃত মালিকদের দিয়ে করার কথা। রবিবার পর্যন্ত জেলার কোন এলাকার ১টি পিআইসিও গঠন করা হয়নি বলে জানা গেছে। পিআইসি গঠনে বিলম্ব হওয়ার বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখছেন না হাওড়পাড়ের কৃষক ও হাওড় আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। দ্রুত পিআইসি গঠনের কাজ শেষ করতে না পাড়লে এবারও বোরো ফসল ঝুঁকিতে পড়বে। সুনামগঞ্জের বৃহৎ হাওড়গুলো থেকে নিজ উদ্যোগে পানি নিষ্কাশন করার কাজ শুরু করেছেন কৃষকরা। স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, হাওড় এলাকার নদীগুলো খনন করে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করলে এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। কৃষকেরা এখন হাওড়ে বীজতলা তৈরি এবং আবাদের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু হাওড় থেকে পানি ধীরে নামায় তারা সেই কাজ করতে পারছেন না কৃষকরা। এদিকে গতবছর হাওড়রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতি তদন্ত এবং ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বেগম হামিদা আক্তার চৌধুরী বিভিন্ন হাওড়রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেন। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ শফিউল আলম, দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মঈন উদ্দিন ইকবাল, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এসএম শহিদুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী (১) আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া, নির্বাহী প্রকৌশলী (২) শাহিনুজ্জামানসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে হাওড়রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির কারণে গতবছর হাওড় তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা তদন্তে দ্বিতীয় দফায় দিরাইয়ে এসেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত দল। দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ পাউবো অফিস থেকে ঠিকাদার ও পিআইসির কাজের সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করেন এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। দুদক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে চার সদস্যর তদন্ত দল বাঁধের পিআইসির সভাপতি ও সম্পাদককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ সাবিরুল ইসলাম জানালেন, প্রতিবন্ধকতার কারণে যেসব হাওড়ের পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না, সেসব হাওড়ের পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত ৩০ লাখ টাকার মধ্যে ধর্মপাশা-মধ্যনগরের জন্য ৪ লাখ ও অন্য প্রত্যেক উপজেলার জন্য ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই টাকা দিয়ে হাওড়ের পানি নিষ্কাশনের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পাউবোর শাখা কর্মকর্তাগণ। এছাড়া আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে জেলার সকল উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন ও যেসব প্রকল্প নিয়ে জটিলতা রয়েছে তা দ্রুত নিরসন করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পাউবো কর্মকর্তারদের জোরালো নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, হাওড়ের পানি এখনও না সরায় চাষাবাদ শুরু করা যায়নি। চাষাবাদ শুরু করতে বিলম্ব হলে ধান পাকতেও বিলম্ব হবে। তাই ধান গোলায় তোলা এখনও কৃষকদের ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল। তবে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, এ বছর হাওর এলাকার বাঁধ নির্মাণ, হাওড় সংলগ্ন নদী খননসহ হাওড় এলাকার উন্নয়ন কাজে যত টাকা প্রয়োজন দেয়া হবে। সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে। তিনি জানান, শুধু সুনামগঞ্জের হাওড় এলাকার জন্যই এবার এখন পর্যন্ত ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ের হিসাব করা হয়েছে, যেখানে গত বছর পুরো হাওড়াঞ্চলের জন্য বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি টাকা। তিনি বলেন, টাকা যত লাগবে দেয়া হবে, কিন্তু খরচ এবং কাজের মানের ব্যাপারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
×