ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সঙ্কটের টেকসই সমাধানে নমপেনের সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা সঙ্কটের টেকসই সমাধানে নমপেনের সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন-পীড়নের কারণে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সঙ্কটের টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে কম্বোডিয়ার সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে তাদের ঘরে ফিরতে পারে, সেজন্য মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের কাছেও আমি সহযোগিতা চাচ্ছি, যাতে এ সঙ্কটের একটি টেকসই সমাধানে আমরা পৌঁছাতে পারি।’ খবর বাসস’র। সোমবার নমপেনে দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সাম্প্রতিক কিছু আঞ্চলিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। দুই পক্ষই সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারের কথা বলেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়েও কথা বলেছি, যা আমাদের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি বিনষ্টের হুমকি তৈরি করছে।’ প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশকে এখন ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বইতে হচ্ছে, যাদের মধ্যে প্রায় ৭ লাখ মানুষ মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়েও আলোচনা করেছেন, যা কিনা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মর্মে হুন সেন আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার উভয়েই এই রোহিঙ্গা শরণার্র্থীদের সুশৃঙ্খলভাবে নিরাপদে স্বদেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একযোগে কাজ করবে। তিনি বলেন, ‘দেশে ১৬ কোটি মানুষ থাকার পরেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান করে এবং তাদের বিষয়টি নিজেদের কাঁধে তুলে নেয়ায় আমরা তাদের (বাংলাদেশের) প্রশংসা করছি।’ কম্বোডিয়াকে বাংলাদেশের নিকটতম আঞ্চলিক প্রতিবেশী আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই দুটি দেশ একই রকম শান্তি, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের প্রত্যাশী। তিনি বলেন, আমরা অনেক আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক ফোরামে পরস্পরকে নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করে থাকি বিশেষ করে এআরএফ, আসেম, এসিডি এবং জাতিসংঘে। কম্বোডিয়ায় তার সফরকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার এবং প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের আলোচনার ফলে দুই দেশের সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। কম্বোডিয়ার উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সোমবার সকালে অত্যন্ত সৌহার্দ্য ও উষ্ণ আতিথেয়তাপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আমরা দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি।’ এ সময়, বাংলাদেশের লক্ষ্য হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক এবং কারিগরি সহযোগিতার সম্পর্ককে আরও জোরদার করা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে ১০টি দ্বিপাক্ষিক স্মারক ও একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বৈঠকে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠেয় যৌথ কমিশনের (জয়েন্ট কমিশন) প্রথম বৈঠকটি ঢাকায় অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রীদের নেতৃত্বে জয়েন্ট ট্রেড কাউন্সিলর (জেটিসি) প্রথম বৈঠকটিও আগামী বছর ঢাকায় অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এবং কম্বোডিয়া দু’দেশের রাজধানীতে পৃথক দুটি আবাসিক কূটনৈতিক মিশন খোলার বিষয়টিও বিবেচনা করে দেখছে। তিনি বলেন, জয়েন্ট ট্রেড কমিশন (জেটিসি), বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দু’দেশের চেম্বারগুলো সর্বোচ্চ সংস্থার মধ্যে আমাদের স্বাক্ষরিত স্মারকগুলো দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, শ্রম এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ, আইসিটি, মৎস্য, এ্যাকুয়া কালচার এবং পর্যটন বিষয়ে স্বাক্ষরিত স্মারকগুলো আমাদের বহুবিধ সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও প্রশস্ত করবে। আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়টি আজকের আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি অত্যন্ত আনন্দিত যে, প্রধানমন্ত্রী হুন সেন আসিয়ান (এএসইএএন) বৈঠকে বাংলাদেশকে ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনারশিপ এ্যাসপিরেশন’এ সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, গাঙ্গেয় অববাহিকার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কম্বোডিয়ার সঙ্গে ‘মেকং-গঙ্গা সহযোগিতা ফোরামের মেম্বারশিপ প্রাপ্তির বিষয়ে একযোগে কাজ করার দিকে তাকিয়ে আছে। দুই মহান জাতিই একই ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং গণহত্যা প্রত্যক্ষ করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা কম্বোডিয়ার সংঘাত পরবর্তী শান্তি স্থাপনে সর্বাগ্রে কম্বোডিয়ার জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালী এবং খেমার জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে আদি সাংস্কৃতিক যোগসূত্র রয়েছে, সংস্কৃত ও পালি সমর্থিত পঞ্জিকা এবং দুজনেরই নতুন সাল গণনা শুরু হয় এপ্রিল থেকে। নরোদম সিহানুকের স্মৃতিসৌধে তিনি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কম্বোডিয়ার জাতির পিতা বাংলাদেশেও উচ্চ সম্মানের আসনে আসীন রয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, তিনি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছেন যে, তার সরকার রাজধানী ঢাকার একটি সড়ক প্রয়াত রাজা নরোদম সিহানুকের নামে নামকরণ করতে যাচ্ছে। তার দেশে উষ্ণ আতিথেয়তা প্রদর্শন করায় প্রধানমন্ত্রী কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, তার এই সফর বাংলাদেশ এবং কম্বোডিয়ার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী হুন সেন এবং কম্বোডিয়ার বন্ধুত্বপ্রবণ জনগণের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু এবং শুভ কামনা করে তাদের অব্যাহত শান্তি, সমৃদ্ধি এবং অগ্রগতি কামনা করেন। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আমরা একটি ফলপ্রসূ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছি যাতে ভবিষ্যতে উন্নত দেশগুলোর কাতারে শামিল হতে আমরা একযোগে কাজ করতে পারি। তিনি বলেন, কম্বোডিয়া বাংলাদেশের আসিয়ানে (এএসইএএন) সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হবার আকাক্সক্ষাকে সমর্থন করে এবং নমপেন তাদের এই লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা করে যাবে। কম্বোডিয়ার জনগণের জন্য বাংলাদেশের জনগণের সহযোগিতার বিষয়ে হুন সেন তার হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০০১ সালে বাংলাদেশে তার প্রথম সফরের পর এবারে কম্বোডিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিতীয় সফর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করেছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হুন সেনকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা গ্রহণ করে বলেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গেই এটি গ্রহণ করছি।’ আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মোঃ আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহীদুল হক এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন। সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অংশীদার হোন : কম্বোডিয়ার ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী ॥ বিডিনিউজ জানায়, বাংলাদেশের সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বিনিয়োগের মাধ্যমে অংশীদার হতে কম্বোডিয়ার ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কম্বোডিয়া সফরে সোমবার দেশটির রাজধানী নমপেনের হোটেল সোফিটেলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুই দেশের মানুষের সমৃদ্ধির পথে আসুন সহযোগী হই। এক সঙ্গে মিলে আমরা আমাদের লাখ লাখ মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারি।’ কম্বোডিয়া চেম্বার অব কমার্সের (সিসিসি) আয়োজনে এই মতবিনিময়ের আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন দুই দেশের সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ও হুন সেন। বৈঠকের পর দুই দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি (এফবিসিসিআই) এবং কম্বোডিয়া চেম্বার অব কমার্সের মধ্যে একটি সহযোগিতা চুক্তি হয়। মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা দুই চেম্বারের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের আলোচনায় তা কার্যকর হয়ে উঠবে।’ মাত্র ১ কোটি ৬০ লাখ জনসংখ্যার দেশ কম্বোডিয়া প্রায় এক দশক ধরে ৭ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে কম্বোডিয়ার দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ মাত্র ৬৭ লাখ ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৪০ কোটি টাকার মতো পণ্য কম্বোডিয়ায় যায়। আর বাংলাদেশ কম্বোডিয়া থেকে আমদানি করে ১৩ কোটি টাকার পণ্য। এ প্রসঙ্গে নিজের হতাশার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সত্যিকারের সম্ভাবনার প্রতিফলন এখানে হয়নি। আসিয়ানভুক্ত অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য দ্রুত বাড়ছে, কম্বোডিয়ার সঙ্গেও এমনটি হবে বলে আমি আশা করি।’ বাংলাদেশে বাণিজ্যের সব ধরনের সুযোগ নিতে দেশটির ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কর্মকা-ের কেন্দ্রে বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশ ক্রমাগতভাবে চীন, মিয়ানমার ও ভারতের অর্থনৈতিক করিডরের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে চলেছে। এ সুযোগটিও কম্বোডিয়ার ব্যবসায়ীরা কাজে লাগাতে পারেন। দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ‘সেতুবন্ধন’ হিসেবে বর্ণনা করেন শেখ হাসিনা। বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এবং সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরিতে উদ্যোগের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়ে উদার বিনিয়োগ নীতি প্রণয়নের কথাও তিনি বলেন। শেখ হাসিনা জানান, বিনিয়োগ নীতির আলোকে বাংলাদেশ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আইনী সুরক্ষা, বিশেষ করে অবকাশ সুবিধা এবং যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিচ্ছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কম্বোডিয়া চেম্বারের সভাপতি নিয়েক ওকনাহা কিথ মেং। অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, কম্বোডিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী প্যান সোরাসাক, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম, থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাঈদা মুনা তাসনিম এবং এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। কম্বোডিয়ার রাজার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত ॥ কম্বোডিয়ার রাজা নরোদম সিহামনি বাংলাদেশ ও তার দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ব্যাপারে সন্তাষ প্রকাশ করেছেন। সোমবার সে দেশের রাজধানী নমপেনে রয়েল প্যালেসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সঙ্গে সাক্ষাতকালে তিনি এই সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি ইহ্সানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, কম্বোডিয়ার রাজা বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ব্যাপারে সন্তাষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আশাকরি আগামীতে এশিয়ার এই দু’টি দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে।’ প্রেস সেক্রেটারি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে রয়েল প্যালেসে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। বৈঠকে কম্বোডিয়ার রাজা এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী কম্বোডিয়ার রাজাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। এ সময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, এসডিজি বাস্তবায়ন কার্যক্রমের মুখ্য সমন্বয়ক মোঃ আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক এবং থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনীম উপস্থিত ছিলেন। পরে শেখ হাসিনা কম্বোডিয়ার সিনেট প্রেসিডেন্ট সাউম এবং জাতীয় পরিষদের ন্যাশনাল এসেমব্লির প্রেসিডেন্ট হেং স্যামরিনের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী তিনদিনের কাম্বোডিয়া সফর শেষে আজ মঙ্গলবার বিকেলে দেশে ফিরবেন। পিস প্যালেসে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সকালে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দফতর পিস প্যালেসে পৌঁছলে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮ টায় পিস প্যালেসের প্রবেশদ্বারে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই অভ্যর্থনা জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি সুসজ্জিত মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময়ে কম্বোডিয়ার সশস্ত্রবাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন তাদের মন্ত্রী পরিষদ সদস্যদের পরস্পরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এর আগে, পিস প্যালেসে যাবার পথে শত শত স্কুল শিক্ষার্থী রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের পতাকা নেড়ে এবং ফুল ছিটিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানায়। পরে পিস প্যালেসে উভয় দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়। আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের এবং হুন সেন কম্বোডিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে দুই নেতা একান্তে কিছু সময় কাটান।
×