ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গী বিচারে ধীরগতি নানা কৌশলে তারা পার পেতে চাইছে

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

জঙ্গী বিচারে ধীরগতি নানা কৌশলে তারা পার পেতে চাইছে

শংকর কুমার দে ॥ জঙ্গী বিচারেও ধীরগতি। প্রায় একযুগ ধরে কারাগারে আটক জেএমবির ৮ জঙ্গী। বিচার হচ্ছে না এসব জঙ্গীর। অর্ধযুগেরও বেশি সময় ধরে বিচার চলছে এমন বন্দীর সংখ্যা ৫৬৬। এর মধ্যে জঙ্গী সন্দেহে গ্রেফতাররাও আছে। দেশের কারাগারগুলোতে বন্দী এসব জঙ্গী, সন্ত্রাসী, অপরাধী আইনের ফাঁকফোকরে বিচার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে। কারাগারে বসে তারা বাইরের অপরাধ জগতের সঙ্গে যোগাযোগ করে অপরাধী কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জঙ্গীসহ বন্দীদের বিচারে কালক্ষেপণের নানা কৌশল নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। একপক্ষ অপরপক্ষকে দোষারোপ ও দায়ী করার মধ্য দিয়ে বছরের পর বছর জঙ্গীদের বিচারের পথ রুদ্ধ হয়ে আছে। আদালতে শুধু বার বার তারিখ নির্ধারণ করার আইনগত ফাঁকফোকরের পথ দিয়ে জঙ্গীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। এর ফলে কারাগারে বসেই তারা জঙ্গী তৎপরতা চালানোর সুযোগ পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃপক্ষের কাছে এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ পড়ে আছে। তবে এসব ঘটনার তদন্ত হয় নামেই। প্রতিকার হওয়ার ঘটনার উদাহরণ নেই বললেই চলে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের ৪টি কারাগারে হত্যা মামলার অভিযোগে ১০ থেকে ১১ বছর ধরে বিনাবিচারে আটক রয়েছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির ৮ সদস্য। নিষিদ্ধ ঘোষিত ৮ জেএমবির মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে মোঃ মাইনুল ইসলাম ওরফে রাঙ্গা (৩৮), শফিকুল্লাহ ওরফে সাদ ওরফে শফিক ওরফে শফিকুল ইসলাম (৩৯), ফরিদপুরের জেলা কারাগারে আমীর হোসেন, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে শহীদুল ইসলাম (৪৬), ইয়াসিন মিয়া (৩২), খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারে মোঃ মঞ্জু মিয়া ওরফে মঞ্জু (২৫), মোঃ রুহুল আমিন (৩৫) ও মোঃ রুহুল আমিন ওরফে সুফি (৪৩)। একই সঙ্গে মিয়ানমারের নাগরিক সুলতান আহাম্মদ (৩৬) হত্যা মামলায় ১০ বছর কক্সবাজার কারাগারে আটক রয়েছে। তিনি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ৫৮ বার হাজিরা দিয়েছে। কিন্ত মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রও জানায়, দেশের কারাগারে আটক আছে এমন বন্দীর সংখ্যা ৫৬৬। এসব বন্দীর বিচার ৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে চলমান রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সুপারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। দেশের বিভিন্নস্থানে হামলা, অগ্নিসংযোগ, সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জঙ্গী, সন্ত্রাসী, নাশকতামূলক ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক আসামিরা যাতে কারাগারের বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ করে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- না চালাতে পারে সেজন্য তাদের কর্মকা- ও গতিবিধি সম্পর্কে গোয়েন্দা নজরদারি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। মামলা পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সময়মতো সাক্ষী না আসা, নিরাপত্তার অভাব, সমন জারি না হওয়া, পুলিশের উদাসীনতাই এর অন্যতম কারণ। এছাড়া এ বিষয়ে একে অপরকে দোষারোপ ও দায়ী করার প্রবণতার কারণে কারাগারে আটক বন্দীদের বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। জঙ্গীরা বছরের পর বছর ধরে কারাবন্দী থাকার সুবাদে বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে জঙ্গী তৎপরতা, ষড়যন্ত্রসহ নানা ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক ও নাশকতা ঘটাবে, এটাই স্বাভাবিক। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোন ট্রায়াল শুরু করা যাচ্ছে না নানা অজুহাতে। পাশাপাশি তারা কারাগারে বসেই নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। এসব কারাবন্দীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ গঠন না করার অর্থই হলো, এদের ছেড়ে দেয়ার একটা ব্যবস্থার শামিল। অন্যদিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির সদস্যরা কোন আইনজীবী নিয়োগ করেন না। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কর্তৃক আইনজীবী নিয়োগ করা হয়। রাষ্ট্রকর্তৃক আইনজীবী নিয়োগ করার পর ঐ মামলার কোন সাক্ষী নিরাপত্তার অভাবে আর আসে না। ফলে কারাগারে আটক বন্দীরা বছরের পর বছর বিনাবিচারে আটক রয়েছে।
×