ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএনসিসির মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

ডিএনসিসির মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। এ সিটির মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে সোমবার পদ শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এতে ১ ডিসেম্বর থেকে মেয়র পদ শূন্য দেখানো হয়েছে। এদিকে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের মৃত্যুতে এ সিটি নতুন মেয়র নির্বাচনের তোড়জোর শুরু হয়েছে। আইন অনুযায়ী পদ শূন্য ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপনির্বাচনের কাজ সম্পন্ন করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তারা জানান, গেজেট প্রকাশের পর ২৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যে এখন নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলাল উদ্দীন আহমদ জানান, মেয়র পদ শূন্য ঘোষণার প্রজ্ঞাপন হাতে পেলেই নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। শূন্য ঘোষণার দিন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার আইনী বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির। নির্বাচিত হয়ে প্রায় আড়াই বছর ধরে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন সদ্য প্রয়াত উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। দায়িত্ব পালনের মধ্যেই এ বছরের জুলাইয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান তিনি। তিনি সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিসে আক্রান্ত ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩০ নবেম্বর মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার মৃত্যুর চারদিনের মাথায় সোমবার উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। প্রকাশিত ওই গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে স্থানীয় সরকার (সিটি নির্বাচন) আইনের ১৫ (ঙ) ধারা অনুযায়ী, ১ ডিসেম্বর থকে মেয়র পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এরই মধ্যে সেই প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসি। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ এর ১৬ ধারায় বলা হয়েছে, মেয়র বা কাউন্সিলের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের আগে যদি কোন পদ শূন্য হয়, তবে ৯০ দিনের মধ্যে সেখানে উপনির্বাচন হবে। উপনির্বাচনের বিজয়ী বাকি মেয়াদে মেয়র বা কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, আইনী বাধ্যবাধকতা থাকায় এ সিটিতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে হবে। শূন্য হওয়ার গেজেট হাতে পেলে ইসি নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। তারা জানান, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেয়র পদে উপনির্বাচন শেষ করতে হবে। কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে অন্তত ৪৫ দিন হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে মধ্য জানুয়ারি নাগাদ এ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। গত ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ভোট হয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠানে আইন পাস হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়। দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে বিপুল ভোটের মাধ্যমে জয়লাভ করেন মেয়র আনিসুল হক। বিএনপি ওই সিটিতে নির্বাচনে অংশ নিলেও নির্বাচনের মধ্যপথে এসে তারা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। নির্বাচন বর্জনের মধ্যেই বিএনপির প্রার্থী তাবিথ এম আউয়ালকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন আনিসুল হক। প্রায় আড়াই বছর দায়িত্ব পালনে তিনি ব্যাপক সফলতার পরিচয় দেন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের প্রথম সভা থেকে পাঁচ বছর মেয়াদ থাকে শপথ নেয়া জনপ্রতিনিধিদের। ইসির সহকারী সচিব রাজীব আহসান সাংবাদিকদের জানান, উপনির্বাচনে মেয়র পদে নতুন যিনি আসবেন, তিনি মেয়াদের বাকি অংশটুকু দায়িত্ব পালন করবেন। এদিকে মেয়র আনিসুল হকে মৃত্যুতে মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের পাশাপাশি তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে আলাদা শোক বার্তাও গেজেট আকারে প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা উত্তরের মেয়র পদ শূন্য ঘোষণার গেজেট চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হবে। সেখানে ভোটের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে বলা হবে নির্বাচন কমিশনকে। এদিকে মন্ত্রণালয়ের নিজ দফতরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্বপ্ন বাস্তবায়ন বাধার মুখে পড়লে তা বাস্তবায়নে সরকার সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তার কাজগুলো ব্যক্তিগত হলেও কর্মসূচীগুলো সিটি কর্পোরেশনের। আমরা আশা করি, সিটি কর্পোরেশন সেই কাজগুলো শেষ করবে। তিনি বলেন, আনিসুল হক জনপ্রিয়, জনদরদি, উদ্যমী মানুষ ছিলেন। ইতিহাসে এ ধরনের মানুষ আমরা পাইনি। তার উদ্যোগেই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন আধুনিক রূপ নিয়েছে। ভোটাররা নতুন মেয়র নির্বাচনের সময় সতর্ক হলে ভাল মানুষ, যোগ্য মানুষ মেয়র হবেন। উনি যে কাজ শুরু করে গেছেন, তা থেকে বের হয়ে আসাটা কষ্টকর হবে। নতুন যেই আসুক তাকে পূর্বসূরির কাজের সঙ্গে তাল মেলাতে হবে। সরকারের প্রত্যাশা তার মতো একজন ভাল মেয়র আমরা পাব উল্লেখ করেন। এদিকে মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা উত্তর সিটিতে নতুন করে নির্বচনী আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে এ সিটিতে যাদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করছেন তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। যদিও কোন দলের পক্ষ এখনও এ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু ভেতরে ভেতরে অনেকেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমনকি দলীয় মনোনয়ন পেতেও দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন সিটি নির্বাচন নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে। অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো ঢাকার উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হবে। ফলে যিনি দলের প্রার্থী হবেন তাকে আগে দল থেকে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, আইন অনুযায়ী দল থেকে প্রার্থী হিসেবে যিনি মনোনয়ন পাবেন শুধু তাকে দলের প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করবে ইসি। এর বাইরে দলীয় প্রার্থী হাওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া ইসির নিবন্ধিত ৪০ রাজনৈতিক দলের বাইরে যারাই প্রার্থী হবেন তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন। আগামী ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ইতোমধ্যে এ নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ সম্পন্ন হয়েছে। প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা শুরু করে দিয়েছেন। রংপুর সিটি নির্বাচনের পর জাতীয় নির্বাচনের আগে আরও ৫টি সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে কথা থাকলেও ঢাকার উত্তরের মেয়রের মৃত্যুতে এখন মোট ছয় সিটিতে নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বর্তমান ইসির অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে তার পরীক্ষা দিতে হবে সিটি নির্বাচনগুলোতে। ঢাকার মেয়র পদ শূন্য হওয়ার পর এখন এ সিটি নির্বাচন ইসির জন্য বড় ধরনের টেস্ট কেস হয়ে দাঁড়াল।
×