নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ৪ ডিসেম্বর ॥ শহরের নতুন বাসটার্মিনাল এলাকায় অবস্থিত সোনিয়া নার্সিং হোমে রবিবার রাতে ভুল চিকিৎসায় বিলকিস বেগম (৩২) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নিহত বিলকিস টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাতুলী ইউনিয়নের চৌবাড়িয়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী। এ ঘটনার পর থেকে নার্সিং হোমের চিকিৎসক এমএম মনিরুজ্জামান আত্মগোপনে রয়েছেন।
জানা গেছে, মাস খানেক আগে গলায় টনসিল সমস্যা নিয়ে সোনিয়া নার্সিং হোমের চিকিৎসক ও টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান এবং সহযোগী অধ্যাপক এমএম মনিরুজ্জামানের কাছে চিকিৎসা গ্রহণ করতে আসেন বিলকিস বেগম। চিকিৎসক এ সময় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য এক সপ্তাহের ওষুধ দেন। প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধ শেষে রবিবার বিকেলে পুনরায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে আসেন বিলকিস বেগম। এ সময় চিকিৎসক রোগীকে জরুরীভাবে অপারেশন করতে পরামর্শ দেন এবং অপারেশন না করলে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করেন। ফলে বিলকিস বেগমকে অপারেশনের প্রস্তুতিতে কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তবে বিলকিস অপারেশন রবিবার না করে ছেলের স্কুলে পরীক্ষা শেষে অপারেশন করার দাবি জানান। এ সত্ত্বেও চিকিৎসক তাৎক্ষণিক অপারেশনের সিদ্ধান্ত দেন। এতে অপারগ হয়ে বিলকিস অপারেশনে রাজি হন। এরপর বিলকিসের অপারেশন করেন চিকিৎসক এমএম মনিরুজ্জামান। এ সময় তাকে অপারেশনে সহযোগিতা করেন আরেক চিকিৎসক এমকে মানিক ও সহযোগী সাইফুল ইসলাম বাবু। কিছুক্ষণ পর বিলকিসকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করা হলেও অচেতন অবস্থায় ছিল বিলকিস। রোগীর এ অবস্থা দেখে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি রোগীর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করেননি। এমনকি অপারেশন শেষে কোন ব্যবস্থাপত্রও প্রদান করেননি। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে উপস্থিত সেবিকাদের সহযোগিতায় রোগী বিলকিসের প্রেসার মাপাসহ রোগীর জ্ঞান ফেরার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তারা কোন উত্তর দেননি। কিছুক্ষণ পর রোগীর চোখের নিচে কালো আবরণ আর নাকে রক্তক্ষরণ লক্ষ্য করা যায়। এ নিয়ে রোগীর পরিবার উত্তেজিত হয়ে ক্লিনিকের একজন সেবিকাকে ডেকে আনেন। ওই সেবিকা রোগীর চিকিৎসা অনুযায়ী স্যালাইন দেয়ার চেষ্টা করেন। তবে রোগীর হাতে দেয়া স্যালাইন ভিতরে প্রবেশ না করায় ওই সেবিকাসহ পরিবার রোগী মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হন।
বিলকিসের স্বামী সাইফুল ইসলাম জানান, ডাক্তার তার স্ত্রীকে অপারেশন থিয়েটারে খুন করেছেন। তিনি চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। সোনিয়া নার্সিং হোমের চিকিৎসক সহযোগী অধ্যাপক এমএম মনিরুজ্জামান ও সোনিয়া নার্সিং হোমের এমডি রেজভী প্রতিষ্ঠানে না থাকায় তাদের বক্তব্য গ্রহণ করা যায়নি। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি শিবলী সাদিক রোগীর মৃত্যুর কথা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি গৃহবধূর পরিবারের সঙ্গে মীমাংসা হয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: