ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাাত

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

ঢাকার দিনরাাত

গত সপ্তাহে অনেক ঘটনা। বৃহস্পতিবার একটি বিশেষ দিন। নিত্যদিনের গড়পড়তা যানজটসহ দু’ঘণ্টার অফিসযাত্রা নেমে এলো অর্ধেকে! সাধারণত সপ্তাহান্তের এই দিনটিতে ঢাকা বেসামাল থাকে। মানে ঢাকার রাস্তাঘাট। অনেকেরই সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন। তাই বৃহস্পতিবারেই ঢাকা ছাড়ার চেষ্টা থাকে তাদের একাংশের মধ্যে। সেই বৃহস্পতিবারেই এত তাড়াতাড়ি পথ পেরুলাম কিভাবে! নিজে নিজেই উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনে পড়ল বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বাম দলগুলো আধাবেলা হরতাল ডেকেছে। না, রাস্তাঘাট দেখে তো মনে হয়নি যে হরতাল চলছে! তাহলে? কিছুক্ষণ ভাবতে হলো। উত্তর পেয়ে গেলাম। গণপরিবহন, মানে বাস-মিনিবাস যথানিয়মেই আছে রাস্তায়, কিন্তু ব্যক্তিগত গাড়ির বিপুল ভিড় নেই। মোটামুটি সহনীয় সংখ্যায় রয়েছে প্রাইভেট কার। আর তাতেই রাস্তায় কোন যানজট নেই, শুধু সিগন্যাল বাতিতে গাড়ির গতি কমাতে হচ্ছে। যা হোক, যানজট নিয়ে লিখতে বসিনি, হরতাল নিয়েও নয়। শুধু মহাব্যস্ত একটি দিনে ঢাকার চেহারা তুলে ধরতে চাইছিলাম। তাছাড়া এই বৃহস্পতিবারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করারও ইচ্ছে ছিল। একদিকে হরতাল আরকদিকে উৎসব দুটির কেন্দ্রেই বিদ্যুত। আধা শতকের প্রতীক্ষা শেষে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের সূচনা হয়েছে ঢালাই কাজের শুভ উদ্বোধনের মাধ্যমে। দেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্যই এই আয়োজন। নগরপিতা নগর-নায়ক চলে গেলেন আনিসুল হক একেবারেই অপ্রত্যাশিতভাবে। পঁয়ষট্টি বছর, চলে যাওয়ার মতো কোন বয়সই নয়। কয়েক মাস প্রায় অচেতন ছিলেন তিনি বিলেতের আরোগ্যসদনে। মস্তিষ্কের জটিল ব্যাধিতে ভুগছিলেনে। ঢাকাবাসীর, শুধু ঢাকার কথাই বা বলি কেন, সারা দেশের মানুষের শুভ কামনা ছিল তাঁর জন্য; আশা ছিল তিনি আবার ফিরে আসবেন দেশে, তাঁর কর্মক্ষেত্রে। সেই চিরচেনা হাসিমুখ দেখে তাঁর প্রতি লোকের প্রীতি জেগে উঠবে, তাঁর কাছে সব সময়ই ভাল কিছু প্রাপ্তির প্রত্যাশা থাকবে। কিন্তু হারাতে হলো তাঁকে, সপ্রতিভ, সদাপ্রাণবন্ত, সতত হাস্যময় আনিসুল হককে। তাঁর জীবনের শেষদিকে দেশবাসীর কাছে তিনি পরিচিতি পেয়েছিলেন রাজধানীর সাহসী, গতিময় ও আন্তরিক শ্রমনিষ্ঠ একজন মেয়র বা নগরপিতা হিসেবে। যদিও স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তাঁর প্রধান পরিচিতি গড়ে উঠেছিল টেলিভিশনের একজন চৌকস উপস্থাপক হিসেবে। তাঁর অনুষ্ঠান উপভোগ্য বিনোদন ছিল দর্শকের কাছে। এভাবেই তিনি অগণিত দর্শকের আপনজন হয়ে উঠেছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন নায়কের মতো স্বপ্নের মানুষ, কাক্সিক্ষত প্রিয়জন। অবশ্য একজন সফল শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা হিসেবেও সমাজে সমীহ আদায় করে নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর চলে যাওয়া বড় বেদনার মতো বাজছে আজ দেশের মানুষের হৃদয়ে। মহানগরীর সমস্যা হলো মহাসমস্যা। পাহাড়সমান এইসব মহাসমস্যা দু-দশ বছরে সম্পূর্ণরূপে সমাধান করা সম্ভব এমন অবৈজ্ঞানিক কথা বলতে চাই না। তবে আন্তরিকতার সঙ্গে পূর্ণকালীন কাজ করে গেলে নিশ্চয়ই উঁচু পাহাড় থেকে সমস্যা নামতে নামতে আমাদের গলাসমান হতে পারে। মেয়র আনিস দুই বছরে আন্তরিকভাবে কাজ করতে চেয়েছেন এটা অস্বীকার করা যাবে না। দু’বছরে নিশ্চয়ই কিছু কিছু সমস্যার মাত্রা কিছু অংশে হলেও কমতে শুরু করেছে, এটা মানতেই হবে। ঢাকাবাসী স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। ঢাকা তার বিশ্ব দুর্নাম ঘুচিয়ে আধুনিক ও বসবাসযোগ্য শহরে পরিণত হওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছিল। অকালপ্রয়াণ না হলে তিনি যে ঢাকাকে শোভন-শৃঙ্খলরূপে বদলে দিতে সমর্থ হতেন এই আস্থা তিনি অর্জন করেছিলেন ঢাকার নাগরিকদের কাছে। মেয়র হিসেবে দু’বছর পার করার পর গণমাধ্যমের কাছে আনিসুল হক খোলাখুলি ব্যক্ত করেন তাঁর কর্মতৎপরতার কথা। বাড়িয়ে বলেছেন, এমনটা কেউ বলবেন না। সে সময়ে তিনি বলেছিলেন, ‘গত ২৫-৩০ বছরে কেউ চেষ্টা করেননি কিংবা করার সাহস করেননি অথবা কায়েমি স্বার্থবাদীদের কারণে করেননি এমন কিছু কাজ আমরা করেছি। তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের রাস্তা, গাবতলী বাস টার্মিনাল, গুলশানের মরিয়ম টাওয়ারের পেছনের রাস্তা, মোনায়েম খানের বাড়ির সামনের রাস্তা, বিভিন্ন দূতাবাসের সামনের রাস্তা দখলমুক্ত করার কথা কেউ কল্পনাও করেনি। আমি করেছি। প্রতিটি কাজ করার আগে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বসেছি, বুঝিয়েছি, তারপর কাজে নেমেছি। একটি হাইকমিশন আমাদের সময় দিচ্ছিল না। একাধিকবার অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়ে পাইনি। একদিন সরাসরি তাদের গেটে গিয়ে বললাম, ‘মেয়র ইজ ইন দ্য গেট, ওয়ান্ট টু মিট হাইকমিশনার।’ হাইকমিশনার নেমে এসে দেখা করতে বাধ্য হয়েছেন। এবং তাঁর অফিসের সামনের ফুটপাথ-রাস্তাও আমরা মুক্ত করেছি।’ কেন নগরবাসী আপনাকে ভোট দেবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে স্মার্ট আনিসুল হক বলেছিলেন, ‘মানুষ আনিসুল হককে ভোট দেবে কারণ, আনিসুল হকের একটা সংগ্রামমুখর অতীত রয়েছে। আনিসুল হক তৃণমূল থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে এ পর্যন্ত এসেছে। অর্জন করেছে প্রচুর অভিজ্ঞতা বিজিএমইএ, এফবিসিসিআইসহ চারটি বড় প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব দিয়েছে। জীবনের এ সংগ্রামমুখর চলার পথে এবং বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকালে কোথাও তার কোন দুর্নীতির অভিযোগ নেই, দুর্নাম নেই। আমি এ দেশের সব ধরনের মানুষকেই ধারণ করি। ঢাকাকে মানুষের একটি কাক্সিক্ষত নগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ইতোমধ্যে জরিপ, মতবিনিময়, বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছি। তার সমস্যা চিহ্নিত করেছি। তারা একজন ভাল নগরপিতা চান। যিনি সৎ, যোগ্য এবং আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবে। আর এসব বিবেচনাতেই মানুষ আমাকে ভোট দেবে।’ নির্বাচিত হলে কেমন শহর উপহার দেবেন সে বিষয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা ছিল স্বচ্ছ ও সুদূরপ্রসারী। সবুজে ঘেরা একটি পরিকল্পিত, পরিচ্ছন্ন শহরই তিনি উপহার দিতে চেয়েছিলেন। যেখানে এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত বনায়ন করা হবে আর বাড়িভিত্তিক সবুজায়নে উৎসাহিত করা হবে। বেদখল পার্ক, মাঠ উদ্ধার করে খেলাধুলা ও শরীরচর্চার উপযোগী করে প্রয়োজন অনুসারে বৃক্ষায়ন এবং নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসন করা, সেবাদানকারী সব প্রতিষ্ঠানের কাজ সমন্বিতভাবে করা হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণ করা হবে। ঢাকা উত্তরকে জনসাধারণের জন্য স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে যানজট নিরসনে দ্রুত, কার্যকর এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ঢাকায় চার হাজার নতুন বাস নামানোর ঘোষণা দিয়ে রীতিমতো চমকে দেন ঢাকাবাসীকে। এমন একজন নগরপিতা নগর-নায়ককে আকস্মিকভাবে হারিয়ে নগরের নাগরিকবৃন্দ যে শোকগ্রস্ত হবেনÑ সেটা না বললেও চলে। তাঁর মরদেহ ঢাকার মাটিতে আসার পর থেকে শুরু করে অন্তিম শয্যাগ্রহণ পর্যন্ত লাখ লাখ ঢাকাবাসী অশ্রুসিক্ত হয়েছেন। তাঁর জানাজায় গেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোকানুভূতি প্রকাশ করেছেন। কে জানে এমন একজন আন্তরিক কর্মতৎপর সাহসী মেয়র আবার কবে পাবে ঢাকা মহানগর। পোপ ফ্রান্সিসের ঢাকা আগমন শুধু যিশুখ্রিস্টের অনুসারীরা নন, অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষও শুক্রবার সকালে সমবেত হয়েছিলেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। কেউ এসেছেন মুক্ত প্রার্থনায় অংশ নিতে, কেউ এসেছেন পোপ ফ্রান্সিসকে একনজর দেখার আশায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সবার কণ্ঠেই ধ্বনিত হয়েছে শান্তি ও সম্প্রীতির প্রাণস্পর্শী সুর, ‘এসো তার মন্দিরে করি স্তবগান, একসঙ্গে দলে এক হয়ে প্রাণ।’ সমবেত ভক্তকুলের সামনে বাংলাদেশের মানুষ এবং বিশ্বশান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করেন ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি সবাইকে শান্তি ও সম্প্রীতির পথে চলার আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, এর আগে ১৯৮৬ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। তার ৩১ বছর পর এলেন আরেকজন পোপ। ২০১৩ সালে পোপ ফ্রান্সিস দায়িত্ব নেবার পর ভ্যাটিকানের চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসে। গত বছর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে একজনকে কার্ডিনাল হিসেবে নিয়োগ করেন তিনি। খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা বলছেন, পোপ ফ্রান্সিস যে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, কার্ডিনাল নিয়োগ তারই প্রমাণ। ক্যাথলিক খ্রীস্টানরা মনে করেন, পোপ হচ্ছেন যিশু খ্রিস্টের সরাসরি প্রতিনিধি। পোপের সিদ্ধান্ত ক্যাথলিক খ্রীস্টানদের জন্য অভ্রান্ত। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার তুলনায় খ্রীস্টানদের অনুপাত বেশ কম। সব মিলিয়ে এই সংখ্যা ছয় লাখের বেশি নয়। এদের মধ্যে ক্যাথলিক খ্রীস্টানদের সংখ্যা চার লাখের মতো। পোপের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চার্চ থেকে যাজকরাও ঢাকায় এসেছেন। সচেতন ব্যক্তিরা জানেন, পোপের বক্তব্য বিশ্বজুড়ে সবসময় আলোচনায় থাকে। স্টেট অব ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রপ্রধান পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশ সফর নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের পাশে থাকার বহু প্রত্যাশিত আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে তিনি ঈশ্বরের উপস্থিতি টের পেয়েছেন। যদিও মিয়ানমারে অবস্থানকালে তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটিই উচ্চারণ করেননি। তার আহ্বান রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর নৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা যায়। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন পোপ। রোহিঙ্গা সংকটের গভীরতা অনুভব করে পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, কঠিন এ সংকট নিরসনের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুত্ব দেয়া উচিত। পোপকে ঢাকা যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করেছে। ঢাকায় অবস্থানকালে পোপের প্রশান্তিময় হাসিমুখ অবলোকন করে হৃদয়ে কিছুটা শান্তি অনুভব করেছেন নিশ্চয়ই আমার মতো বহুজন। সংগীত ও কবিতা-কথকতা কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ ওমর শামস একমাসের জন্য স্বদেশে এসে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় দুটি আনুষ্ঠানিক বক্তৃতা দেন। বিষয়: ধ্রুপদ সঙ্গীত ও আধুনিক কবিতার কথকতা। এটি ছিল মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন। অনুষ্ঠানে যোগদানকারী তরুণ কবি মুয়িন পারভেজ জানিয়েছেন তাঁর প্রতিক্রিয়া। তিনি লিখেছেন, ‘ওমর শামসের কবিতা ও প্রবন্ধের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় বছর খানেক আগে, বিস্তার-এর ফেসবুক গ্রুপের (বিস্তার লিটারারি সার্কেল) মাধ্যমেই, যদিও তিনি দেশভাগের সমবয়েসী তার জন্মের একমাস পরেই দেশভাগ। ১৯৮৪ সালে বেরোয় তাঁর প্রথম কবিতাবই বোধিবৃক্ষতলে, ষাট-সত্তরের দশক তাঁর কবিতাদৃপ্ত কালের আদিপর্ব, বলা যায়। পেশায় পদার্থবিজ্ঞানী, মার্কিন মুল্লুকে আছেন বহু বছর ধরে; কবিতা ও প্রবন্ধের পাশাপাশি সঙ্গীত তার এক বড় অধিকৃত অঞ্চল। ‘ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীত ও আধুনিক কবিতার কথকতা’ শিরোনামে তার প্রাজ্ঞ বক্তৃতা শুনে আজ এ-কথাই মনে হলো যে কত ক্ষুদ্র পরিসরেই না সঙ্গীতকে জানতাম এতদিন! একটি সুরচিত কবিতার শিরা-উপশিরায় কিভাবে প্রবাহিত হয় সঙ্গীতকণিকা, কত নৈমিত্তিক অনুষঙ্গে জড়িয়ে আছে রাগরাগিণীর রৌদ্রছায়া, এমনকী কিরাতের নিমগ্ন আয়াত পাঠের মধ্যেও, দৃশ্যশ্রুতিযন্ত্রে তার একটি রূপরেখা এঁকে দিলেন ধীমান কবি, মাত্র ঘণ্টা দেড়েক সময়ে। বোদল্যের, কোলরিজ, এলিয়ট ও অন্যান্য বিখ্যাত ইয়োরোপীয় কবির সঙ্গে জীবনানন্দের প্রবন্ধেরও অসামান্য উদ্ধৃতি তুলে ধরলেন; ‘চিত্রস্তনিত ধ্বনি’ শব্দবন্ধটির নতুন সজীব চেহারাই যেন ভেসে উঠল মানসপটে।’ কবি ওমর শামসকে ঘিরে শুক্রবার সন্ধ্যায় গুলশানে কবি-সাহিত্যিক-সঙ্গীতশিল্পীদের এক প্রীতিসম্মীলনীও হয়ে গেল। সবার অনুরোধে কয়েকটি কবিতাও তিনি শোনালেন তাঁর স্বকীয় ভঙ্গিতে। এত ভালো কবিতা লিখেও শুধু প্রবাসে অবস্থানের কারণে বৃহত্তর বাঙালি পাঠকের কাছে যথাযথ পরিচিতি লাভ হয়নি। কবিতায় বিজ্ঞান ও সংগীত এই দুই উপাদান সংযুক্তিতে তাঁর চমৎকার সাফল্য। তাঁর কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধে নির্মোহ বিশ্লেষণ ও আলোচিত কবির কাব্যসত্তার সারকথা তুলে ধরায়ও তিনি স্বচ্ছ ও পারঙ্গম। ৩ ডিসেম্বর ২০১৭ [email protected]
×