ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পোপের সফর

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

পোপের সফর

বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চ ও সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটির প্রধান ২৬৬তম পোপ ফ্রান্সিসের ছয় দিনের এশিয়া সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী। বাংলাদেশে পোপের তিন দিনের সফরটি ছিল ব্যস্ত কর্মসূচীতে পরিপূর্ণ। এ সময়ে তিনি একাধিক ঐতিহাসিক চার্চ পরিদর্শনসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থনা সভায় অংশগ্রহণ করেন এবং নবনিযুক্ত যাজকদের শপথবাক্য পাঠ করান। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক দেখা-সাক্ষাত ও বৈঠকের পাশাপাশি তিনি সর্বধর্মীয় নাগরিক সমাবেশে যোগদান এবং মতবিনিময় করেন। পোপের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচীতে কক্সবাজার ও টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের বিষয়টি ছিল না বিধায় তিনি সেখানে যাননি। তবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং ক্যাথলিকদের সাহায্য সংস্থা কারিতাসের সহায়তায় ১৮ সদস্যবিশিষ্ট রোহিঙ্গা পুরুষ-নারী ও শিশুর একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় পোপের সঙ্গে সাক্ষাত করে নিজেদের অত্যাচারিত জীবন ও মিয়ানমার ত্যাগের মর্মন্তুদ বিবরণ তুলে ধরেন। এ সময়ে ব্যথিত ও বিষণ্ণ পোপ বলেন, ‘মিয়ানমারের এই নিপীড়িত মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যেও ঈশ্বর আছেন। শরণার্থী, নিপীড়িত, সংখ্যালঘু, দরিদ্র ও বিপদগ্রস্ত মানুষকে বিশ্ব সম্প্রদায় যেন ভুলে না যায় তাও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন। পোপের এই উচ্চারণের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গাদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয় সুস্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে নিঃসন্দেহে। এর বাইরেও পোপ ফ্রান্সিস তরুণদের প্রতি মোবাইল-ফেসবুকে মত্ত না থেকে পরিবারে সময় দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পোপ এমন এক সময়ে বাংলাদেশে এসেছেন যখন দেশটি রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যায় আক্রান্ত। উল্লেখ্য, ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম হত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠন, ধর্ষণ সর্বোপরি পোড়ামাটি নীতির কারণে সীমান্ত অতিক্রম করে সাত লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ ভূখন্ডে। এই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ঘটনার পর পরই পোপ রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এহেন অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছেন এবং বক্তব্যে জাতিগত পরিচয় হিসেবে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এতে যথেষ্ট কাজ হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হয়। কেননা, অচিরেই রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যাটি জাতিসংঘ, ওআইসি, আসিয়ান, আসেমসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে উপস্থাপিত এবং বাংলাদেশের পক্ষে জনমত ও ব্যাপক সমর্থন লাভে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইইউসহ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের কথা এক্ষেত্রে স্মর্তব্য। ভারত, চীন ও রাশিয়া তেমন জোরালো ভূমিকা না রাখলেও বিশ্ব জনমতের চাপে অন্তত নমনীয় হয়েছে। এর পেছনে ভ্যাটিকান তথা পোপের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। ভ্যাটিকান সর্বদাই ন্যায় ও শান্তির পক্ষ অবলম্বনকারী এবং বিশ্বের সর্বত্র সহিংসতা, হত্যা ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে। পোপ সবসময় মানুষ ও মানবতার কথা বলেন এবং যারা দরিদ্র, অসহায়, দুস্থ, দুর্ভাগা, শরণার্থী এমনকি জলবায়ুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের সপক্ষে অবস্থান নেন। বাংলাদেশে পোপের আগমন শান্তি ও সম্প্রীতির উদাহরণ হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ সফরে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দল পোপের সঙ্গে দেখা করেছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় সমঝোতাও হয়েছে। অতঃপর রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার একটি ইতিবাচক সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে আশা করা যায়।
×