ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চারণকবি বিজয়ের মৃত্যুবার্ষিকী আজ ॥ মেলাসহ নানা অনুষ্ঠান শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৪ ডিসেম্বর ২০১৭

চারণকবি বিজয়ের মৃত্যুবার্ষিকী আজ ॥ মেলাসহ নানা অনুষ্ঠান শুরু

রিফাত-বিন-ত্বহা,নড়াইল থেকে ॥ এই পৃথিবী যেমন আছে/ তেমনিই ঠিক রবে/ সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে...। এই গানের রচয়িতা অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা চারণ কবি বিজয় সরকারের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ সোমবার। ১৯৮৫ সালের এই দিনে তিনি কলকাতায় পরলোকগমন করেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ায় তাকে সমাহিত করা হয়। বিজয় সরকার ১৩০৯ বঙ্গাব্দের ৭ ফাল্গুন নড়াইলের নিভৃতপল্লী ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মা হিমালয়া দেবী। বিজয় সরকারের প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী। সঙ্গীত সাধনার জন্য তিনি ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। এই গুণী মানুষটির বসতভিটা পড়ে রয়েছে অযত্ন ও অবহেলায়। বিজয় সরকারের বাড়িতে যাতায়াতের রাস্তাটি কাঁচা হওয়ায় দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। কবিকণ্ঠের গান এবং সংগ্রহশালা নির্মাণের দাবিও রয়ে গেছে উপেক্ষিত। বিজয় সরকারের মৃত্যুর পর অযত্ন -অবহেলায় পড়ে আছে তার বসতভিটা। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন। এবার ‘কণ্ঠযোদ্ধা’ হিসেবে বিজয় সরকারকে ‘স্বাধীনতা পদক’ দেয়ার দাবি উঠেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বিজয় সরকার কবিগান গেয়ে যে টাকা উর্পাজন করতেন, তা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করতেন। তাই ‘কণ্ঠযোদ্ধা’ হিসেবে বিজয় সরকারকে ‘স্বাধীনতা পদক’ দেয়ার দাবিসহ জাতীয় চারণ কবির স্বীকৃতি প্রদান, বিজয় সরকারের নামে নড়াইলে ফোকলোর ইনস্টিটিউট নির্মাণ এবং পাঠ্যপুস্তকে কবির রচনা ও জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার দাবি উঠেছে। প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। বিজয় সরকার একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। ১৮০০ বেশি গান লিখেছেন এবং সুর ও সঙ্গীত করেছেন। তিনি গানের কথায়, সুরের মাঝে বেঁচে আছেন হাজারো মানুষের হৃদয়ে। বিজয় সরকারের গানগুলো আজো মানুষের মুখে মুখে সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে দেয়। চারণ কবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের আয়োজনে আজ সোমবার থেকে শুরু হওয়া দু’দিনব্যাপী মেলায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কবির প্রতিকৃতিতে পু®পমাল্য অর্পণ, মেলার উদ্বোধন, শিল্পী বলদেব অধিকারীর চিত্র প্রদর্শনী, বিজয়গীতি প্রতিযোগিতা, স্মৃতি চারণ অনুষ্ঠান, কবি গানের আসর, বিজয়গীতি পরিবেশনা, ধুয়োগান ও বিজয় স্বর্ণ পদক প্রদান। এবারের বিজয় মেলায় সেমিনারে অংশগ্রহণ করবেন ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.পবিত্র সরকার। এবারের বিজয় মেলায় ২০১৫-২০১৭ এই তিন বছরের জন্য তিন কবিকে বিজয় সরকার স্বর্ণপদক প্রদান করা হবে। এরমধ্যে ২০১৫ সালে কবিয়াল সঞ্জয় মল্লিক (নওয়াপাড়া), কবিয়াল স্বপন সরকার (কোটালীপাড়া),কবিয়াল মোঃ আবু ইউসুপ (চট্টগ্রাম)। এছাড়া কবিগানের জন্য আসছেন কবিয়াল বিজয় স্বর্ণপদক প্রাপ্ত ৪ কবিয়াল। মেলা শেষদিন ৫ ডিসেম্বর রাতভর এই কবির গানের আসর মাতাবেন স্বর্ণপদক প্রাপ্ত কবিয়ালগণ। নড়াইল জেলা প্রশাসক এমদাদুল হক চৌধুরী জানান, বিজয় সরকারের বাড়ি যাওয়ার রাস্তা পাকাকরণসহ বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণসহ তার স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিজয় সরকারের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নড়াইল জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে আজ সোমবার থেকে দু’দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এদিকে,‘কণ্ঠযোদ্ধা’ হিসেবে বিজয় সরকারকে ‘স্বাধীনতা পদক’,পাঠ্যপুস্তকে কবির রচনা ও জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা এবং কবিকণ্ঠের গান পা-ুলিপি আকারে সংরক্ষণসহ বিজয় সরকারের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী তার জন্মভূমি নড়াইলের ডুমদিতে পালনের জোর দাবি জানিয়েছেন বিজয়ভক্তরা।
×