ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যাশা অনুযায়ী কমেনি পেঁয়াজের দাম

নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৪ ডিসেম্বর ২০১৭

নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মৌসুমের শেষে অস্থির হওয়া পেঁয়াজের দাম সামান্য কমলেও সহনীয় হচ্ছে সবজির দাম। এছাড়া চালের দাম অনেক দিন ধরেই স্থিতিশীল আছে, আর মাছ, মাংস ও সবজির দামও সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। ফলে স্বস্তি ফিরেছে দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে। রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম কমলেও দেশের বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে সয়াবিন তেলের দাম। অনেকটাই নিম্নমুখী মসুর ডালের দাম। বাজারে নতুন চাল না আসলেও স্থিতিশীল আছে চলের দাম। রসুনের দাম সহনীয় থাকলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী কমেনি পেঁয়াজের দাম। এদিকে, নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় ও স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ১৪টি মনিটরিং টিম কোন কাজ করছে না। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ৩১ ডিসেম্বর টিমগুলোর মেয়াদ শেষ হবে। তাই এ মুহূর্তে কমিটিগুলো নিষ্ক্রিয় আছে। আগামী জানুয়ারি মাসে নতুন কমিটি হলেই সেগুলো বাজারে তৎপর থাকবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছরই বাজার মনিটরিংয়ের জন্য দুই দফায় ১৪টি মনিটরিং কমিটি করা হয়। উপ-সচিব পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রতিটি কমিটির ছয় মাস করে বাজারে মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করার কথা। প্রতিটি কমিটিতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা জেলা প্রশাসন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশিন ও ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের (ডিএমপি) প্রতিনিধিরা থাকেন। টিমগুলো সারাবছরের জন্য গঠিত হলেও কাজ করে মূলত রোজার মাসে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বাজার এখন স্থিতিশীল। নিত্যপণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে। সামনে বাজার আরও স্থিতিশীল হবে।’ বাবুবাজার-বাদামতলী চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘দেশে চালের মোকাম বলে খ্যাত উত্তরবঙ্গে প্রচ- শীত পড়ছে। ফলে ধান কাটার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া ঘন কুয়াশা পড়ায় ট্রাক চলাচল ব্যহত হচ্ছে। তাই এ সমস্যাগুলো কেটে গেলে চালের দাম আরও কমবে।’ কাওরান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে খুচরায় প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ৮৮-৯০ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন প্রতি লিটার ৯৫-১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চাল ৫০-৫৪ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে। আর সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে। এছাড়া আটার দাম কেজিতে ৬ টাকা বেড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে ১২০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হলেও এখন তা বেড়ে ১৪০ টাকা হয়েছে। এছাড়া করলা ১০০ টাকা থেকে কমে ৬০ টাকায় এবং পেঁপেসহ সব সবজির দামই ৫০ টাকার নিচে নেমেছে। সামনে সব ধরনের সবজির দাম আরও কমবে বলে আশা করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৫৫০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা জানিয়েছেন, সুযোগ বুঝে অতিবৃষ্টি, ঈদ ও পূজার ছুটি বা অন্য কোন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। কিন্তু বাজারে সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা সক্রিয় থাকলে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াতে পারতেন না। তারা আরও জানিয়েছেন, বৃষ্টিতে কাঁচা মরিচ নষ্ট হয়ে গেলে দাম কিছুটা বাড়তেই পারে। তাই বলে ২০০ টাকা কেজি হবে কেন? একই কারণে নষ্ট হতে পারে সবজিও। তাই বলে করলার কেজি ১০০ টাকা কী করে হয়? জানা গেছে, গত এক মাস আগে সবজির সরবরাহ কম থাকায় ২০ টাকা কেজি দরের আলু ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এখন তা কমে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর নতুন আলুর দাম ১০০ টাকা থেকে কমে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানান, বাজারে সব রকম পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে। তাই দামও কিছুটা কমেছে। এখন আর কেউ সরবরাহ সঙ্কটের কথা বলেন না। রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে কোন পণ্যের ঘাটতি নেই। সব দোকানেই সাজানো রয়েছে নতুন সবজি, চাল, আটাসহ সব ধরনের পণ্য। এখন রাজধানীর পাড়ায় মহল্লার রাস্তায় ভ্যানে করে সবজি, মাছ এমনকি ব্রয়লার মুরগিও বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বাজার ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। চালের দাম বেড়েছিল, এখন তা কমতে শুরু করেছে। চালের দাম আরও কমবে। আটা, তেলের দামও কমবে। পেঁয়াজ নিয়ে নানা ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছিল। পেঁয়াজের দামও কমবে। বাজার এখন পুরোপুরি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই আছে।’
×