ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রফতানিতে পিছিয়ে

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৪ ডিসেম্বর ২০১৭

রফতানিতে পিছিয়ে

রফতানি বাণিজ্যে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। পণ্য রফতানি যেমন কমেছে, তেমনি হ্রাস পাচ্ছে সেবা রফতানিও। অথচ সে তুলনায় গড় আমদানি বেড়েছে অনেক বেশি। কমেছে বৈদেশিক বিনিয়োগও। এটা যে কোন দেশের অর্থনীতির জন্য দুঃসংবাদই বটে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈশ্বিক বাজারে পণ্যের দাম ও চাহিদা কম, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কম, গ্যাস-বিদ্যুত সঙ্কটসহ নানা কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাবে রফতানি আয় কমেছে। রফতানি প্রবৃদ্ধিকে ইতিবাচক ধারায় ফেরাতে রফতানিকারক, ইপিবি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার উদ্যোগ নেয়া জরুরী। বাংলাদেশ থেকে সাধারণত ৫৭টি দেশে পণ্য ও সেবা রফতানি হয়ে থাকে। এসব দেশে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে অর্জন হবে রফতানির সামগ্রিক লক্ষ্যমাত্রা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-অক্টোবর) ওই ৫৭ গন্তব্যের ৩০টিতেই অর্জন হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। তবে বাকি ২৭টি গন্তব্যে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে ১০টি মিশনে ভাল প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। মিশনগুলো হচ্ছে বেইজিং, দুবাই, জেনেভা, সিউল, হ্যানয়, ভিয়েনা, কোপেনহেগেন, দারুসসালাম, ব্যাঙ্কক ও আঙ্কারা। ইপিবির সর্বশেষ পরিসংখ্যানে জানা গেছে, উল্লেখিত সময়ে দেশ থেকে সামগ্রিকভাবে রফতানি হয়েছে ১ হাজার ১৫০ কোটি ডলারের পণ্য। অথচ এই সময়টাতে রফতানির কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল ১ হাজার ১৫৯ কোটি ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসের পণ্য রফতানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এবারের রফতানি আয় ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশের যে কয়টি মিশনে বাণিজ্যিক কর্মকা- আছে তার মধ্যে গুটিকতক মিশন রফতানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে। বাকি মিশনগুলো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। বাণিজ্যিক কার্যক্রম থাকা যে ৬টি মিশন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে সেগুলো হলো বার্লিন, ইয়াঙ্গুন, অটোয়া, তেহরান, লন্ডন, মাদ্রিদ ও ওয়াশিংটন। আলোচ্য সময়ে সবচেয়ে বেশি রফতানি আয় এসেছে বার্লিন থেকে। এই সময়ে ওই গন্তব্য থেকে মোট ২০২ কোটি ৫২ লাখ ডলার রফতানি আয় এসেছে। এরপরেই ওয়াশিংটনে রফতানি করে আয় হয়েছে ১৮৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। আর এই সময়ে লন্ডনে রফতানি করে এসেছে ১২৫ কোটি ডলার। অটোয়া মিশন থেকে আয় হয়েছে ২৫ কোটি ডলার, দিল্লীতে রফতানি করে আয় হয়েছে ২২ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। এ কথা সত্য যে, সারা বিশ্বে এক ধরনের নীরব মন্দা চলছে। এটিই রফতানি আয় কমার আসল কারণ। বলা হচ্ছে রানা প্লাজা ধসের পর বেশকিছু বায়ার ব্র্যান্ড তাদের ব্যবসা এখানে বন্ধ না করলেও সম্প্রসারণ করেনি। এটিও রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগ কম হচ্ছে। এর ফলে রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে গতানুগতিক দেশের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না রফতানি খাত। দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম উৎস রফতানি বাণিজ্য। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য রফতানি বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের দেশে রফতানির ক্ষেত্রে রয়েছে সরকারী-বেসরকারী নানা বাধা। এ বাধার জন্য কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না। তাই রফতানির বাধাগুলো দূর করতে হবে। নতুন রফতানি খাতের সুযোগ সৃষ্টি এবং নতুন পণ্য রফতানির উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। নতুন নতুন দেশের দিকে ব্যবসার পরিসর বাড়াতে হবে। মিশনগুলো এ কাজে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে পারে। বিশেষ করে কোন্ দেশে কখন কোন্ ধরনের পণ্যের উপযোগিতা ও চাহিদা রয়েছে সেটা তারা খুঁজে বের করে সে মোতাবেক ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিতে পারে। তবেই সফলতা আসবে রফতানি বাণিজ্যে। সংশ্লিষ্টরা সচেষ্ট হলেই এটা সম্ভব হবে।
×