ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচনী সহিংসতা ও লুটপাট ঠেকাতে হন্ডুরাসে কার্ফু

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৪ ডিসেম্বর ২০১৭

নির্বাচনী সহিংসতা ও লুটপাট ঠেকাতে হন্ডুরাসে কার্ফু

নির্বাচনী সহিংসতা ও লুটপাট ঠেকাতে হন্ডুরাসজুড়ে সান্ধ্য আইন জারি করেছে দেশটির সরকার। শুক্রবার থেকে টানা ১০ দিন এই আইন জারি থাকবে বলে টেলিভিশন ও রেডিওতে সম্প্রচারিত বুলেটিনে ধারাবাহিকভাবে বলা হচ্ছে। জনগণের চলাফেরার স্বাধীনতা সীমিত করা হয়েছে, পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়েছে বাড়তি ক্ষমতা। নির্বাচনী সহিংসতায় একজন নিহত ও ২০ জনের বেশি আহত হওয়ার পর সরকার এ পদক্ষেপ নিল। খবর সিনহুয়ার। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবাল দিয়াজ বলেন, জনগণের সাংবিধানিক অধিকার স্থগিতের বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছে যেন সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা দমাতে পারে। ভোটের পাঁচদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও গণনা শেষ না হওয়ায় দেশটিতে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে। লুট ও সহিংসতার অভিযোগে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হুয়ান অরল্যান্ডো হার্নান্দেজ ও বিরোধী জোটের প্রার্থী সালভাদর নাসরাল্লা উভয়েই নিজেদের বিজয়ী দাবি করেছেন। ভোটের আগে হওয়া জনমত জরিপে নাসরাল্লা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ৫ পয়েন্ট এগিয়ে ছিলেন। যদিও ৯০ শতাংশ গণনা শেষে হার্নান্দেজই ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন বলে নির্বাচনী সংস্থাগুলোর ভাষ্য। গণনার বাকি অংশ এবং নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে চলা বিতর্কিত ভোটের যাচাই-বাছাই ফল উল্টে দিতে পারে। নাসরাল্লার অভিযোগ, কারচুপির করে হার্নান্দেজ বিজয় চুরি করার চেষ্টা করছেন। প্রতিবাদে সমর্থকদের রাস্তায় নেমে আসারও আহ্বান জানিয়েছেন এক সময়ের জনপ্রিয় এ টেলিভিশন উপস্থাপক। ভোট গণনায় দীর্ঘসূত্রতাই নির্বাচনী সঙ্কট ও সহিংসতা উস্কে দেয়। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার ভোট গণনা দ্রুত শেষ করতে হন্ডুরাসের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের প্রতি আহ্বান জানায়। মধ্য আমেরিকায় ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ এ মিত্র দেশটি এমনিতেই চরম দারিদ্র্য ও মাদক বাণিজ্য নিয়ে গোষ্ঠী সংঘাতের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে খুনের হারও সবচেয়ে বেশি হন্ডুরাসে। বৃহস্পতিবার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের চার বিচারকের একজন ভোট গণনাপ্রক্রিয়া নিয়ে ‘চরম উদ্বেগের’ কথা জানানোর পর বিরোধী সমর্থকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এরপরই সরকার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ভোর ছঢটা পর্যন্ত দেশজুড়ে সান্ধ্য আইন জারির ঘোষণা দেয়। টেলিভিশন ও রেডিওতে মন্ত্রী জর্জ র‌্যামন হার্নান্দেজের এক বিবৃতি ধারাবাহিকভাবে সম্প্রচারিত হতে থাকে, যেখানে ১০ দিনের জন্য সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরদিন ভোর ছয়টা পর্যন্ত কারফিউর ঘোষণা দেয়া হয়। সরকারী ডিক্রীতে সব স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের কথা বলা হয়; বাহিনীগুলোকে দেয়া হয় রাস্তা, সেতু ও সরকারী ভবনে বিরোধীদের যে কোন ধরনের অবরোধ ভাঙ্গার অনুমোদন। মধ্য ও বামপন্থী জোটের প্রার্থী নাসরাল্লা সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছেন, কারফিউকে বৈধতা দিতে সরকারী অনুপ্রবেশকারীরাই লুট ও সহিংসতা শুরু করেছে। ফেসবুকে দেয়া এক মন্তব্যে নাসরাল্লা বলেন, যারা ভাংচুর চালাচ্ছে তারা বিরোধী জোটের নয়, সরকারের। এটা সরকারের পরিকল্পিত অভিযান, যেন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এবং মানুষ বিশ্বাস করে বিরোধী জোট ধ্বংসযজ্ঞের জন্য দায়ী। হন্ডুরাসে বেশ জনপ্রিয় ৬৪ বছর বয়সী নাসরাল্লার পেছনে সমর্থন আছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্যানুয়েল জেলায়ার। ২০০৯ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে বামপন্থী জেলায়া ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন।
×