ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন, অংশ নেবেন ৩ শতাধিক সাহিত্যিক

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৪ ডিসেম্বর ২০১৭

আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন, অংশ নেবেন ৩ শতাধিক সাহিত্যিক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাহিত্যের আলোয় আবার উজ্জ্বল হবে রাজধানী। কংক্রিটের এই শহরে গল্প-উপন্যাস কবিতাবিষয়ক আলোচনায় মেতে উঠবেন দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিকরা। আগামী জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হবে ‘আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন’। ‘বিশ্ব মানব হবি যদি কায়মনে বাঙালি হ’ প্রতিপাদ্যে ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমির মূল মিলনায়তন ও বহিরাঙ্গনের দুটি মঞ্চে। স্বাগতিক বাংলাদেশের সঙ্গে এ সম্মেলনে ভারতসহ সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী তিন শতাধিক সাহিত্যিক অংশগ্রহণ করবেন। ১৩ জানুয়ারি বেলা ৩টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারাদ মিলনায়তনে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৫ জানুয়ারি সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন ভারতের সাবেক সাহিত্যের সঙ্গে শিল্পের সংযোগ ঘটবে এ আয়োজনে। সম্মেলনে বিষয়ভিত্তিক ছয়টি সেমিনারের সঙ্গে উপস্থাপিত হবে দুটি মঞ্চনাটক এবং সংগীত, গল্প ও কবিতাপাঠ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও আবৃত্তি অনুষ্ঠান। বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত বই এবং লিটল ম্যাগাজিনের বিক্রয় ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থাসহ আপ্যায়নের জন্য থাকবে রেস্তোরাঁ। সম্মেলনটির আয়োজন করছে আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন পরিষদ। সহযোগিতায় রয়েছে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন ও ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ। রবিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির সভাকক্ষে আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে সম্মেলনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন আয়োজক পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন ইউসুফ। পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে সম্মেলনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত ঘোষ, ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি সত্যম রায়, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ ও সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বিশ্বের যে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে সেই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে এ সাহিত্য সম্মেলন। তাই এই সাহিত্য সম্মেলনের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে বাংলা ভাষার সাহিত্যচর্চা আরও গতিময় হয়ে উঠবে। ঢাকার মাটিতে এ ধরনের সাহিত্য সম্মেলনের মূল বার্তাটি হবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসাকে ছড়িয়ে দেওয়া। এখন এই সম্মেলন আয়োজনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে জানান আয়োজকরা। আয়োজনটির প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৭৪ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এবারের সম্মেলনে ভারতসহ সারা বিশ্বের তিন শতাধিক সাহিত্যিক অংশগ্রহণ করবেন। ১৩ জানুয়ারি সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। সম্মেলনে ছয়টি সেমিনার, দুটি মঞ্চনাটক এবং সংগীত, গল্প ও কবিতা পাঠ, চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। ‘নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন’ ও ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ এই আয়োজনে প্রধান সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করছে। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ভারতের বেনারসে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে প্রথম ‘নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ৯৪ বছরে ৮৯ বার এ সম্মেলন ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ বছর ঢাকায় নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজক পরিষদ এ সম্মেলনে সহযোগিতা করছে। ১৩ জানুয়ারি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর থাকবে ৩০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এরপর বিকেলে সাড়ে ৫টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, কবিতাপাঠ, গল্পপাঠ, আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান। নৃত্যানুষ্ঠান ও নাটক সম্মেলন স্থলের তিনটি মঞ্চে যুগপৎ পরিবেশিত হবে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ১৪ সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত চলবে ‘বাংলা সাহিত্যে দেশ ভাগের অভিঘাত’ শীর্ষক সেমিনার। বেলা ২টা থেকে বিকেল অনুষ্ঠিত হবে ‘সাহিত্য ও চলচ্চিত্র’ শীর্ষক সেমিনার। এছাড়াও দ্বিতীয় দিন অনুষ্ঠিত হবে ‘সাম্প্রতিককালের সাহিত্য’ শীর্ষক সেমিনার। সন্ধ্যায় থাকবে কবিতা ও গল্পপাঠের আসর। পরিবেশিত হবে সংগীত, নৃত্যানুষ্ঠান ও নাটক। সম্মেলনের তৃতীয় দিন ১৫ জানুয়ারি সকালে অনুষ্ঠিত হবে ‘ভাষা আন্দোলন ও বাঙালী জাতিসত্তা’ শীর্ষক সেমিনার। দুপুরে অনুষ্ঠিত হবে ‘অনুবাদের সাহিত্য, সাহিত্যের অনুবাদ’ শীর্ষক সেমিনার। বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে ‘প্রযুক্তির বিশ্বে সাহিত্যের সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার। এরপর সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সমাপনী আনুষ্ঠানিকতায় থাকবে সংগীত, নৃত্য, কবিতা ও গল্পপাঠ, আবৃত্তি ও নাটকের পরিবেশনা। সাহিত্য সম্মেলন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট আয়োজক পরিষদ গঠন করা হয়েছে। এ পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অন্য পৃষ্ঠপোষকরা হলেন ভারতের ঝাড়খ- রাজ্যের মন্ত্রী সরযু রায়। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সম্মেলন আয়োজক পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুজ্জামান খান, সত্যম রায় চৌধুরী, ড. কীত্তিরঞ্জন দে, প্রধান সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন ইউসুফ, যুগ্ম প্রধান সমন্বয়ক জয়ন্ত ঘোষ, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সমন্বয়ক এ এস এম শামসুল আরেফিন, যুগ্ম মদন মোহন দরিপা, সেমিনার সমন্বয়ক অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, যুগ্ম সেমিনার সমন্বয়ক চৈতালী মুখার্জী, অনুষ্ঠান সমন্বয়ক হাসান আরিফ, যুগ্ম অনুষ্ঠান সমন্বয়ক মন্দিরা গাঙুলি, প্রকাশনা সমন্বয়ক তারিক সুজাত, যুগ্ম প্রকাশনা সম্পাদক ড. রামদুলাল বসু।
×