ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সুদূর শেরপুর থেকেও মানুষ এসেছিল তার জানাজায় শরিক হতে

লাখো ভক্তকে শোকে ভাসিয়ে বিদায় নিলেন আনিসুল হক

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৪ ডিসেম্বর ২০১৭

লাখো ভক্তকে শোকে ভাসিয়ে বিদায় নিলেন আনিসুল হক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লাখো কোটি ভক্তকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে হতবিহ্বল করে শেষ বিদায় নিলেন কথার জাদুকর বাংলাদেশের জনপ্রিয় সফল রাজনীতিবিদ, কথা ও কাজের মধ্যে শতভাগ মিল রাখা কর্মপাগল মানুষ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। শনিবার বাদ আছর বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে নামাজে জানাজা শেষে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশেই তার ছেলে শারাফুল হকের কবরে চিরনিদ্রায় সমাহিত হলেন তিনি। আনিসুল হকের শিশুপুত্র শারাফুল হক ২০০২ সালে মৃত্যুবরণ করে। আগামী ৬ ডিসেম্বর বুধবার বাদ আছর গুলশানের আজাদ মসজিদে কুলখানি হবে। কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেও তার মৃত্যুতে রাজধানী তথা সারাদেশের মানুষের মনের আফসোস কোনক্রমেই থামছে না। অলিগলির চায়ের স্টল থেকে শুরু করে সুরম্য প্রাসাদেও তার অকাল মৃত্যুর কথাই আলোচিত হচ্ছে মুখে মুখে যে, এত অল্প বয়সেই কেন চলে গেলেন স্বপ্নচারী এই মেয়র? আধুনিক ঢাকা বিনির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা ও নায়ক যিনি নির্বাচিত হওয়ার আগেই রাজধানীবাসীর সমস্যা চিহ্নিত করেই মাঠে নেমেছিলেন। নির্বাচনী ওয়াদা পূরণেও কথা রেখেছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর থেকে সকল মেয়র যেসব অসাধ্য কাজ অসমাপ্ত রেখে গেছেন সরকারের সর্বোচ্চ সহায়তায় নিজের কারিশমায় তিনি একের পর এক অসাধ্য সাধন করেই যাচ্ছিলেন। প্রতিটি কাজের সফল বাস্তবায়নে সহায়তায় সবসময়ই সঙ্গে সাধারণ মানুষ। দিনরাত কাজ করে আনিসুল হক প্রমাণ করেছিলেন যে সদিচ্ছা আর সঠিক পথে চেষ্টায় সবকিছুই অর্জন করা সম্ভব। জনপ্রনিধি তথা মেয়র হিসেবে দেশবাসীর কাছে স্থাপন করেছেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। চোখের সামনেই ভাসছে রাজধানীবাসীর সফল মেয়রের নানা উন্নয়ন কর্মকা- আর জনস্বার্থে গৃহীত নানা উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন। কোন নির্দিষ্ট দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির জন্য দলমত নির্বিশেষে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বনি¤œ আয়ের সাধারণ মানুষকে একসঙ্গে কাঁদতে দেখেনি কেউ। শেষ বিদায়ের বেলায় রাজধানীর বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজায় হাজার হাজার লোকের স্বপ্রণোদিত উপস্থিতি আর দেশজুড়ে লাখো কোটি নাগরিকের আফসোস তাই প্রমাণ করে। শেরপুর জেলার নকলা উপজেলা থেকে জানাজার জন্য ঢাকায় আসা ৬৫ বছরের বৃদ্ধ মিসবাহ উদ্দীন আনিসুল হক সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়ায় জনকণ্ঠকে বলেন, এই বয়সে মেয়র তো দেশে অনেক দেখেছি, ক্ষমতায় থেকে শুধু উন্নয়ন কাজের মাধ্যমে মানুষ এত জনপ্রিয় হতে পারেন তা আমার জানা ছিল না। ছেলের ফোনে আনিসুল হকের মৃত্যুর খবর শুনে খুবই কষ্ট পেয়েছি। তাই বাড়িতে থাকতে পারিনি। চলে এসেছি নতুন ঢাকা বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখানো নায়ককে শেষবারের মতো একনজর দেখতে। নতুন ঢাকা গড়তে ঢাকাবাসীর আরও কিছুদিন দরকার ছিল তাকে। ঢাকায় এমন কর্মপাগল মেয়র আর আসবে কি কখনও? অসংখ্য নারীকে রাস্তায় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ট্রাফিক জ্যামে রাস্তায় আটকে থাকা হাজার হাজার মানুষ প্রিয় মেয়রকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে না পেরে ব্যর্থ মনোরথ নিয়ে ফিরে গেছেন। সরকারী ও বিরোধীদলীয় নবীন-প্রবীণ রাজনীতিবিদ, লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, শ্রমিক, সব শ্রেণীর পেশাজীবী, মেয়রের নানা উদ্যোগের ফলে সুবিধাভোগীসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যেই অতি জনপ্রিয় ছিলেন আনিসুল হক। পাশপাশি উত্তর সিটির নির্বাচিত সকল কাউন্সিলরসহ সিটি কর্পোরেশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছেও তিনি ছিলেন এক আলোকবর্তিতা। না চাইতেই প্রতিটি ওয়ার্ডের সীমানার সব প্রকার সমস্যা চিহ্নিত করে সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান করে দিয়েছেন। সমস্যা হলেই দিনে রাতে যে কোন সময় সবার আগে তা সমাধানের জন্য নিজেই নেমে যেতেন রাস্তায়। এমন উদাহারণও রয়েছে মেয়র কর্তৃক তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধানের পর উক্ত এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছেছেন। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মৃত্যুর পরও বাবা শরিফুল হক জানতেন না পুত্র আনিসুল হকের মৃত্যুর কথা। ছোট ছেলে বর্তমান সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের বাসায়ই ছিলেন প্রয়াত মেয়রের ৯৫ বছর বয়সী অতি বৃদ্ধ পিতা। শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা করে তাকে জানানো হয়নি ছেলের মৃত্যুর কথা। কিন্তু শেষবারের মতো ছেলের লাশ দেখার জন্য বৃদ্ধ পিতাকে বলতেই হলো। কারণ এটিই হবে পিতার সঙ্গে পুত্রের শেষ সাক্ষাত। আজকের পর আর বাস্তবে আনিসুল হকের দেখা পাবেন না পিতা। তাই বাবা শরিফুল হককে হুইল চেয়ারে করে আনা হয় ছেলের মরদেহ দেখাতে। তিনি ছেলেকে শেষবারের মতো আদর করেন। মাত্র দুই মিনিটের মতো ছিলেন ছেলের লাশের পাশে। কথা বলার কোন শক্তি নেই তার। শুধু শোন যায় গোঙানির করুন শব্দ। বিভিন্ন সময় বৃদ্ধ পিতার শারিরীক অসুস্থতার কথা গণমাধ্যমে বলতেন আনিসুল হক। তিনি বলতেন যে, আমার হাজারো আগ্রহ আর চেষ্টা সত্ত্বেও অতি বৃদ্ধ আর দুর্বল বাবাকে আমি দেখতে পারি না। এমনকি হেলিকপ্টারে করেও বাবাকে ঢাকায় আনতে পারি না। খুবই ইচ্ছে হয় বাবাকে সবসময়ই পাশে দেখতে। সত্যিই সেই বৃদ্ধ পিতাই তার সন্তানকে দেখতে ঢাকায় আসলেন তবে তা জীবিত অবস্থায় নয় ছেলের মৃত্যুর পর শেষবারের মতো আসলেন প্রিয় ছেলেকে দেখতে। কষ্টে বুক ভেসে গেলেও পিতা শরিফুল হক শুধু তাকিয়েই ছিলেন ছেলের লাশের দিকে। এমন সময় এক আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে উপস্থিত সবাই চোখের পানি ফেলে দিলেন। পিতার বেঁচে থাকা অবস্থায় আদরের বুকের ধন পুত্রের অকাল মৃতে্যু পিতার জন্য সহ্য করা কত যে নির্মম আর কঠিন তাই প্রমাণ হলো। সকাল থেকে জনতার মেয়রের লাশ বরণে প্রস্তুত ছিল বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়াম। বিকেল চারটার সময় তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরের পর থেকেই দলে দলে স্টেডিয়াম মাঠে ও আশপাশে মানুষের ঢল নামে। রাস্তার উপরেই হাজার হাজার গাড়ি রেখে একনজর দেখতে ছুটেন মানুষজন। আর্মি স্টেডিয়ামের পাশের বিমানবন্দর রোডের পাশে শতশত প্রাইভেট কার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। জানাজার আগে ৩টা ১০ মিনিট থেকে জাতীয় পতাকা ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পতাকা দিয়ে ঢাকা আনিসুল হকের মরদেহ আর্মি স্টেডিয়ামে আনা হয়। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ শেষবারের মতো শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রথমে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সরোয়ার হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষে ক্যাপ্টেন মোশতাক আহমেদ পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর শ্রদ্ধা জানাতে হাজার হাজার সাধারণ মানুষের ঢল নামে। কোন ক্ষমতাসীন মেয়রের মৃত্যুতে সর্বদলীয় ও সর্বস্তরের এত মানুষ এর আগে জানাযাতে আসতে দেখেনি কেউ হয়ত। কানায় কানায় পূর্ণ ছিল আর্মি স্টেডিয়াম। মাঠে দাঁড়াতে না পেরে লোকজন সিঁড়িতে গিয়ে নামাজে শরিক হন। জানাজা শেষে একনজর প্রিয় মেয়রকে দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। এ সময়ও অনেক মানুষকে কাঁদতে দেখা যায়। ৬ ডিসেম্বর কুলখানি ॥ আগামী ৬ ডিসেম্বর বুধবার বাদ আসর গুলশানের আজাদ মসজিদে আনিসুল হকের কুলখানি হবে কুলখানি হবে। আর্মি স্টেডিয়ামে মেয়র আনিসুল হকের জানাজার আগে আনিসুল হকের ছেলে নাভিদুল হক এ কথা জানান। বাবার জন্য উপস্থিতদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে নাভিদুল হক বলেন, আমার বাবা ছিলেন সৌখিন মানুষ। তিনি হাসি-খুশি মানুষ ছিলেন। তিনি দেশবাসীর কাছে বাবার জন্য দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, কাজের খাতিরে কেউ যদি আমার বাবার ব্যবহারে দুঃখ পেয়ে থাকেন, তাহলে আপনারা তাকে ক্ষমা করে দিয়েন। আনিসুল হকের বাসায় প্রধানমন্ত্রী ॥ আনিসুল হককে শ্রদ্ধা জানাতে বেলা পৌনে ২টার দিকে তার বাসভবনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী পৌঁছানোর পর সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আনিসুল হকের স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে প্রায় ৩০ মিনিট অবস্থান করেন। তিনি আনিসুল হকের পরিবারের সদস্যদের সান্ত¦না দেন ও সমবেদনা জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আনিসুল হকের ছোট ভাই সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকসহ মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এমন আরেকজন খুঁজে পাওয়া কঠিনÑ ওবায়দুল কাদের ॥ শনিবার দুপুরে আনিসুল হকের বাসভবনে তার মরদেহ দেখতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তার (আনিসুল হক) দুচোখ ভরা স্বপ্ন ছিল, স্বপ্ন ছিল ঢাকাকে আধুনিক সিটি হিসেবে গড়ে তোলার। আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হলো। বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। ব্যক্তিগতভাবে আমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেলাম। আনিসুল হকের আরেকজনকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। এটা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। তার যে স্বপ্ন সেই স্বপ্ন যেন সত্যি হয়, এ নগরীকে আধুনিক নগরীতে রূপ দিতে, গ্রিন এ্যান্ড ক্লিন সিটির স্বপ্নকে বৃথা যেতে দেব না। সব কর্মকা-ে আনিসুল হক ছিলেন যোগ্য তোফায়েল আহমদ ॥ আনিসুল হকের মরদেহ দেখতে গিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বিভিন্ন সময় আমি জেলে ছিলাম। তখন আনিসুল হক আমার পরিবারের খোঁজখবর রেখেছেন। সব কর্মকা-ে আনিসুল হক ছিলেন যোগ্য। উপস্থাপনা থেকে ব্যবসা-সব বিষয়ে তার দক্ষতা দেশবাসীকে তিনি দেখিয়ে গেছেন। যখন মেয়র আনিসুল ১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে টকশো করতেন, সে সময় আমাদের ডাকা হতো। কতো যে প্রশ্ন তিনি করতেন। এরপর তিনি ব্যবসায়ী হিসেবে তার সফলতা দেখিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের সকল সংগঠনে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তারপর মেয়র হিসেবে যখন দায়িত্ব নিলেন, সে সময় গাড়িতে নিয়ে ঘুরে দেখাতেন আমাকে, কীভাবে কাজ করতেন আনিসুল। আমি একা হয়ে গেলাম সাঈদ খোকন ॥ মেয়র আনিসুল হকের মরদেহ দেখতে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আমি একা হয়ে গেছি। দুজন মিলে আধুনিক ঢাকা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। এখন জানি না ভবিষ্যতে সে স্বপ্নের কী হবে? আর কেউ আমাকে কখনও বড় ভাইয়ের মতো পরামর্শ দেবে না। বড় ভাই হিসেবে আনিসুল হক সবসময় আমার পাশে ছিলেন। এখন আমার কাছে সবকিছু অন্ধকার মনে হচ্ছে। ডিএনসিসি মেয়রের একান্ত সচিব এ কে এম মিজানুর রহমান জানান, লন্ডনের স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় আনিসুল হকের মরদেহবাহী ফ্লাইটটি বাংলাদেশের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান আনিসুল হক। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৩ আগস্ট তাকে লন্ডনের ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত রোগ সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস’ শনাক্ত করেন চিকিৎসকরা। এরপর তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। অবস্থার উন্নতি ঘটলে গত ৩১ অক্টোবর আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। গত ২৮ নবেম্বর পুনরায় অবস্থার অবনতি হলে তাকে রিহ্যাবিলিটেশন থেকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ১ থেকে ৩ ডিসেম্বর তিন দিনের শোক পালনের ঘোষণা করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ৩ ডিসেম্বর রবিবার ডিএনসিসির সেবাখাত ছাড়া সকল অফিস বন্ধ রাখা হয়। এদিকে আনিসুল হকের মৃত্যুতে তার সম্মনার্থে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পাঁচটি আঞ্চলিক অফিসসহ প্রধান কার্যালয় ভবনে অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করা হয়। রাজধানীন উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হকের জন্ম ১৯৫২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী জেলায়। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ৮০ থেকে ৯০ এর দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। এরপর ব্যবসায়ী থেকে হয়ে ওঠেন সার্থক রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন একজন সফল উদ্যোক্তা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনেরও (এফবিসিসিআই) সভাপতি ছিলেন। ২০১৫ সালের এপ্রিলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক। সফলতার চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্তই তিনি রেখেছেন তার কথা ও কাজের বাস্তব প্রতিফলন। এমন আধুনিক, স্মার্ট ও নাগরিক বসবাসের উপযোগী ঢাকা গড়তে তার উদ্যোগ ও সকল অবদান রাজধানী তথা দেশবাসী যুগযুগ ধরে তাকে মনে রাখবেন।
×