ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যানবাহনের হেডলাইটের ওপর অর্ধেক কালো রঙে ঢেকে না দেয়ায় এই দৃষ্টিভ্রম ঘটে

রাতে সড়ক মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ দৃষ্টি বিভ্রম!

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৪ ডিসেম্বর ২০১৭

রাতে সড়ক মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ দৃষ্টি বিভ্রম!

সমুদ্র হক ॥ যানবাহনের হেডলাইটের ওপরের অর্ধেক কালো রঙে ঢেকে না দেয়ায় রাতে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। রাতে সড়ক মহাসড়কে উভয় দিক থেকে চলাচল করা যানবাহনের হেডলাইটের পুরো অংশের আলোক রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়ে চালকের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। এই অবস্থায় দু’টি গাড়ির ক্রসিংয়ে অনেক সময় দৃষ্টিভ্রমে পাশাপাশি দূরত্ব কমে গেলে মুখোমুখি সংঘর্ষে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে শীতের সময়টায় সড়ক মহাসড়কে ঘন কুয়াশায় মোটর গাড়ির হেডলাইটের রশ্মি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় দুর্ঘটনার হার বেড়ে যায়। খোঁজ খবর করে জানা যায়, বিদেশের উন্নত যানবাহনগুলোতে হেডলাইটের ধরন আলাদা করা হয়েছে। যেখানে চালক রাতে গাড়ি চালানোর সময় হেডলাইটের ওপরের অংশ ও নিচের অংশের ব্যবধানে আলোকরশ্মির বিচ্ছুরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। দেশে মহাসড়কে পেশাদার চালক এবং নিজের গাড়ির ড্রাইভিং শেখা মালিক ও পরিবারের সদস্য মহাসড়কে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালান। গাড়ি চলাচলের সময় দুই লেনের সড়কে চলাচলকারী গাড়ির চালক হেডলাইটের ডিপার (আলো নিচের দিকে করে রাখা) নিয়ম ঠিকমতো মানেন না। ফলে কখনও মুখোমুখি কখনও পেছনের গাড়ি সম্মুখের গাড়িকে ধাক্কা দিলে দুর্ঘটনা ঘটে। বগুড়ার এক অভিজ্ঞ চালক মোজাহার আলী জানালেন, ত্রিশ বছর ধরে তিনি চার চাকার মাঝারি (কার, মাইক্রো বাস,পিকআপ) ও ছয় চাকার ভারি যানবাহন চালাচ্ছেন। গাড়ির হেডলাইটের ওপরের অর্ধেক অংশ কালো রঙে ঢাকা থাকলে আলোকরশ্মি চারদিকে ছেয়ে বিচ্ছুরিত না হয়ে নিচের দিকে (সড়কের ওপর) থাকে। গাড়ি ক্রসিংয়ের মাপ ঠিক থাকে। দুর্ঘটনা কম হয়। মহাসড়কে রাতে চলাচলকারী হাজারো যানবাহনের হেডলাইট সম্পূর্ণ জ্বালানো থাকলে তীব্র আলোক রশ্মি ছড়িয়ে যায়। ফলে দৃষ্টিভ্রম ঘটে। যে কোন সড়কেই (তা নগরীর মধ্যেই হোক আর সড়ক মহাসড়ক হোক) রাতে মোটর গাড়ির জ্বলন্ত হেডলাইট পথচারীর চোখে পড়লে দৃষ্টিভ্রম হয়। ওই গাড়ির আশেপাশের কোন যানবাহন তখন দৃষ্টিতে আসে না। ফলে পথচারীর সঙ্গে যানবাহনের ধাক্কা লাগে। আরও কয়েক চালক বললেন গাড়ির হেডলাইটের ওপরের অংশের অর্ধেক কালো রঙে ঢাকা থাকলে বাতির ডিপার ঠিকমতো রাস্তায় পড়ে। তখন পথ দেখা সহজ হয় এবং স্বচ্ছন্দে গাড়ি চালানো যায়। সড়ক ও জনপথ (স ও জ) অধিদফতরের এক সূত্র জানায়, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা উত্তরবঙ্গমুখী সকল যানবাহন বগুড়ার মহাসড়কের ওপর দিয়ে রংপুর বিভাগের ৮ জেলা ও রাজশাহী বিভাগের ৩ জেলায় চলাচল করে। নিত্যদিনের এই সংখ্যা ১০ হাজারেও বেশি। ঈদের সময় রোড ট্রাফিক আরও বেড়ে যায়। গাড়ির হেডলাইটের ডিপার ঠিকমতো না দেয়ায় অথবা হেডলাইটের ওপরের অর্ধেক অংশ কালো রঙে ঢেকে না দেয়ায় রাতের চলাচলে চালকের দৃষ্টিভ্রম বেশি হয়ে দুর্ঘটনার হার বেড়ে গিয়েছে। সড়ক বিভাগের একজন প্রকৌশলী জানান, পূর্বাঞ্চলের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে পশ্চিম প্রান্তে হাটিকুমরুল থেকে রংপুর পর্যন্ত দীর্ঘ মহাসড়কে চার লেনের কাজ শুরু হয়েছে। চার লেন হওয়ার পর যানবাহন চলাচলের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। এই বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মকর্তা জানান, মোটর গাড়ির হেডলাইট কালো রঙে ঢেকে না দেয়ায় জরিমানা করা হয় এবং কালো রঙে ঢেকে দেয়া হয়। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করা হয়। তারপরও অনিয়ন্ত্রিত থেকে যাচ্ছে।
×