ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসের আলোচনায় অর্থমন্ত্রী

দেশের ১৬ লাখ প্রতিবন্ধীকে সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসতে কাজ করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৪ ডিসেম্বর ২০১৭

দেশের ১৬ লাখ প্রতিবন্ধীকে সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসতে কাজ করা হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের ১৬ লাখ প্রতিবন্ধীকে সমাজের মূলধারায় নিয়ে আসতে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সমাজে যারা প্রতিবন্ধী তাদেরকে অবহেলা না করে বরং তাদের প্রতি আরও যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ভূমিকম্প বিষয়ক এক বৈঠক শেষে তিনি জানিয়েছেন, দেশে বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে না। আর এতে যত্রতত্রভাবে যেখানে-সেখানে বিল্ডিং গড়ে উঠছে। রবিবার সকাল ও বিকেলে পৃথক দুই বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ২৬তম আন্তর্জাতিক ও ১৯তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসটি উপলক্ষে সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী। পরে বিকেলে সচিবালয়ে ‘ভূমিকম্পের সময় আমাদের করণীয়’ শীর্ষক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয় একটু সাহায্য ও সহযোগিতা পেলে তারাও সমাজের মূলধারায় আসতে পারেন। ওই অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সফল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ টু আই প্রকল্পের পক্ষ থেকে স্মার্ট হুইল চেয়ার, স্মার্ট ট্রাই সাইকেল এবং স্মার্ট টকিং ডিভাইস প্রতিবন্ধীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ বা ১৬ লাখ প্রতিবন্ধী রয়েছে। তাদের প্রতি আমাদের ভাল আচরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, তারা নিজের ইচ্ছায় প্রতিবন্ধী হয়নি। অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার প্রতিবন্ধীদের বিশেষভাবে নজর দেন। বর্তমানে প্রতিবন্ধীদের জন্য ১০০টি সেবা কেন্দ্র আছে। আরও ৪০টি গড়ে তোলা হবে। সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য মাঠের ব্যবস্থা করছে। এর জন্য সাভারে জায়গা নেয়া হয়েছে, শীঘ্রই এ মাঠ খেলার উপযুক্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রশংসা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ একজন প্রতিবন্ধী সেবক। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে এ ব্যাপারে প্রশংসিত হয়েছেন। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করার জন্য তিনি অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। এর প্রভাব বর্তমান সরকারের উপরেও পরবে। সরকারও প্রতিবন্ধীদের দিকে বিশেষভাবে নজর দেবে। তিনি বলেন, জানি না বিধাতা কেন তাদের প্রতিবন্ধী বানিয়েছেন। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের কোন আচরণে যেন তারা কষ্ট না পায়। এটাই হবে প্রতিবন্ধীদের জন্য বড় সেবা। তারা যেন নিজেকে অবহেলিত মনে না করেন, এ ব্যাপারে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিবন্ধীদের প্রশংসা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, তারা একটু সহায়তা পেলে অনেক ভাল কাজ করতে পারে। যেটা সমাজে স্বীকৃত। নিজের এলাকার প্রতিবন্ধী রজব আলীর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, রজব আলীকে আমি ২৫ বছর ধরে চিনি। আজ তার এখানে পুরস্কার গ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু এখানে এসে জানতে পারলাম রজব আলী আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও মানসিকভাবে ছিলেন অনেক শক্তিশালী। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত এ আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর মিরপুরে প্রতিবন্ধী মেলার উদ্বোধন করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে ৩টি বিশেষ ক্যাটাগরিতে প্রতিবন্ধীদের পুরস্কার দেয়া হয়। ক্যাটাগরিগুলো হলো-সফল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রতিবন্ধিতা উত্তরণে কাজ করে এমন সফল ব্যক্তি এবং প্রতিবন্ধিতা উত্তরণে কাজ করে এমন সফল প্রতিষ্ঠান। দেশে বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে না ॥ বাংলাদেশে বাস্তব প্রেক্ষাপটে বিল্ডিং কোড বিধিমালা সম্পূর্ণ প্রয়োগ হয় না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। রবিবার সচিবালয়ে বিষয়ভিত্তিক ত্রৈমাসিক পত্রিকা হালখাতা এবং আইএফআইসি ব্যাংকের সহযোগিতায় ‘ভূমিকম্পের সময় আমাদের করণীয়’ শীর্ষক বুকলেটের মোড়ক উন্মোচনের সময় তিনি এ মন্তব্য করেন। এসময় ভূমিকম্প গবেষক অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, হালখাতা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক শওকত হোসেন, সম্পাদক শরমিন নিশাত উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিল্ডিং কোড আইন বহুদিন আগে থেকেই আছে। তবে কোন কারণে এটা সম্পূর্ণ প্রয়োগ করি না। আমরা বিল্ডিং কোড দেখি এবং অনুসরণ করি। কিন্তু ভবন বিল্ডিং কোড না মেনে নির্মাণ করলেও সেই ভবন আমরা ভেঙ্গে ফেলি না। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, হালখাতার এ সচেতনতামূলক সেবা কাজে ১ লাখ কপি বুকলেট প্রকাশ ও প্রচারে সহযোগিতা করেছে আইএফআইসি ব্যাংক। এসব বুকলেট স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
×