ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১ ডিসেম্বর জাতীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালনের জোর দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২ ডিসেম্বর ২০১৭

১ ডিসেম্বর জাতীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালনের জোর দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১ ডিসেম্বর জাতীয়ভাবে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। শুক্রবার বিজয়ের মাসের প্রথম দিনে রাজধানীতে পৃথক দুইটি অনুষ্ঠানে তারা এই দাবি জানান। রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অন্য অনুষ্ঠানটি সচিবালয় লিংক রোডে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সামনে আয়োজন করে ন্যাশনাল এফএফ ফাউন্ডেশন। আলোচনা সভায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে পাকিস্তানের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত পাকিস্তানকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার দাবি জানায় সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম। তৎকালীন প্রশাসন ও সেনা সদস্যদের আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিচার সম্মুখীন করা, পাকিস্তানের কাছে পাওনা অর্থ আদায় করারও দাবি জানান তারা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রাজনীতিতে তাদের পরিবার ও পরবর্তী প্রজন্মের অধিকার রহিত করতে আইন প্রণয়নের দাবিও জানিয়েছেন সেক্টর কমান্ডররা। আলোচনা সভায় তারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নামের আগে ‘জাতীয় বীর উপাধি’ দিয়ে বিজয়ের মাসের প্রথম দিন ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। একইসঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ, জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ মুক্তিযুদ্ধের সব স্থাপনা এলাকায় তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়নও জরুরী। শুক্রবার সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আলোচনা পর্বে উপস্থিত ছিলেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যান কে এম সফিউল্লাহ, ভাইস চেয়ারম্যান আবু ওসমান চৌধুরী, মহাসচিব হারুন হাবীবসহ ফোরামের সদস্যরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে ফোরামের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী ২০ দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলোর মধ্যে ১ ডিসেম্বর ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানানো হয়। অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে জাতীয় নীতিমালার ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়ন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রীয় সম্মান, অর্থনৈতিক-সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান, দেশের সব মুক্তিযোদ্ধাকে মাসিক ২০ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা প্রদান করা, মৃত্যুর পর ‘বিশেষ ফান্ডের’ মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে এককালীন ১০ লাখ টাকা প্রদান ও মুক্তিযোদ্ধাদের ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ প্রদানের বিশেষ ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান, সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, মুক্তিযুদ্ধের নেতা বদল, রেডিও-টেলিভিশনের ভাষ্য বদলকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল’ হিসেবে ঘোষণা অন্যতম দাবি। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে ৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের এখনও যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হচ্ছে না। তাদের ভাতা প্রদান করা হচ্ছে, কিছু আয়োজনে অতিথি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু এটা সম্মান জানানোর যথাযথ উপায় নয়। তিনি বলেন, তেরো বছর ধরে আমরা ১ ডিসেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে উদযাপনের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানাচ্ছি। কিন্তু এখনও দাবি আদায় হয়নি। তবে আমরাও ছেড়ে দেয়ার নই। পরে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সদস্যরা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুলে দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ন্যাশনাল এফএফ ফাউন্ডেশন ॥ মুক্তিযোদ্ধাদের সেবামূলক সংগঠন ন্যাশনাল এফএফ ফাউন্ডেশন আয়োজিত সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ১ ডিসেম্বর জাতীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালনের যে দাবি উঠেছে আমিও এই দাবি যৌক্তিক মনে করি। তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন কত দিবসই পালন করি। তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যও একটি দিবস থাকলে তারা আরও বেশি সম্মানিত হবেন। মুক্তিযুদ্ধ দিবস জাতীয়ভাবে পালন করতে পারলে নতুন প্রজন্ম অন্তত এই দিনটিতে হলেও দেশের স্বাধীনতা অর্জনে মুক্তিযোদ্ধা ভূমিকা স্মরণ করবে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে অনেক রাজনৈতিক দল রয়েছে যারা মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও মূলত তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াস করে না। তিনি বলেন, পাকিস্তানীরা যেমন এখনও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে আসছে, তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে অনেকেই বিতর্ক করতেন। তবে ইউনেস্কো কর্তৃক সাত মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দেয়ায় আজ সেই সব বিতর্কের অবসান হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াস করে না তারা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা বলতে চাই ষড়যন্ত্র ও হত্যার রাজনীতি বাদ দিন। সামনে নির্বাচন। স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে স্বাধীনতার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখুন। যারা নির্বাচন বানচাল করতে চায় দেশের সব মুক্তিযোদ্ধারা মিলে ওই সব ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করবে বলেও মন্তব্য করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধ দিবস উপলেক্ষে ন্যাশনাল এফএফ ফাউন্ডেশন আয়োজিত বিজয় র‌্যালির আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব) এম হারুন অর রশীদ বীরপ্রতীক এবং ন্যাশনাল এফএফ ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ। সংগঠনের চেয়ারম্যান ড. এসএম জাহাঙ্গীর আলম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। পরে সচিবালয় লিংক রোডে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বিজয় র‌্যালির উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
×