ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শুক্রবারও ২ শতাধিক রোহিঙ্গা ঢুকেছে, বাড়ছে শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২ ডিসেম্বর ২০১৭

শুক্রবারও ২ শতাধিক রোহিঙ্গা  ঢুকেছে, বাড়ছে শঙ্কা

হাসান নাসির/এইচএম এরশাদ ॥ প্রত্যাবাসনে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং বহুপাক্ষিক চাপের মধ্যেও সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকায় শঙ্কা বাড়ছে ফেরানোর প্রক্রিয়া নিয়ে। তাছাড়া আশ্রিতদের আবাসন গড়তে বড় ধরনের পরিকল্পনা গৃহীত হওয়ায় কতসংখ্যক রোহিঙ্গা শেষ পর্যন্ত ফিরতে রাজি হবে সে প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে। কেননা, ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গারা জানান দিয়েছে যে, নাগরিকত্বসহ সমান অধিকারের দাবি অর্জিত না হলে তারা ফিরবে না। কিন্তু এসব দাবি পূরণের কোন ইঙ্গিত মিলছে না মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে। এদিকে, রোহিঙ্গা অবস্থান দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কায় অস্বস্তি বাড়ছে টেকনাফ এবং উখিয়ায়। স্থানীয় বাসিন্দারা পড়েছে নানামুখী সঙ্কট ও চাপে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের ¯্রােত না থামায় ক্ষোভও বাড়ছে। সীমান্তে শৈথিল্য এখন আর মানতে রাজি নয় বাংলাদেশের নাগরিকরা। তাদের প্রশ্ন, ফেরতই যখন পাঠাব, তাহলে নতুন করে আরও রোহিঙ্গা ঢুকতে দেব কেন? শীত আগমনের এই সময়টি কক্সবাজারে ভরা পর্যটন মৌসুম। দেশের পর্যটকদের প্রধান গন্তব্য কক্সবাজার। দেশের অত্যন্ত আকর্ষণীয় এ জেলায় এখন অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গা। উখিয়া এবং টেকনাফের শরণার্থী ক্যাম্পে এদের আটকে রাখা অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং। অনেক রোহিঙ্গাই ফাঁক গলে চলে গেছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। নতুন করে রোহিঙ্গা ¯্রােত আসার পর পর্যটন শহর কক্সবাজারে বেড়ে গেছে ভিক্ষুকের সংখ্যা। তাছাড়া এইডস এবং নিরাপত্তাসহ নানাক্ষেত্রে ঝুঁকিও বাড়ছে। সবমিলে উৎকণ্ঠায় হোটেল মোটেল মালিক এবং সাধারণ নাগরিকরাও। প্রথমে রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আবেগের বহির্প্রকাশ দেখা গেলেও এখন তার লেশমাত্রও নেই। বরং প্রত্যাবাসনের অনিশ্চয়তায় স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদের দেখছে বোঝা হিসেবে। তাদের অভিমত, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এখন যেহেতু নির্যাতন নেই এবং প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা চুক্তিও হয়েছে সেহেতু সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া উচিত। রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারাও বলছেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যতটুকু এগিয়েছে তাতে করে এই বোঝা আরও বড় করার কোন যুক্তি নেই। কারণ, আসাটা খুব সহজে হলেও ফেরত পাঠানো বেশ কঠিন। তাছাড়া বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মতো এতটা ঢিলেঢালা সীমান্ত বিশ্বে খুঁজে পাওয়া কঠিন। ইউরোপের দেশগুলো একই ইউনিয়নভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদেরও একদেশ থেকে অন্য দেশে প্রবেশে পাসপোর্টসহ কিছু নিয়মকানুন মানতে হয়। তিনদিক ঘেরা প্রতিবেশী ভারতেও ইচ্ছেমতো আসা-যাওয়া করা যায় না। তাহলে মিয়ানমার সীমান্ত সব সময় এতটা অবারিত কেন সে প্রশ্ন অনেকের। শুক্রবারও এসেছে দুই শতাধিক ॥ তিনমাসের অধিক সময় ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ থেমে নেই। শুক্রবার সকালেও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দুই শতাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা ঢুকছে অনেকটা বাধাহীনভাবে। আর কত রোহিঙ্গা এলে এই ¯্রােত থামবে সে প্রশ্ন স্থানীয় অধিবাসীদের। এখন যারা আসছে তারা আগের মতো আর নির্যাতনের অভিযোগও আনতে পারছে না। কেউ কেউ তেমন বললেও বিশ্বাসযোগ্যতা পাচ্ছে না। তারা মূলত শুধু খাদ্যের অভাবের কথাই বলছে। সে কারণে বিষয়টি পরিষ্কার যে, এখন যারা আসছে তা মূলত এপারে নিরাপদে থাকা ও খাওয়ার লোভে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পাশাপাশি সরকার এবং ব্যক্তি পর্যায়ের বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সহায়তাই যেন রোহিঙ্গাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তাছাড়া স্বজন, প্রতিবেশী ও পরিচিতদের একটি বিপুল অংশ এপারে চলে আসায় অন্যরাও রাখাইনে থাকতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
×