ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ সব সময়ই প্রস্তুত ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২ ডিসেম্বর ২০১৭

নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ সব সময়ই প্রস্তুত ॥  কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের জন্য সবসময়ই প্রস্তুত আছে। নির্বাচন আগামী মাসে হলেও আমরা প্রস্তুত। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জনসমর্থনের দিক থেকে আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপি অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তবে আগামীবার ক্ষমতায় আসব কি আসব নাÑ সেটা নির্ধারণ করবেন মহান আল্লাহ ও এদেশের জনগণ। তবে বিজয়ের ব্যাপারে আমাদের দৃঢ় আত্মবিশ্বাস রয়েছে। শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকম-লীর সদস্যদের সঙ্গে সহযোগী-ভাতৃপ্রতীম সংগঠন এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের যৌথসভা শেষে প্রেস ব্রিফিংকালে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ কাউকে ২০, ৩০ কিংবা ৪০ সিটও দেবে নাÑ এমন কথা কখনও বলে না। যেটা বিএনপি সবসময় বলে থাকে। আওয়ামী লীগ শুধু বলছেÑ বিজয়ের ব্যাপারে তাদের আত্মবিশ্বাস রয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগের অনেক উন্নয়ন ও অর্জন আছে। বৈঠকে বিজয়ের মাসে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচী চূড়ান্ত করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের চতুর্থ বর্ষপূর্তির দিনটিকে ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ এবং আগামী ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসটি ব্যাপকভাবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে এসব কর্মসূচী ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের। আগাম নির্বাচনের কোন সম্ভাবনা আছে কিনাÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ তো প্রস্তুতি নেবেই, যেন আগামী মাসে নির্বাচন হলেও জিততে পারে। যদি নির্বাচন আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে হয় তাহলেও কী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক প্রস্তুতি থাকবে না? আর নির্বাচনের বিষয় প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনি তো বলেননি কবে নির্বাচন হবে। ধরে রাখছি, সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে। কিন্তু এখন যদি প্রধানমন্ত্রী মনে করেন তিনি আগাম নির্বাচন দেবেন, সেটা তার এখতিয়ার। এটা নিয়ে তার সঙ্গে কোন কথা হয়নি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালেও ক্ষমতায় থাকবেÑ একথা বলেনি। তবে তারা মনোবল হারাননি। এই সরকারের অনেক কাজই চলমান, যেগুলো এই সরকারের আমলেই শেষ হবে এমন কোন কথা নেই, কোন বিষয় নেই। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসতেও পারে। তবে আগামীবার ক্ষমতায় আসব কি আসব নাÑ সেটা নির্ধারণ করবেন আল্লাহ ও দেশের জনগণ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশের জনগণ শেখ হাসিনার সততা, দক্ষতা, যোগ্যতা ও উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব দেয়। দেশের অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর কন্যার ওপর আস্থাশীল। এ সরকারকে আবারও ক্ষমতায় আসা উচিত বলেই মনে করেন দেশের জনগণ। বিএনপির দেখানোর মতো দর্শনীয় ইতিবাচক কোন রাজনৈতিক কর্মকা- নেই। এ পরিস্থিতিতে তারা জনপ্রিয়তায় আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেক অনেক পিছিয়ে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বারবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও কেন তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে নাÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আদালত ও আইন সরকার নিয়ন্ত্রণ করে না। কোন থানায় গ্রেফতারি পরোয়ানা না এলে পুলিশ তাদের কিভাবে গ্রেফতার করবে? অতীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের মহাপরিচালক কয়েকবার বলেছেন, তার (খালেদা জিয়া) গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় আসেনি। খালেদা জিয়াকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না, এটি আদালতকে জিজ্ঞাসা করুন। ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন রেখে বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ফান্ড মামলা দুটি কি শেখ হাসিনার সরকার জারি করেছে? এসব মামলা কে করেছে? এসব মামলা দিয়েছে তারই (খালেদা জিয়া) নিয়োগকৃত ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনরা। এই মামলা কিন্তু এই সরকারের আমলে নয়। আজকে তারা এমনভাবে মিথ্যাচার করছে, মনে হয় যেন এই সরকারই মামলা করেছে। তিনি বলেন, সরকার যদি এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করত, তাহলে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের ব্যবস্থা করানো হতো। আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর বিএনপি নেতাদের প্রতিক্রিয়া হাস্যকর। তারা প্রতিক্রিয়া দিলÑ সরকার নাকি খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। সেতুমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি তো আইন-আদালত মানে না। তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলেই বলে আদালতে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। এটার প্রমাণ দিয়েছে তারা আদালতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ-সমাবেশ দিয়ে। আদালত যখন ষোড়শ সংশোধনীর রায় দেয়, তখন আদালত স্বাধীন। আদালত যখন খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে বের করে দিল তখনও বলেছে, আদালতে হস্তক্ষেপ করছে সরকার। এখন সেই বাড়িতে সেনাবাহিনীর ৫০২ জন কর্মকর্তা বাস করছেন। এটা কি সরকারের দোষ? বিএনপি রাজপথ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগ কি করবেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই দলটির আন্দোলন করার কোন ক্ষমতা নেই। তারপরও যদি তারা কোন অপচেষ্টা করে তবে তাদের প্রতিহত করা হবে। গত আট বছরে তাদের আট মিনিটও রাজপথে পাওয়া যায়নি। বৃটিশ পার্লামেন্টে টিউলিপ সিদ্দিক টানা দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হওয়ায় দলের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। সদ্যপ্রয়াত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের স্মৃতিচারণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আনিসুল হক ছিলেন স্বপ্নবাজ, আধুনিক ও সংস্কৃতিমনা একজন মানুষ। উদ্যমী এই মানুষটি ঢাকা সিটিকে নিয়ে ‘গ্রীন এবং ক্লিন সিটি’ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমাদের সেই প্রিয় মানুষ আনিসুল হক আমাদের মাঝে আর নেই। তার মৃত্যুতে দলের পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে যৌথসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ডাঃ দীপু মণি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, একেএম এনামুল হক শামীম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ফরিদুন্নাহার লাইলী, হাবিবুর রহমান সিরাজ, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সুজিত রায় নন্দী, দেলোয়ার হোসেন, এ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, রোকেয়া সুলতানা, প্রকৌশলী আবদুস সবুর, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, এস এম কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, আমিরুল আলম মিলন, মারুফা আক্তার পপি, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন প্রমুখ।
×