ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চলছে নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ নতুন নতুন জোট গঠন প্রক্রিয়া অব্যাহত প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতির আহ্বান

নির্বাচনমুখী রাজনীতিতে ব্যস্ত দল ও জোটগুলো

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২ ডিসেম্বর ২০১৭

নির্বাচনমুখী রাজনীতিতে ব্যস্ত দল ও জোটগুলো

রাজন ভট্টাচার্য ॥ নির্বাচনমুখী রাজনীতি নতুন বছরের শেষ দিকে সংসদ নির্বাচনের ইঙ্গিত দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। কেউ বলছেন ২০১৯ সালের শুরুতে। নির্বাচন যখনই হোক প্রস্তুতি রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। এই হিসেব ধরেই দল ও জোট গোছাতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। নতুন নতুন নির্বাচনী কৌশলও ঠিক করা হচ্ছে। তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি বা নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের প্রক্রিয়াও অব্যাহত। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাপা, সিপিবি-বাসদ, নাজমুল হুদার বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ) মিলিয়ে পাঁচটি রাজনৈতিক জোট এখন সক্রিয়। এছাড়া ড. কামাল হোসেন-বি চৌধুরীর সমন্বয়ে আরেকটি তৃতীয় রাজনৈতিক জোট আসার কথা রয়েছে। বাম ও ইসলামী দল মিলিয়ে আরও অন্তত তিনটি রাজনৈতিক প্লাটফরম গঠনের প্রক্রিয়া অব্যাহত। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। নির্বাচনকালীন সরকার, সুষ্ঠু নির্বাচন, সেনা মোতায়েন সহ নানা ইস্যুতে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে আসছে বিএনপি। তাছাড়া নির্বাচনকালীন রূপরেখা তুলে ধরারও প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। সব মিলিয়ে নির্বাচনী কৌশল অনুযায়ী সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ অব্যাহত রেখেছে। ২০ দলের মধ্যে আসন বণ্টন, প্রার্থী ঠিক করার পাশাপাশি নির্বাচনী কার্যক্রমও অব্যাহত। বিরোধী শক্তিকে মোকাবেলা, নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করাসহ সব বিষয় বিবেচনায় রেখেই নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে ১৪ দলের মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী এমন দলগুলোকে ১৪ দলে যুক্ত করার প্রক্রিয়াও অব্যাহত। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দল থেকেই নেতাকর্মীদের আহ্বান জানানো হয়েছে। বসে নেই বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বাম ও ইসলামী ধারার দলগুলো। অর্থাৎ সব দল ও জোটে এখন নির্বাচনী কর্মকা-। নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী কার্যক্রম চালাচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনী জোয়ার নিজেদের পক্ষে নিতে বড় দলগুলোতে চলছে নানা সমীকরণ। নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজও অব্যাহত। কে কতটা গণমুখী প্রস্তাব মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারে চলছে সেই প্রতিযোগিতাও। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ও নারী ভোটারদের মন জয়ে আকর্ষণীয় প্রতিশ্রুতি থাকবে ইশতেহারজুড়ে। এছাড়াও রাজনীতির বাইরে শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, অভিনেতা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিদের নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার কথাও রয়েছে। ভোটারদের আস্থা অর্জনে নির্বাচনের সময় বিশিষ্টজনদেরও নিজ নিজ দলের পক্ষে কাজে লাগানোর প্রস্তুতি রয়েছে বড় দলগুলোর। আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচার চলছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠপর্যায়ে কাজ শুরুর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনী গাইডলাইন তৈরি করা হবে। আসন ভাগাভাগির বিষয়ে খসড়া আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে ১৪ দলের আয়োজনে সমাবেশ করার কথা আছে। তবে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি এখনও। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতাদের নির্বাচনী বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে। শরিক দলগুলো নিজেদের প্রার্থীদের আসন দিতের সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন আগামী মাসে হলেও আওয়ামী লীগ প্রস্তুত। শুক্রবার সকালে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে যৌথসভা শেষে তিনি এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা তো প্রস্তুতি নেব আগামী মাসে নির্বাচন হলে কীভাবে জিততে পারি। যদি নির্বাচন আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে হয়, তাহলে আমাদের সাংগঠনিক প্রস্তুতি থাকবে না? নির্বাচনের বিষয় প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনি তো বলেন নাই কবে নির্বাচন হবে। আমরা ধরে রাখছি নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে। কিন্তু এখন যদি প্রধানমন্ত্রী মনে করেন তিনি আগাম নির্বাচন দেবেন সেটা তার এখতিয়ার। নির্বাচনের জন্য আমরা সব সময়ই প্রস্তুত আছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আগামীবার ক্ষমতায় আসব কি আসব না, সেটা নির্ধারণ করবেন আল্লাহ ও এ দেশের জনগণ। আমরা কাউকে ২০ সিটও দেব না, ৩০ সিটও দেব না কিংবা ৪০ সিটও দেব না এটা বিএনপি বলে থাকে। আমরা শুধু বলছি, বিজয়ের বিষয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাস রয়েছে। কারণ আমাদের উন্নয়ন ও অর্জন আছে। দেশের জনগণ শেখ হাসিনার সততা, দক্ষতা, যোগ্যতা ও উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব দেয় এবং দেশের অগ্রযাত্রায় তার ওপর আস্থাশীল। এ সরকার আবারও ক্ষমতায় আসা উচিত বলে জল্পনা-কল্পনা করছে জনগণ। গত সপ্তাহে আরেকটি অনুষ্ঠানে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, নেতাদের খুশি করার কোন দরকার নেই। দল গঠন করে বাড়ি বাড়ি যেতে হবে ভোটারদের সমর্থন আদায় করার জন্য। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, অতীতে যা হওয়ার হয়েছে, তা নিয়ে ঘাটাঘাটি না করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। প্রস্তুত বিএনপিও ॥ পরপর দু’বার কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নিলে নিবন্ধন বাতিল। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া বিকল্প নেই বলে মনে করেন দলটির নেতাকর্মী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে এখন অনেকটাই বেকায়দায় বলা চলে দলটি। নেতাকর্মীদের বক্তব্য বিএনপির সবচেয়ে রাজনৈতিক দুঃসময় চলছে এখন। তাই সবার পরামর্শ যে কোন মূল্যে নির্বাচনে অংশ নেয়া। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০ দলকে নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। তবে সমমনা বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই জোটে যুক্ত হতে পারে। এ নিয়ে আলোচনা ও দরকষাকষি অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দাবি করে আসছে। সম্প্রতি দলের অন্যতম স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সহায়ক সরকারের অধীনে নয়, আগের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। এটাই বিএনপির দাবি। প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচন হবে প্রতারণা। দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছেন। নবেম্বরে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় তিনি বলেছেন, ‘হাসিনার অধীনে নির্বাচন চাই না’। মওদুদ বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় বিএনপি। কারণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহায়ক সরকারের প্রধান থাকলে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন। নির্বাচনকালীন কিছু প্রক্রিয়ার কথা তুলে ধরে বিএনপির এই ব্যারিস্টার আরও বলেন, ভোটের ৯০ দিন আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সেনাবাহিনী নামবে এবং তাদের পূর্ণক্ষমতা দিতে হবে। তত্ত্বাবধায়কের দাবি আদায়ে প্রয়োজনে আবারও আন্দোলনে মাঠে নামতে জনগণ অপেক্ষায় আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়ে প্রশ্ন তুললেও আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরালো বিএনপি তথা ২০ দলের মধ্যে। এ লক্ষ্য সামনে রেখে দলের সিনিয়র নেতাদের দ্রুত প্রস্তুতি নিয়ে নিজ-নিজ নির্বাচনী এলাকায় সভা-সমাবেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সম্প্রতি খালেদার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলটির ভাইস-চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন। তাছাড়া ২০ দলের মধ্যে আসন ভাগাভাগির বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি জাপায় ॥ বসে নেই বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও। তারাও ঘর তথা জোট গোছাতে শুরু করেছে। নির্বাচনে অংশ নিতে ত্রিমুখী প্রস্তুতি রয়েছে দলটিতে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসন চেয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। একক নির্বাচনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন। তাছাড়া বিভিন্ন দলের সমন্বয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক জোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছেন দলটির নেতারা। তারা বলছেন, লক্ষ্য ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা। আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যেতে না পারলেও বিরোধী দলের জায়গাটা নিশ্চিত করতে চায় এরশাদের জাপা। প্রয়োজনে নির্বাচনের আগে আগে ফের মহাজোট গঠনেরও ঘোষণা আসতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে বিএনপির অংশগ্রহণ ও নির্বাচন পরিস্থিতির ওপর। দলটির নেতারা জানান, জাপা আসন প্রতি অন্তত তিনজন করে প্রার্থী তালিকা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে। নামসর্বস্ব ৫৮ দল নিয়ে গঠিত জোটও আছে তাদের সঙ্গে। জানতে চাইলে দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। আমরা গণতন্ত্রের স্বার্থে সব সময় কাজ করি। ভবিষ্যতেও করব। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা এক বছরের বেশি সময় ধরে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইতোমধ্যে আমাদের অনেক কাজ গোছানো হয়ে গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের চিঠি দিয়ে এলাকায় কাজ শুরুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্য কোন দল নির্বাচনে অংশ নেবে কি নেবে না এটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। তৃতীয় শক্তির প্রস্তুতি ॥ প্রতিবারের মতো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার প্রস্তুতি রয়েছে। তৃতীয় সারির দলগুলো এই শক্তির সঙ্গে যুক্ত। চলছে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া। যদিও শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া কতটুকু আলোর মুখ দেখবে তাই এখন ভাবনার বিষয়। তৃতীয় শক্তি দল গড়ে তোলার সঙ্গে যুক্ত বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিকল্পধারার প্রধান ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জেএসডি (রব), গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। এছাড়াও আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের এই জোটে আসার কথা অনেক আগে থেকেই উদ্যোক্তারা জানিয়েছিলেন। তবে পাঁচ দলের নেতাদের আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে একটি। এরপর যৌথ বিবৃতিতে কামাল হোসেন ও বি চৌধুরী রাজনৈতিক ঐক্যের আহ্বান জানান। কথা ছিল জনস্বার্থে বেশকিছু কর্মসূচী দেয়া হবে পাঁচ দলের পক্ষ থেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। যদিও আশাবাদী দলগুলোর নেতারা। গণফোরাম সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম ঘোষণা এখন সময়ের বিষয় মাত্র। নির্বাচনকালীন এই জোট সারাদেশে প্রার্থী দেয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান তিনি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহেনার সঙ্গে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর একটি বৈঠক হয়েছে। তাছাড়া বিকল্পধারার বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। বিগত একাধিক জাতীয় নির্বাচনের আগে গণফোরাম, বিকল্পধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ পথচলা শুরু হলেও অল্প সময়ের মধ্যে তা ভেঙে যায়। বাম জোট গঠন ॥ ডিসেম্বরে নতুন জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে যাচ্ছে সিপিবি, বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চাভুক্ত দলগুলো। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বাইরে আটটি বাম দলের ওই জোটের নাম ‘যুক্তফ্রন্ট’ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ইতোমধ্যে জোটভুক্ত কর্মসূচী পালন করতে শুরু করেছে দলগুলো। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী হরতাল পালন করেছে। শনিবারও দেশজুড়ে রয়েছে বিক্ষোভ কর্মসূচী। নেতারা জানান, প্রথম অবস্থায় সিপিবি, বাসদ (খালেকুজ্জামান) এবং গণতান্ত্রিক বাম মোর্চায় থাকা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন ও বাসদ (মার্ক্সবাদী) এই আট দল মিলে নতুন জোট হবে। পরে আগামী নির্বাচনের আগেই আলোচনা সাপেক্ষে কাছাকাছি মতাদর্শের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল দলগুলোকে জোটে যুক্ত করা হবে। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জোটের পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচীসহ একটি ঘোষণাপত্র তৈরির কথা রয়েছে। ঐক্য প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমরা এরই মধ্যে একসঙ্গে রাজপথে নানা কর্মসূচী পালন করছি। এই প্রক্রিয়া আরও নিবিড় করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। আমাদের আন্দোলন কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজপথেই আমাদের ঐক্য গড়ে উঠবে। বসে নেই ধর্মভিত্তিক দলগুলো ॥ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে ধর্মভিত্তিক দলগুলোও। প্রায় সব দল জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনকে প্রাধান্য দিলেও দলীয় কৌশল প্রণয়ন করছে ভিন্নভাবেই। কোন কোন দল তৃণমূল পর্যায়ে চিঠি পাঠিয়েছে প্রার্থীর তালিকা তৈরি করতে। কোন দল আবার নির্বাচনী এলাকা ঠিক করতে গঠন করেছে নির্বাচন কমিশনও। সংশ্লিষ্ট দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ধর্মভিত্তিক দলগুলো সাংগঠনিক ও জনপ্রিয়তা বিচার সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১০-২০টি আসনকেই টার্গেটে নিয়েছে। দলগুলোর নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচনের সময় নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। তবে ২০১৮ সালের প্রথমার্ধকে মাথায় রেখে প্রাথমিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তারা। দলগুলোর সূত্র অনুযায়ী, এককভাবে নির্বাচনের পরিকল্পনা নেই প্রায় কোন দলেরই। ব্যতিক্রম শুধু ইসলামী আন্দোলন। এই দলটির কোন নির্বাচনী জোটে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা কম। এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি বলেন, আদর্শ বিসর্জন দিয়ে কোন জোটে আমরা যাচ্ছি না। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের বলেন, আমরা নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছি। জেলায় জেলায় চিঠি পাঠিয়েছি তালিকা পাঠাতে। তালিকা হাতে পেলেই কাজ শুরু হবে পুরোদমে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জোটগত নির্বাচনে গেলে খেলাফত মজলিসের টার্গেট অন্তত তিনটি আসন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ২০ দলীয় জোটে একমাত্র কওমি ভিত্তিক শক্তিশালী দল। জোটগতভাবে নির্বাচনে গেলে অন্তত দুটি আসনে মনোনয়ন আশা করছেন দলটির নেতারা। ইসলামী ঐক্যজোটের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, তাদের প্রস্তুতি অন্তত ১২টি সংসদীয় আসনে। নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে খেলাফত আন্দোলনও। তরিকত ফেডারেশন যথারীতি আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোট থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী সংগঠন হিসেবে পরিচিত হেফাজতে ইসলামও আগামী নির্বাচনে প্রার্থী দিতে চায়। আলোচনা আছে, আওয়ামী লীগের কাছে তারা ২০টি আসন চেয়েছে। তবে এরশাদও বলছেন, নির্বাচনী মাঠ গরম করতে তার জোটেও আসতে পারে হেফাজতে ইসলাম।
×