ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

১০ হাজার একর জমির আবাদ নিয়ে শঙ্কা

চুয়াডাঙ্গায় বিএডিসির বোরো বীজ বিতরণেসিন্ডিকেট

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ২ ডিসেম্বর ২০১৭

চুয়াডাঙ্গায় বিএডিসির বোরো বীজ বিতরণেসিন্ডিকেট

নিজস্ব সংবাদদাতা, চুয়াডাঙ্গা, ১ ডিসেম্বর ॥ চুয়াডাঙ্গায় বিএডিসিতে বীজ বিতরণে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ১০ হাজার একর জমির বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কবে নাগাদ আবাদ শুরু হবে তা নিশ্চিত করতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। তবে এই ঘটনার জন্য চাষীরা বিএডিসির কর্মকর্তা ও নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন। জানা গেছে, বিএডিসির কন্ট্রাক্ট্র গ্রোয়ার্স জোন চুক্তিবদ্ধ চাষীদের মধ্যে গত সোমবার বোরো বীজ বিতরণের দিন ধার্য করেন। চাষীরা ধার্য দিনে বীজ সংগ্রহের জন্য এলে কর্মকর্তারা তাদের, পূর্ব বরাদ্দ অনুযায়ী বীজ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান। বরাদ্দের ৬৫ শতাংশ হারে বীজ নিতে হবে। এতে চাষীরা বেঁকে বসেন এবং উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ফলে, কন্ট্রাক্ট্র গ্রোয়ার্স জোনের বীজ বিতরণ কর্মসূচী শুরুতেই বাধাগ্রস্ত হয়। এদিকে কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স জোনে দীর্ঘদিন ধরে ৫ হাজার ৮০০ একর জমির অনুকূলে বীজ বরাদ্দ হয়ে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কথিত সিন্ডিকেট ও স্কিম ম্যানেজাররা ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে বরাদ্দের বেশিরভাগ ভাগবাটোয়ারা করে আসছেন। চাষীদের অভিযোগ, সিন্ডিকেটের সদস্যরা সারাবছর বিএডিসির সবকটি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করেন। গত বছর অতিরিক্ত ২ হাজার ৭০০ একর জমির অনুকূলে বরাদ্দের মধ্যে কন্ট্রান্ট্র গ্রোয়ার্স দফতরের কর্মকর্তারা ৯০০ এবং দুটি সিন্ডিকেটের সদস্যরা ৯০০ একর করে ভাগ বাটোয়ারা করে নেন। এ বছর অতিরিক্ত বরাদ্দ না এলে সিন্ডিকেটের সদস্যরা গতবারের মতোই বীজ দাবি করলে জটিলতার সৃষ্টি হয়। অপরদিকে চাষীদের স্বার্থ সংরক্ষণে গত মঙ্গলবার বিকেলে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়। কমিটির সদস্যরা ওইদিন কন্ট্রাক্ট্র গ্রোয়ার্সের উপ-পরিচালক মোর্শেদুল ইসলামসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক থেকে ১০ একর পর্যন্ত জমিতে আবাদকারী চাষীরা শতভাগ এবং তার অতিরিক্ত জমিতে আবাদকারী চাষীরা ৬৫ শতাংশ জমিতে চাষের জন্য বীজ পাবেন। কিন্ত, নতুন করে জটিলতা হওয়ায় তা ভেস্তে যায়। এদিকে চুয়াডাঙ্গা দৌলদিয়াড়স্থ বিএডিসি কন্ট্রাক্ট্র গ্রোয়ার্স ও বীজ গ্রহণ দফতরের সামনে সমবেত কৃষকদের অনেকেই অভিযোগ করে বলেছেন, নেতাদের নামে ৫০ টাকা, অফিস খরচ ৪২ টাকা ও সাংবাদিকদের নামে ৩ টাকা করে মোট ৯৫ টাকা হারে বস্তাপ্রতি কেটে নেয়া হয়। তারা আরও বলেন, এ হিসাবে গত মৌসুমের ৫৭ লাখ টাকাসহ বিগত মৌসুমগুলোর টাকা কাকে কাকে কত টাকা দেয়া হয়েছে তা প্রকাশ করতে হবে। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি আজাদ মালিতা জানান, চুয়াডাঙ্গায় বিএডিসি বীজ কেনা বেচা চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত কোন সাংবাদিককে টাকা পয়সা দেয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই। প্রেসক্লাবের সদস্যরা কোন অবৈধ টাকা গ্রহণ করেন না। কন্ট্রাক্ট্র গ্রোয়ার্স জোনের উপ-পরিচালক মোর্শেদুল ইসলাম বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত জানান। জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেন, নিয়ম মেনে কাজ করলে সহযোগিতা করা হবে। তিনি বলেন, কাগজ কলমে চাষী সেজে কন্ট্রাক্ট্র গ্রোয়াসের সুবিধা নেয়া নেতাদের তাড়িয়ে প্রকৃত কৃষকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৩ ডিসেম্বর থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে প্রকৃত চাষীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে বোরো ধান বীজ বিতরণ করা হবে। একই সঙ্গে লিপিবদ্ধ করা হবে কৃষকের পরিচয়। বীজসহ চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সুবিধা নিয়ে ধানের প্রদর্শনী খামারের পরিবর্তে বাজার থেকে ধান কিনে বীজ বলে চড়া দামে বিক্রির সুযোগও শক্ত হাতে বন্ধ করা হবে।
×