ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বদেশ রায়-এর কবিতা -বৃষ্টিতে ভেজেনি চাল

প্রকাশিত: ০৭:২৯, ১ ডিসেম্বর ২০১৭

স্বদেশ রায়-এর কবিতা -বৃষ্টিতে ভেজেনি চাল

স্বর্গের আগের স্টেশনে বসে আছি, এক হাঁটু কাদার ওপরে শরীর গিয়েছে অনেকখানি কাদায় ডুবে। মাথার ওপর অঝোরে ঝরছে বৃষ্টি, ছাতাগুলো কি এখনও সারি সারি আছে পশ্চিম দালানের বারান্দায়- বাবার চেয়ারে বাবা নেই, বাবা রিলিফের লাইনে দাঁড়িয়ে- তারও মাথায় ঢালছে বৃষ্টির পানি বরুণ দেবতা কলসি কাত করে। ছিন্নির মা এই বরুণ দেবতাকে বসতে দিত কাঁঠাল কাঠের পিঁড়িটি তুলসী তলায় উল্টো করে দিয়ে। বাবা শুধু একা নয়, লাইনে যারা কারও নেই কোন তাড়া, বৃষ্টি না থামলে চাল নেবে না কেউ, ভিজে যাবে পনেরো দিনের খোরাক। বাবার খামার বাড়িতে গোলার সারির ভেতর এখনও কি বাঘডাসা বাসা বাঁধে, গোলা ঘরের শত শত পায়রা এক দিনে খায় পনেরো দিনের রিলিফের চাল। পায়রারা কোনদিন ভেজেনি বৃষ্টিতে। বৃষ্টি হলেই গলা ফুলিয়ে ওরা কেবল গাইত বাক বাকুম, বাক বাকুম। এক হাঁটু কাদায় ডুবে বসে আছি, মাথার ওপর বৃষ্টি, কোথাও শুনি না বাক বাকুম, বাক বাকুম। তাঁবু থেকে বের হতেই মা বলেছিল, আজ তোমাদের কী যে হবে তা কেবল ঠাকুর জানেন। মার এই ঠাকুরকে দেখিনি কোন দিন, আকাশে কোথায় নাকি তার বাড়ি আছে। মার জন্য সে অনেক কিছু করতে পারে। মার হাত ধরে যখন চল্লিশ দিনে গুলতির বিল পাড়ি দেই, দূরে মিলিটারির গাড়ির শব্দ, মা ডেকেছিল অনেকবার তার ঠাকুরকে। আসেনি আকাশ হতে নেমে। তখন আকাশে ছিল তীব্র রোদ আর রাতের অন্ধকার। আজও আবার অন্ধকার নেমে এলো, বৃষ্টি গিয়েছে থেমে- চালের বস্তা বাবার মাথায় আমি তার বা হাত ধরা, দূরে দেখা যায় কলকাতা শহরের আলো- স্বর্গের থেকে আসা উজ্জ্বল দেবতার শরীরের মতো তার রং। মনে পড়ে বাবার কাপড়ে কলকাতা থেকে আনা সুগন্ধী আর পেছনে ব্যাগ নিয়ে হাঁটছে মদন চাকর। বাবার মাথায় চালের বস্তা, তার বাঁ হাত ধরে আমরা অন্ধকার পাড়ি দিয়ে এসে গেছি তাঁবুর সামনে।
×