ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুরে আসুন বার আউলিয়ার শহর চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ১ ডিসেম্বর ২০১৭

ঘুরে আসুন বার আউলিয়ার শহর চট্টগ্রাম

পাহাড়, সমুদ্র, উপত্যকা, বন-বনানী আর বন্দর ঘেরা অপূর্ব শহর বিশ্বে খুব একটা নেই বললেই চলে! প্রিয় পাঠক, আমরা আজ আছি বন্দর নগরী চট্টগ্রাম জেলাকে নিয়ে। চট্টগ্রাম একটি বিভাগীয় জেলা।বাংলাদেশের ৮ টি বিভাগের মধ্যে অন্যতম। চট্টগ্রামের মতো ভৌগোলিক বৈচিত্র্য বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। অপূর্ব এক জেলা শহর চট্টগ্রাম। ১৬৬৬ সালে চট্টগ্রাম জেলা গঠিত হয়। ১৮৬০ সালে পার্বত্য এলাকা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা গঠন করা হয়। পরবর্তীতে এ জেলা ভেঙ্গে কক্সবাজার জেলা গঠিত হয়। চট্টগ্রাম জেলার নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানা মতভেদ। পণ্ডিত বার্নোলির মতে, আরবি ‘শ্যাত (খণ্ড)’ অর্থ বদ্বীপ, গাঙ্গ অর্থ গঙ্গা নদী এ থেকে চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি।আবার কেউ, কেউ মনে করেন ত্রয়োদশ শতাব্দীতে উক্ত অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের জন্য বার জন আউলিয়া এসেছিলেন, তাঁরা একটি চেরাগ জ¦ালিয়ে উঁচু যায়গায় স্থাপন করেছিলেন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ‘চাটি’ অর্থ বাতি বা চেরাগ এবং ‘গাঁও’ অর্থ গ্রাম। এ থেকে, নাম হয় ‘চাটিগাঁও’। এছাড়া ও অসংখ্য মতভেদ রয়েছে চট্টগ্রামের নামকরণে। চট্টগ্রামে রয়েছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, ফয়েজ লেক, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, হযরত শাহ আমানত (রঃ) এর মাজার। হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) এর দরগাহ, চন্দনাথ পাহাড় (সীতাকুন্ড), বাঁশখালী ইকোপার্ক, পারকি সমুদ্র সৈকত, শঙ্খ নদী রয়েছে ঐতিহাসিক লাল দীঘি ময়দান। চট্টগ্রামে জন্মেছেন এমন প্রখ্যাত ব্যক্তিদের নামের তলিকা অনেক লম্বা। প্রিয় পাঠক, আজ আমরা চট্টগ্রামের কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের গল্প আপনাদের সামনে তুলে ধরব। ফয়েজ লেক ফয়েজ লেক একটি কৃত্রিম হ্রদ। এটি চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেলস্টেশন এর অদূরে খুলশি এলাকায় অবস্থিত। ১৯২৪ সালে অসম বেঙ্গল রেল্ওয়ে কর্তৃপক্ষ এর তত্ত্বাবধানে খনন করা হয় এবং সে সময় এটি পাহাড়তলী লেক হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে ইংরেজ রেল প্রকৌশলী ফয়-এর নামানুসারে নামকরণ করা হয় ফয়েজ লেক। বর্তমানে এটির মালিকানা বাংলাদেশ রেলওয়ে। অসংখ্য দর্শনার্থীদের মিলনমেলায় স্থানটি পরিপূর্ণ হয় প্রতিনিয়ত। বর্তমানে হ্রদটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কনকর্ড একটি বিনোদন পার্ক স্থাপন করেছে যেখানে দর্শনার্থীদের জন্য লেকে নৌকা ভ্রমণ, রেস্তোরাঁ, ট্র্যাকিং এবং কনসার্ট-এর আয়োজন করা হয়ে থাকে।স্থানটিতে বিরল প্রজাতির নানা পাখি দেখা যায়। ফয়েজ লেকের আশপাশের মনরোম পরিবেশ সেখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের মনে প্রশান্তির ছোঁয়া দেয়। ফয়েজ লেকের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য উপভোগে প্রতি বছর দেশী-বিদেশী পর্যটকদের মিলনমেলা লক্ষ্য করা যায়। চট্টগ্রাম শহর থেকে ৮ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত কৃত্রিম লেক ফয়েজ লেক অবস্থিত। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রাম শহর প্রায় ১৪ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত একটি সমুদ্র সৈকত। এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত।জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র এটি। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এটি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও পরে এটি বেড়ি বাঁধ দেয়ার মাধ্যমে পুনরায় আবার পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করা হয়। পতেঙ্গার সন্নিকটে রয়েছে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও নৌবাহীনির ঘাটি বি এন এস ঈসা খাঁন। রাতের বেলা এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই ভাল। স্থানীয় লোকদের বরাত দিয়ে জানতে পারি এখানে মুখরোচক খাবার পাওয়া যায়। এখানকার একটি জনপ্রিয় খাবার হলো, মসলাযুক্ত কাঁকড়া ভাজা। পুরো সৈকত জুড়ে রয়েছে সারিবদ্ধ পাম গাছ। প্রচুর মাছ ধরার নৌকা সারিবদ্ধভাবে নোঙর করা থাকে। পর্যটকরা সেখানে স্পীডবোটে করে ঘুরতে ও পারবেন। অধিকাংশ পর্যটক পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে আসেন সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য। বায়োজীদ বোস্তামীর মাজার বায়োজীদ বোস্তামীর মাজার চট্টগ্রাম জেলার নাসিরাবাদের একটি পাহাড়ের ওপর অবস্থিত মাজার। ইরানের বিখ্যাত পার্সিয়ান সুফি বায়েজিদ বোস্তামীর নামে গড়ে ওঠা এই মাজার চট্টগ্রাম তথা দেশ বিদেশী ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় একটি পর্যটক স্থান। এখানে প্রচুর লোকের সমাগম হয়। বায়োজিদ বোস্তামীর মাজারের পাদদেশে রয়েছে একটি সুবিশাল দীঘি। দীঘিটিতে রয়েছে বায়োজিদ বোস্তামীর সুবিখ্যাত কাছিম ও গজার মাছ। বোস্তামীর কাছিম নাকি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি বিরল প্রজাতির। দীঘিটিতে প্রায় দেড়শ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ কচ্ছপের আবাস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। মাজারের ভক্তকূল এবং আঞ্চলিক মানুষের মুখ থেকে জানা যায়, মাজারটি প্রতিষ্ঠাকালে এই অঞ্চলে প্রচুর দুষ্ট জ¦ীন ্ও পাপীষ্ট আত্মার পদচারণা ছিল। বায়োজিদ তাঁর এই ভ্রমণকালে এই সব দুষ্ট আত্মাকে শাস্তিস্বরূপ কাছিমে পরিণত করেন বলে ধারণা করা হয়।
×