ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মমতাময়ী নারী

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ১ ডিসেম্বর ২০১৭

মমতাময়ী নারী

বিভিন্ন শ্রেণীবিভাজনে নারীকে আমরা আঁকড়ে থাকি সম্পর্কের বাস্তবতায়। তারাই যে প্রিয়। কখনও ঘরের বোনটি অপেক্ষায় পার করে সময়, ভাইটি তার কখন ফিরবে ঘরে। দিনের ক্লান্তি মুছে যায় ভাইয়ের তার বোনের সামনে গেলে। সাহিত্য-দর্শন যেমন শান্ত করে মানুষের খারাপ প্রবৃত্তিগুলোকে। তেমনি করে একজন ভাইয়ের কাছেও তার সাহিত্য, তার দর্শন হিসেবে কাজ করে বোন নারী। সামাজিক অবস্থানে আচরণের সুষম বণ্টন কিভাবে করতে হয়, তার শিক্ষাও দেন কোন না কোন বড় বোন তার ছোট ভাইটিকে। কথা বলতে শেখায় মমতার আভাস দিয়ে প্রসেনজিৎ হালদার শুধু কথায় নয়, এ কথা এখন সত্য যে, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’। ইতিহাসের পাতায় নারীর বীরত্ব গাথা কম থাকলেও এ সময়ের নারীরা যে অনেক এগিয়ে, তা চোখ-কান খোলা রাখলেই দেখা যায়, বোঝা যায়, করা যায় অনুধাবন। জীবনের প্রতিটি কর্মক্ষেত্রেই এখন নারীদের সমান বিচরণ পুরুষের পাশাপাশি। শুধু সংসার যাপন নয়, সকল ক্ষেত্রেই নারীদের রয়েছে অবাধে যোগাযোগ। যার প্রয়াসে আজকের নারী এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। যতখানি মঙ্গল এই পৃথিবীর ভূমিতে তার প্রায় সবখানেই জড়িত আছে নারীর কৃতিত্ব। যুগে যুগে সাহিত্যের পাতায় পাতায় জড়িছে আছে তাঁরা। হাওয়া থেকে শতরূপা, পদ্মাবতী থেকে হেলেন, যাদের দিয়ে শুরু মানব সভ্যতার তাঁরাই কালে কালে সভ্যতার ধ্বংস করেছে সৃষ্টি করেছে আজকের আধুনিক সভ্যতা। এ নারীই বিবর্তনের দাবি নিয়ে এগিয়ে চলেছে সময়ের হাত ধরে সমগ্র গোষ্ঠীর স্বার্থে, মানবতার স্বার্থে। বেগম রোকেয়া-মাদার তেরেসা উৎসর্গ করেছে তাদের সমগ্র জীবন। তবুও সময় সময় কত গ্লানি বুকে বাঁধে আমারই মা-বোন, যারা নারী। জন্ম দিয়েছে আমায়-তোমায়। দিন শেষে যে আদর-ভালবাসায় ভরিয়ে বুকে আগলে নেয় সে একজন নারী। কখনও সে জননী, কখনও সে বোন, কখনও আবার অর্ধাঙ্গ। তাদের জন্মগত দায়িত্বই যেন ভালবাসা। যদিও তারা ক্ষেত্র বিশেষে দায়িত্বশীলা কিন্তু তাদের ছলা-কলাও যেন থাকে সকল দর্শনের উর্ধে। এমনও সময় মানুষের জীবনে আসে যখন বাস্তবতাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে প্রয়োজন হয় প্রেরণার। যিনি এ কাজ করেন, মানে অনুপ্রেরণা দেন, প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তিনি হন জননী, হন মাতা। তিনিই এ জগত সংসারে দৃশ্যমান বিধাতা। জীবনে চলতে চলতে যত ভাল, যত উন্নতি তা কোন না কোন মায়ের সন্তানরাই করে চলেছে প্রতিনিয়ত। ব্যতিক্রম যেগুলো হয় তাও সেই জননীরই কর্মফল। সর্বোপরি, মা-ই সবচেয়ে বড় প্রেরণার উৎস। ‘একটু ধৈর্য ধর’, ‘ভাল কাজ কর’, ‘খারাপ কাজ করতে হয় না’ ইত্যাদি বক্তব্যগুলো একজন মায়ের উক্তি, যিনি সারা জীবন নারী হিসেবে শুধু মাঙ্গলিক চিন্তাই করে গেছেন। প্রতিদানে তিনি কখনই কিছু দাবি করেননি একটুখানি সুখ ব্যতীত। সন্তানের মুখে একটুখানি হাসিই যেন তার ইহজগতে আকাক্সিক্ষত চাহিদা। বিষয় যাই হোক না কেন, সেটা অবশ্যই ভাল হতে হবে, নৈতিক হতে হবেÑ এই তো সন্তানের প্রতি মায়ের চাহিদা। বিভিন্ন শ্রেণীবিভাজনে নারীকে আমরা আঁকড়ে থাকি সম্পর্কের বাস্তবতায়। তারাই যে প্রিয়। কখনও ঘরের বোনটি অপেক্ষায় পার করে সময়, ভাইটি তার কখন ফিরবে ঘরে। দিনের ক্লান্তি মুছে যায় ভাইয়ের তার বোনের সামনে গেলে। সাহিত্য-দর্শন যেমন শান্ত করে মানুষের খারাপ প্রবৃত্তিগুলোকে। তেমনি করে একজন ভাইয়ের কাছেও তার সাহিত্য, তার দর্শন হিসেবে কাজ করে বোনরূপী নারী। সামাজিক অবস্থানে আচরণের সুষম বণ্টন কিভাবে করতে হয়, তার শিক্ষাও দেন কোন না কোন বড় বোন তার ছোট ভাইটিকে। কথা বলতে শেখায় মমতার আভাস দিয়ে। মানুষকে মানসিকভাবে ক্ষতি করার যে প্রবণতা দৃশ্যমান হয় শিল্প-সাহিত্যের জ্ঞানের অভাবে, সেখানে একজন বোনই তার ভাইকে গড়ে তুলতে পারে জ্ঞানের প্রতিভা দিয়ে। তবে অবশ্যই সে বোনটিকেও হতে হবে ইহজাগতিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার মহৎ সৃষ্টি ‘কালান্তর’ প্রবন্ধ সংকলনে নারী বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লিপিবদ্ধ করে গেছেন। সেখানে তিনি এমনও বলেছেন, ‘গৃহিণী রূপে’ জননীরূপে মেয়েদের যে কাজ সে তার আপন কাজ, সে তার স্বভাবসঙ্গত।’ প্রতিটি প্রবন্ধের প্রতিটি লাইনেই নিহিত থাকে ভিন্নধর্মী বিশ্লেষণ। যার কারণে দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পরও উক্তি বিশ্লেষণে মেলে হরেক রকম প্রতিক্রিয়া। সেকালের নারী জীবনচরিত আর একালে তাদের জীবনবিধান যেন পরিবর্তনের সিড়ি। যে সিড়ি ধরে এগিয়ে গেলে দেখা মেলে নারীর নিজের কাজ, দৃশ্যমান হয় তার স্বভাব। গৃহিণীরূপে এই নারী বর্তমানে যেমন ক্ষমতার অধিকারিণী; জননীর রূপে, অর্ধাঙ্গিনীর রূপে সে আরও প্রখর, আরও প্রবল। ষোলো কলায় পূর্ণ প্রতিটি নারী তার সমগ্র জীবন পার করেও উন্মোচিত করতে পারে না তার সকল দর্শন। পারলে হয়ত ব্রহ্মা-ে কলা ও দর্শন শাস্ত্রে আরও অধ্যায়ের যোগ হতে পারত। সময় নিয়ে ভাবুন, আপনি আমি আমরা যে সকল নারীদের সঙ্গে জীবনধারণ করে আছি, তাদের কতটুকু আমরা উদ্ঘাটন করতে পারছি। খুব ঘনিষ্ঠসূত্রে কাছের এক লোকের মাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম তার অর্ধাঙ্গিনীর সম্বন্ধে। সে তার ৬ বছর দাম্পত্যজীবনে মাত্র একটি ‘কলা’র আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন। এক শব্দে সে ব্যাখ্যা দেয় তার নারীকে নিয়ে। শব্দটি ‘রহস্যময়’। তার দাম্পত্যজীবন স্থায়ী ছিল মাত্র ৬ বছর, বেঁচে থাকলে হয়ত সে তার মাঝে অবশ্যই নতুন কিছু খুঁজে পেত। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি, কারণ সে মারা গিয়েছিল। ওই ৬ বছরে তার উপলব্ধি, কোন পুরুষ যদি নারীর সকল অংশ জানতে চায়, মানে শারীরিক ও মানসিক, তবে তার ৬ গুণ ষোলো মানে ছিয়ানব্বই বছর সময় লাগবে ‘কলাগুলো’ উদ্ঘাটন করতে। তবে এগুলোর ব্যাখ্যা নাকি আরও সুবিশাল। যা সারা জীবনেও বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। এমনই ছিল সে লোকের মন্তব্য তার অর্ধাঙ্গীনীর সম্পর্কে। তবুও জীবন সৃষ্টির লক্ষ্যে নারীরা অবতীর্ণ হয় শিকারি হয়ে, যেখানে পুরুষরাই তাদের শিকার। এ কথা সাধারণের নয়, বিশ্ব বিখ্যাত প-িত-দার্শনিকের। তাদের মতে, জীবনের চালিকা শক্তি যার শরীরে বহমান সেই নারী। প্রাণী জগতে, বিশেষ করে মানব জগতে যার প্রতি কৃতজ্ঞ সবাই, যে রক্ষা করে মানবের ভারসাম্য- সেই নারী। নতুন জীবন আনে পৃথিবীতে, সজীব করে প্রকৃতি। তাই তো বলি, ‘হে নারী, তুমি শুধু নারীই নও, তুমিই জগত ধাত্রী।’ লেখক : প্রসেনজিৎ হালদার
×