ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয়ের মাস

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১ ডিসেম্বর ২০১৭

বিজয়ের মাস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘যারা এ বাংলার জন্য যুদ্ধ করেছিল/ জয়বাংলা বলে/ তাদেরকে এসো আমরা স্মরণ করি/ এই বিজয় দিবসে/ এই স্মরণ দিবসে।’ বছর ঘুরে আবার ফিরে এসেছে বিজয়ের মাস। আজ ১ ডিসেম্বর। আজকের দিনটিতেই সূচনা ঘটতে যাচ্ছে বাঙালীর কাক্সিক্ষত মুক্তি সংগ্রামের বিজয় অর্জনের মাস ডিসেম্বরের। পূর্তি হলো স্বাধীনতার ৪৬ বছর। ডিসেম্বর মাস রাষ্ট্র পাওয়ার মাস, কষ্ট পাওয়ার মাস। বাঙালী জাতির একটি নিজস্ব রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাস ডিসেম্বর। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তার এ দেশীয় দোসরদের পরাস্ত করার মাস। আবার ৩০ লাখ মানুষ হারানোর দুঃসহ কষ্টের মাস। একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াকু বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধ এ মাসে বিজয়ের সুমহান মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছিল। এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এসেছে বিজয়ের মাস। যে একটি মাত্র ঘোষণা নিরস্ত্র বাঙালী জাতি সশস্ত্র জাতিতে পরিণত হয়েছিল, মাত্র ১৯ মিনিটের বজ্রকঠিন ভাষণে বাঙালী জাতি পাক হানাদারদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ছিনিয়ে এনেছিল হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন স্বাধীনতার লাল সূর্য- সেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চে ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ’৭৫ পরবর্তী দীর্ঘ ২১টি বছর যে অমিততেজী ভাষণটি কার্যত নিষিদ্ধ করে রেখেছিল ক্ষমতা দখলকারীরা, সেই ভাষণটিই বিশ্ব স্বীকৃতি পেয়েছে। এ অর্জনে গোটা বাঙালী জাতি এখন উদ্বেলিত। ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের পরাজিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে বিনির্মাণের দীপ্ত শপথে বলিয়ান। এছাড়া ইতোমধ্যে একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বেশিরভাগের বিচার কাজ শেষ হয়েছে, একাত্তরের বাঘা বাঘা গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। কারাগারের ফাঁসির অন্ধকারপ্রকোষ্ঠে মৃত্যুর প্রহর গুনছে একাত্তরের কয়েক ঘাতক যুদ্ধাপরাধী। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সর্বোচ্চ দ-প্রাপ্ত ছয় যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি এ পর্যন্ত কার্যকর করা হয়েছে। আরও অনেকের রায় কার্যকরের অপেক্ষায়। তাই এবারের বিজয়ের মাস শুরু হয়েছে ভিন্ন মাত্রায়। বহু কাক্সিক্ষত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করার মাধ্যমে গত ৪৫ বছরের লজ্জা ঘোচানোয় সারা জাতি এখন উদ্বেলিত। মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিক্ষরা সেসব দিনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র যুগিয়েছিল মুক্তির লড়াইয়ের অনিঃশেষ প্রেরণা। সে সময়ের গানে গানে বিধৃত আছে লাঞ্ছিত-নিপীড়িত, মুক্তিপাগল সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর প্রাণের উচ্ছ্বাস, ত্যাগ, লড়াই ও মুক্তির মন্ত্র। উনিশ শ’ একাত্তরে দীর্ঘ ন’টি মাস পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালীর মৃত্যুপণ জনযুদ্ধ শেষে অর্জিত হয়েছিল প্রত্যাশিত বিজয়। লাখো শহীদের আত্মদান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী অবদান, ত্যাগ এবং অসংখ্য মা-বোনের মহামূল্যবান সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ নিজের স্থায়ী আসন অর্জন করে নেয় বিশ্বমানচিত্রে। তাই কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি এই ডিসেম্বর মাসজুড়ে স্মরণ করবে লাখো শহীদকে। তাঁদের অপূর্ণ স্বপ্ন এবং প্রত্যাশা বাস্তবায়নের শপথে নতুন করে উজ্জীবিত হবে। জীবনের গভীরতম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ৪৬ বছর পার করা এ দেশের মানুষের কাছে এবারের ডিসেম্বর শুধু বছর-পরিক্রমায় আরও একটি মাস নয়; এবারের ডিসেম্বর নতুন ভাবনা ও চেতনা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। যে দলটি নেতৃত্ব দিয়ে এ দেশটিকে স্বাধীন করেছিল, সেই ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ মহাবিজয় নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রায় চার বছর শেষ করেছে। সর্বত্রই এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে দীপ্ত পথ চলা। মাত্র এক বছর পরই নির্বাচন। তাই এবার নতুন ভাবনা স্বপ্ন আর বাস্তবতাকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়ার শপথ নিয়েই বাঙালী জাতি মাসব্যাপী উদযাপন করবে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। স্বাধীনতাপ্রিয় বাঙালী জাতি আজ নতুন আশায় বুক বেঁধেছে, ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতাকে অর্থপূর্ণ করে তুলতে দীর্ঘ পথচলায় দুর্নীতি-অপশাসন ও স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির মতো হাজারো জঞ্জাল ভরে যাওয়া স্বপ্নের জাল ঝেড়ে পরিষ্কার করার সময় এসেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকরের মধ্যে দিয়ে জাতি অভিশাপমুক্ত হয়েছে। একাত্তরের ক্ষতগুলোকে সারিয়ে তোলা বা রোধ করার এখনই সময়। অচিরেই যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীমুক্ত বাংলাদেশ দেখতেই এখন অধির অপেক্ষা দেশের কোটি কোটি মানুষের। এ কারণেই আগামী নির্বাচনেও একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের আবারও পরাজিত করে স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণের চলমান অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার দীপ্ত শপথে বলিয়ান হচ্ছে দেশের মানুষ। মুক্তিযোদ্ধা আর শহীদদের পরিবারগুলো রাষ্ট্রের দুয়ারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে ঘুরেছে ৪০ বছর ধরে। শহীদদের আত্মার শান্তির জন্য এবং আজও যাঁরা বিভীষিকাময় স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন, তাঁদের বিচারের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। সেই দায়িত্ব পালন করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তাই দেশের মানুষ আশায় বুক বেঁধেছে, বর্ষ-পরিক্রমায় ফিরে আসা এবারের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বাঙালী জাতি সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে আবারও পরাজিত করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক শোষণমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার নতুন লড়াই শুরু হবে। মহান বিজয়ের মাস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য এবং আলোর মিছিলের মাধ্যমে কর্মসূচী শুরু করেছে। মুক্তিযোদ্ধা দিবস বাস্তবায়ন পরিষদ ডিসেম্বরের প্রথম দিনটি ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে পালন করবে।
×