ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রাবাড়ী থেকে দুই রোহিঙ্গা নারী ও এক শিশু উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১ ডিসেম্বর ২০১৭

যাত্রাবাড়ী থেকে দুই রোহিঙ্গা নারী ও এক শিশু উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে চলমান অভিযানে দুই রোহিঙ্গা নারী ও এক শিশু উদ্ধার হয়েছে। আটক হয়েছে দুই দেশীয় দালাল। উদ্ধারকৃত দুই নারী ও শিশুকে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ এবং আটককৃত দালালদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান আরও বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর ছয়টার দিকে র‌্যাব-১০ ও র‌্যাব সদর দফতরের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন মোখলেছুর রহমানের বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানে ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় রোহিঙ্গা শিশু শফিকা (৬) ও তার মা রোহিঙ্গা নারী সেতারা বেগম (২৫)। সেতারা বেগমের স্বামীর নাম শাহআলম। বাড়ি তিশাপুরিকা, বালুখালী, থানা-বুচিদং, মিয়ানমার। অপর রোহিঙ্গা নারী জাহেদা বেগম (১৬)। তার স্বামীর নাম সলিমুল্লাহ। পিতার নাম মৃত সাইফুল্লাহ। গ্রাম হাসুতারা (করিয়াবিল), মিয়ানমার। ওই বাড়ি থেকে আটক হয় রাজু মোল্লা (৪৫)। তার পিতার নাম মৃত মালেক মোল্লা। গ্রাম আমগ্রাম (মঠবাড়ি), থানা-রাজৈর, জেলা- মাদারীপুর। তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জের মুহুরীপট্টির নাজিরের বাড়ির ভাড়াটিয়া। অপরজন মোখলেছুর রহমান (৬৫)। পিতার নাম মৃত উজির আহম্মদ। গ্রাম করিহাটি, থানা- চাটখিল, জেলা-নোয়াখালী। তিনি ডেমরার সাইনবোর্ড এলাকার নিউ ডগাইরের মাহমুদ নগর এলাকার একটি বাড়িতে বসবাস করতেন। র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ গাউসুল আজম রোহিঙ্গা নারী সেতারা বেগম ও তার ৬ বছরের কন্যা সন্তান শফিকাকে বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এবং জাহেদা বেগমকে কক্সবাজারের জামতলী ক্যাম্পে প্রেরণের নির্দেশনা দেন। আর গ্রেফতারকৃত দালালদের মধ্যে রাজু মোল্লাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদ- এবং মোখলেছুর রহমানকে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদ- দেন। র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোঃ শাহাবুদ্দিন খান কাওরানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সম্প্রতি মিয়ানমারের বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিক দেশের টেকনাফ ও বান্দরবনসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশ সরকার আশ্রয় দেয়। তাদের টেকনাফের কয়েকটি অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। বিপুলসংখ্যক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকরা যাতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে এজন্য সরকার বেশ কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করে। রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জোরালো অভিযান চালাচ্ছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সহিংসতা শুরুর পর গত ৩ সেপ্টেম্বর সেতারা বেগম ও জাহেদা বেগমের পরিবার অবৈধ পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সেতারা বেগমের ছোট ভাই সলিমুল্লাহ ৩ বছর আগে মিয়ানমার থেকে অবৈধ পথে মালয়েশিয়ায় গমন করে। মাস ছয়েক আগে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সলিমুল্লাহর সঙ্গে জাহেদা বেগমের বিয়ে হয়। এরপর থেকেই জাহেদা বেগম সেতারার পরিবারের সঙ্গেই বসবাস করছে। বাংলাদেশে প্রবেশের পর তারা প্রথমে টেকনাফ উপজেলার সোয়ানখালী নামক স্থানে আশ্রয় নিয়েছিল। পরবর্তীতে তারা কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করতে থাকে। সেখানকার স্থানীয় হোটেলে সেতারা বেগম রান্নার কাজ করত। আটক দালাল রাজু মোল্লার ভাতিজা রফিকুল ইসলাম গত ৩ বছর যাবত জাহেদার স্বামী সলিমুল্লাহর সঙ্গে মালয়েশিয়ায় বসবাস করেন। সেখানেই তাদের পরিচয়। সলিমুল্লাহর কথামতো রাজু মোল্লা সলিমুল্লাহর বোন সেতারা বেগম ও স্ত্রী জাহেদা বেগমকে মালয়েশিয়া পাঠানোর চেষ্টা করছিল। এজন্য বাংলাদেশী পাসপোর্ট করতে কেরানীগঞ্জ মুহুরী পট্টিতে নাজিরের বাড়িতে যেতে বলে। এ সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ জাহেদার স্বামী সলিমুল্লাহ মালয়েশিয়া থেকে পাঠিয়ে আসছিলেন। গত ২৫ নবেম্বর জাহেদা বেগম, সেতারা বেগম ও সেতারার ৬ বছরের কন্যা সন্তান নিয়ে রাজু মোল্লার কেরানীগঞ্জের বাসায় গিয়ে অবস্থান করতে থাকে। গত ২৮ নবেম্বর দুপুরে রাজু মোল্লা সেতারা ও জাহেদাকে কেরানীগঞ্জে নিয়ে দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট করার চেষ্টা করছিল।
×