ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হাজিরা না দেয়ায় খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১ ডিসেম্বর ২০১৭

হাজিরা না দেয়ায় খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানিতে হাজির না হওয়ায় বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আবারও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোঃ আখতারুজ্জামান পরোয়ানা জারির এই আদেশ দিয়ে খালেদার আত্মপক্ষ সমর্থনে শুনানি এখানেই শেষ করেন এবং বিচারিক কার্যক্রমের পরবর্তী ধাপে যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য ৫, ৬ ও ৭ ডিসেম্বর দিন ঠিক করে দেন বলে বিএনপি নেত্রীর অন্যতম আইনজীবী নুরুজ্জামান তপন জানান। খালেদার আরেক আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘আদালত সরকারের নির্দেশে এই নজিরবিহীন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। এ রকম হলে কীভাবে সুবিচার পাওয়া যাবে।’ এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দেন। তার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ অভিযোগ গঠন করে খালেদাসহ ছয় আসামির বিচার শুরু করেন। আর জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে আসা তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় অন্য মামলাটি হয়। তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চার জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরের বছরের ১৯ মার্চ শুরু হয় বিচার। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার পর খালেদা জিয়া নির্ধারিত তারিখে আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানিতে হাজির না হওয়ায় বিচারক ১২ অক্টোবর দুই মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর দেশে ফিরে বিএনপি চেয়ারপার্সন গত ১৯ অক্টোবর আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। ১৯ অক্টোবর খালেদা আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দিতে শুরু করেন এবং গত ছয় সপ্তাহ ধরে প্রতি বৃহস্পতিবার সেই শুনানি চলছিল। খালেদার আইনজীবীরা স্থায়ী জামিনের আবেদন করলেও তা মঞ্জুর না করে বিচারক পরবর্তী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জামিন দিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যে দিয়ে খালেদা জিয়াকে হয়রানি করা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি নেতারা বুধবার মানবন্ধনও করেন। বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে সপ্তম দিনের মতো বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল খালেদা জিয়ার। কিন্তু তিনি নিজে না গিয়ে হরতালে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে সময়ের আবেদন পাঠান। সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ডাকে হরতাল হচ্ছে। সেজন্য নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আদালতের কাছে সময়ের আবেদন করে জানান, ওই কর্মসূচীর মধ্যে আদালতে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আদালত বিষয়টি আমলে না নিয়ে সরকারের নির্দেশে এই আদেশ দিয়েছে বলে আমরা মনে করি। এই আইনজীবী দাবি করেন, হরতাল শেষে দুপুরের পর খালেদা জিয়ার আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু আদালত পরোয়ানা জারি করায় তা আর সম্ভব হচ্ছে না। মামলার পরবর্তী তারিখে বিএনপি চেয়ারপার্সন আদালতে যাবেন বলে জানান তার আইনজীবী। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘হরতাল চলছে বলে খালেদা জিয়া আদালতে আসেননি। আমি বলেছি, হরতাল সেভাবে হচ্ছে না। আর হরতাল তো ২টা পর্যন্ত। তিনি চাইলেই আসতে পারতেন।’ অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রথম দিন ১৯ অক্টোবর খালেদা জিয়া দাবি করেন, এতিমদের জন্য আসা একটি টাকাও তসরুপ বা অপচয় করা হয়নি, তা ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে। ২৬ অক্টোবর তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে এ মামলা ‘ভুয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। ২ নবেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থন করে তৃতীয় দিনে খালেদা বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে তাকে ‘সরাতে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার নীলনক্সা’ বাস্তবায়ন করছে ক্ষমতাসীনরা। আর ১১ নবেম্বর বলেন, বাংলাদেশে বিচারকরা স্বাধীনভাবে আইন মেনে বিচার করতে পারেন কি না, তার এ মামলার রায়েই তার প্রমাণ আসবে। দেশে বিচার ব্যবস্থার বর্তমান পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচার পাবেন কি না- তা নিয়ে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন ১৬ নবেম্বর। সর্বশেষ ২৩ নবেম্বর তিনি এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের দুদকে নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ওইদিনই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদার আত্মপক্ষ সমর্থন শুরু হয়। প্রথম দিনের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি নিজেকে ‘সম্পূর্ণ নির্দোষ’ দাবি করেন। আত্মপক্ষ সমর্থন অসমাপ্ত রেখেই আদালত যুক্তিতর্কের দিন ঠিক করে খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরী সংবাদ সম্মেলন ডাকার কথা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে দলটি। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এ ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন আর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
×