ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্যাস সংযোগ না থাকায় উৎপাদন ব্যাহত

সিলেট বিসিক শিল্প নগরীর বেহাল দশা

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১ ডিসেম্বর ২০১৭

সিলেট বিসিক শিল্প নগরীর বেহাল দশা

সালাম মশরুর সিলেট অফিস ॥ নানান সমস্যায় জর্জরিত সিলেট বিসিক শিল্প নগরীতে উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এখানে ৭২ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিজেদের পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ৬৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বিসিকের শর্ত পূরণ করতে না পারায় বাকি ৭টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে উৎপাদনশীল শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে তাদের পণ্য উৎপাদন করতে গিয়ে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পর্যাপ্ত বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ, পানি নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে তাদের উৎপাদন ক্ষমতার শতভাগ কাজে লাগাতে পারছে না। বিসিক ও পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, এখানকার বড় সমস্যা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকা। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বিসিকের ভেতরেই পানি জমে বিষাক্ত হয়ে ওঠে। দিন দিন এই সমস্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। এছাড়া শিল্পকারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন বাধ্যতামূলক। তবে গোটাটিকর বিসিকের একটি কারখানারও নেই তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ফলে বিভিন্ন কারখানার বর্জ্যে ভরাট হয়ে থাকে বিসিক এলাকার ড্রেন-সড়ক। এসব বর্জ্যরে দুর্গন্ধে পুরো শিল্প নগরীই পরিণত হয়েছে অনেকটা ভাগাড়ে। শিল্প কারখানাগুলোর অপরিশোধিত তরল বর্জ্যেের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। গোটাটিকর বিসিক শিল্পনগরী কর্মকর্তা শেখ ফজলল হক বলেন, এই বিসিক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালে। তৎকালীন অবস্থা বিবেচনায় এখানকার অবকাঠামো গড়ে ওঠেছিল। কিন্তু এখন শিল্প কারখানার প্লট থেকে সড়ক অনেক উঁচু হয়ে গেছে। তাছাড়া তখন বিসিকের পানি ড্রেনের মাধ্যমে পাশের হাওরে গিয়ে পড়ত। এখন হাওর ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে ওঠেছে। ফলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমাদের যথেষ্ট ড্রেন আছে। কিন্তু পানি যেতে না পারায় সে পানি ড্রেনের মধ্যেই আটকা পড়ছে। বিশেষ করে বৃষ্টির মৌসুমে ড্রেনের পানিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা দিন দিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সড়ক ও জনপথকে অনুরোধ করেছি, তারা তাদের জায়গায় পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি ড্রেন নির্মাণ করে দেয়ার জন্য। তবে ইটিপির বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে এমন কোন কোম্পানি নেই যে ইটিপি করা লাগবে। মাত্র দুটি কোম্পানি ফিজা ও ফেয়ার ভিউ ইন্ডাস্ট্রিসের ইটিপির প্রয়োজন হয়। তাদের ইটিপি আংশিকভাবে করা আছে। বিসিকের পাশেই আবাসিক এলাকা। বিসিকের ভেতরের সড়ক দিয়েই আবাসিক এলাকার লোকজন চলাচল করে। ফলে এখানকার বর্জ্যেের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা। অনেক সময় কারখানার বর্জ্য আবাসিক এলাকার ভেতরে ঢুকে পড়ে বলেও অভিযোগ তাদের। বিসিকের পাশের আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, পানি নিষ্কাশনের অভাব ও স্তূপকৃত বর্জ্যরে কারণে পুরো এলাকাজুড়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে থাকে। এর থেকে অনেক জটিল রোগের সৃষ্টি হতে পারে। বিসিক শিল্পনগরীর শিল্প মালিক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন বলেন, ইটিপি বাধ্যতামূলক হলেও নানা সীমাবদ্ধতায় তা অনুসরণ করা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে তদারকিরও অভাব রয়েছে। খাদ্যজাত শিল্প কারখানার তরল বর্জ্য মারাত্মক দূষণ তৈরি করে স্বীকার করে তিনি বলেন, এই বিসিক খাদ্যজাত শিল্প কারখানাই আছে ৩২টি। মঈন উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন এখানকার বর্জ্যগুলো অপসারণ করে। তবে অপসারণের আগে তা পরিশোধন করা হয় না। তাছাড়া বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগের অভাবে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হয় বলে জানান শিল্প নগরীর কর্মকর্তা শেখ ফজলুল হক। তিনি বলেন, কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানই শতভাগ বিদ্যুত সংযোগ পায় না। এছাড়া অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান শুধু গ্যাস সংযোগের কারণে পণ্য উৎপাদন থেকে বিরত আছে। নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গ্যাসের চাহিদা সরকার মেটাতে পারছে না। তাছাড়া অনেক পুরনো প্রতিষ্ঠানও বর্তমানে গ্যাসের সংযোগ চাচ্ছে। গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগের কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন ক্ষমতার শতভাগ কাজে লাগাতে পারছে না। এর মধ্যে ফিজা এ্যান্ড কোং গ্যাস সঙ্কটের কারণে এখনও পরোপুরিভাবে চালু হতে পারেনি। স্বাদ এ্যান্ড কোং, আর এস ইন্ডাস্ট্রিজও গ্যাসের কারণে তাদের উৎপাদন আংশিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। শেখ ফজলল হক আরও বলেন, বিসিক শিল্পনগরীর মোট ২৪.৮১ একর জায়গায় মধ্যে ১৩৪টি প্লট রয়েছে। এই প্লটগুলো মোট ৭২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বরাদ্দ নিয়েছে। এর মধ্যে ৬৫ প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাকি সাতটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মনসু প্রিন্টিং এ্যান্ড হুশিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, বেগম প্যাকেজিং এ্যান্ড প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিজ ও সুরমা ইন্ডাস্ট্রিজ ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ নিয়ে মামলাধীন আছে। আর বিসিকের নিয়ম না মানার কারণে আমানত টেক্সটাইল, প্রিমিয়ার ড্রয়িং এ্যান্ড ক্যালেন্ডার ও এপেক্স ভেজিটেবিলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। নতুন প্লট কিংবা শিল্পনগরী তৈরির প্ল্যান আছে কিনা জানতে চাইলে শেখ ফজলুল হক বলেন, বিসিকের সব প্লট অনেক আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। এখন আর নতুনভাবে প্লট নির্মাণ বা শিল্পনগরী তৈরির কোন পরিকল্পনা সরকারের নেই। তবে কেউ যদি শেয়ার বিক্রি করতে চায় তবে নতুনভাবে কেউ মালিকানা কিনতে পারবেন। খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফেয়ার ভিউ ইন্ডাস্ট্রিজের (রসমেলা) চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সুমন বলেন, আমাদের নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে আমাদের পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হয়। এখানে রয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের সঙ্কট। তাই আমরা বাজারের চাহিদা মতো পণ্য উৎপাদন করতে পারি না। বিসিক কর্মকর্তা বলেন, বিসিক শিল্পনগরীতে উৎপাদনরত শিল্পপ্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদনের দ্বারা বাজার চাহিদা মেটাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।
×