ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবার চাষ হয়েছে দুই হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে

উত্তরবঙ্গে টমেটো বিপ্লব

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১ ডিসেম্বর ২০১৭

উত্তরবঙ্গে টমেটো বিপ্লব

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ কোন বছর লাভ তো কোন বছর লোকসান এর মধ্যেই রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে টমেটো বিপ্লব ঘটেছে কয়েক বছর ধরে। বিশেষ করে শীতকালীন টমেটো চাষের জন্য কৃষিতে প্রসিদ্ধ স্থান হয়ে উঠেছে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা। দেশের বেশিরভাগ টমেটোর যোগান হয় এখন গোদাগাড়ীর টমেটো। এবারও টমেটোর উৎপাদন শুরু হয়েছে। সবখানে পুরোদমে শুরু হয়েছে টমেটোর কারবার। কেউ ক্ষেত থেকে টমেটো তুলছেন। কেউ রোদে শুকাচ্ছেন আবার কেউ প্যাকেটজাত করছেন। টমেটোর কারবার ঘিরে পুরো উপজেলায় শুরু হয়েছে বিশাল কর্মস্থান। ‘টমেটোর রাজ্য’খ্যাত বরেন্দ উপজেলায় জমি থেকে উঠছে উন্নতজাতের শীতকালীন হাইব্রিড টমেটো। এবার ফলন স্বাভাবিক হলেও ভাল দামে খুশি কৃষক। কৃষকরা জানান, এবার মৌসুমের শুরুতেই নকল বীজে ধাক্কা খান তারা। এরপর গাছে টমেটো ধরলেও বৃদ্ধি হচ্ছিল না আশানুরূপ। তারপর দফায় দফায় সার প্রয়োগ এবং পরিচর্যায় টমেটোর ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা শুরু করেন চাষীরা। এখন পরিমাণে কম হলেও গাছ থেকে উঠছে টমেটো। এ অবস্থায় ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চাষীরা। কৃষকরা জানিয়েছেন, টানা কয়েক বছর লোকসানের পর গত বছর টমেটো চাষে লাভের মুখ দেখেন চাষীরা। তাই এবার গত বছরের চেয়ে ২০০ হেক্টর বেড়ে টমেটো চাষ হয়েছে দুই হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে। তবে এবার খারাপ বীজের কারণে টমেটো ওঠা শুরু হয়েছে দেরিতে। ফলনও এখন কম। তবে এখন টমেটোর দাম ভাল। তাই টমেটোকে নিয়ে ফের স্বপ্ন দেখছেন তারা। কিছুদিন পর বেশি পরিমাণে টমেটো উঠলে এবং দাম ভাল থাকলে লাভের আশা করছেন তারা। গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ি মহল্লার টমেটো চাষি আবদুর রশিদ জানান, গত প্রায় ১৫ দিন ধরে টমেটো উঠছে। তবে যারা নসিব জাতের টমেটো চাষ করেছিলেন, তাদের টমেটো উঠেছে দেরি করে। অন্য জাতের টমেটো দুইবার তোলার পর নসিব উঠতে শুরু করে। নকল বীজের কারণে নসিব জাতের টমেটো বড় হচ্ছে কম। একই এলাকার চাষী শরিফুল ইসলাম জানান, দুই সপ্তাহ আগে গোদাগাড়ীতে প্রতিমণ কাঁচা টমেটো বিক্রি হয়েছে দুই হাজার টাকায়। এখন ভালমানের টমেটোগুলো বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকা মণ। আর ছোট আকারের নসিব বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকায়। তবে এখন পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকায়। কিন্তু অধিকাংশ কৃষকই কাঁচা অবস্থায় টমেটো বিক্রি করে দিচ্ছেন। উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের কৃষক জুলফিকার রহমান বলেন, তিনি দুই বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। সপ্তাহখানেক আগে তিনি প্রথম টমেটো তোলেন। তখন বিঘায় ফলন পাচ্ছেন চার মণ। সর্বশেষ বুধবারের তিনি দুই বিঘা জমির টমেটো তুলেছেন। ফলন পেয়েছেন আট মণ। পরবর্তীতে বিঘায় অন্তত ১২ মণ করে টমেটো তোলার আশা করছেন তিনি। তখন ভাল দাম পেলে টমেটো চাষে লাভ হবে বলেও মনে করেন তিনি। কৃষকরা জানিয়েছেন, গোদাগাড়ীতে এ বছর প্রায় ১২ থেকে ১৫টি জাতের হাইব্রীড টমেটো চাষ হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে নসিব জাতের টমেটো। আর এই বীজেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন তারা। ফলে এবার টমেটোর উৎপাদন ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। কৃষি বিভাগের মতে সারাদেশে যে পরিমাণ শীতকালীন টমেটো উৎপাদন হয়, তার তিন ভাগের দুই ভাগই উৎপাদিত হয় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায়। এজন্য এ উপজেলাকে অনেকে ‘লাল স্বর্ণের দেশ’ বলেও আখ্যায়িত করেন। অনেক আশা নিয়ে প্রতিবছরই চাষীরা টমেটো চাষ করেন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জমিতে ফলান লাল টুকটুকে টমেটো। কিন্তু সেই টমেটোই শেষ পর্যন্ত ধূসর করে দেয় চাষীদের স্বপ্ন। তবে এবার এমনটা ভাবছেন না কৃষক। শুরুতেই দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকদের নতুন আশা জেগেছে। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমান বলন, এবার টমেটোর উৎপাদনও ভাল। কিছু কিছু জাতের টমেটোর উৎপাদনে মার খেলেও সার্বিকভাবে ফলন ও দাম দুটোয় ভাল পাচ্ছেন কৃষক।
×