ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষিত শিশুর কোলে শিশু ॥ দায়িত্ব নেবে কে?

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১ ডিসেম্বর ২০১৭

ধর্ষিত শিশুর কোলে শিশু ॥ দায়িত্ব নেবে কে?

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর, ৩০ নবেম্বর ॥ পাশবিক নির্যাতনের শিকার ১১ বছর বয়সী এক শিশু। শেরপুরের নালিতাবাড়ীর প্রত্যন্ত গ্রামের ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র পরিবারের সেই শিশুর কোলে এখন আরেক কন্যা শিশু। ৪ দিন আগে জেলা সদর হাসপাতালে জন্ম নেয়া আরেক কন্যাশিশুকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে স্বজনরা। অন্যদিকে মামলার দীর্ঘদিন পরও ঘটনার নায়ক ধর্ষক মিঠু মিয়া (২০) গ্রেফতার না হওয়ায় ধর্ষিতা শিশুর পরিবারে দেখা দিয়েছে হতাশা। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কে দায়িত্ব নেবে এই নবজাতকের। তার পিতৃপরিচয়ই বা কি হবে ? বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ধর্ষিতা সেই শিশুর বাড়িতে গেলে দেখা যায় ধর্ষিতা সেই শিশুর কোলে ফুটফুটে আরেক শিশুকে। বুকে চাপা থাকা নানা কষ্টের মাঝেও শিশু মা চুম্বনে আদর দিচ্ছে সদ্যজাত শিশুকে। ওইসময় কথা হয় ধর্ষিতা সেই শিশুর বাবা, মা ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে। ধর্ষিতা শিশুর বাবা অভিযোগ করে বলেন, লম্পট মিঠুর ছোবলে মেয়ের সর্বনাশের পর এখন তার কোলে শিশু বাচ্চা। টাকা-পয়সার অভাবে এখন অন্যদের সহায়তায় চলতে হচ্ছে। উল্টা আমাদের প্রতি মামলা তুলে নেয়ার চাপসহ নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমি মিঠুর উপযুক্ত বিচারসহ জন্ম নেয়া শিশুর পিতৃ পরিচয় চাই। পরিবার ও আদালতসহ স্থানীয় সূত্র জানায়, নালিতাবাড়ী উপজেলার দোহালিয়া গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে ও স্থানীয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ওই শিশুকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি অপহরণ করে প্রতিবেশী স্বপন মিয়ার ছেলে লম্পট মিঠু মিয়া। এরপর বিভিন্ন স্থানে আটকে রেখে তাকে ধর্ষণ করে মিঠু। ঘটনার প্রায় ২ মাস পর অসুস্থ অবস্থায় সেই শিশুকে তাদের বাড়ির কাছেই ফেলে রেখে যায় ধর্ষক মিঠু। ওই ঘটনায় ধর্ষিতা শিশুর বাবা বাদী হয়ে মিঠুসহ ৪ জনকে আসামি করে অপহরণ ও সহায়তার অভিযোগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি নালিশী মামলা দায়ের করলে বিচারক ঘটনার বিষয়ে তদন্তপূর্বক ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। সে প্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সবুর উদ্দিন ১৯ ফেব্রুয়ারি কেবল মিঠু মিয়ার বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তীতে প্রকাশ পায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু গর্ভবতী হয়ে পড়েছে। ওই অবস্থায় গত ২০ মার্চ তদন্ত কর্মকর্তার দাখিলকৃত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে নারাজি দরখাস্ত দাখিল করে বাদীপক্ষ। ওই নারাজির বিষয়ে শুনানিতেই চলে যায় দীর্ঘ সময়। এদিকে ২৬ নবেম্বর রবিবার ধর্ষণের শিকার সেই শিশুর গর্ভ থেকে জেলা সদর হাসপাতালে জন্ম নেয় আরেক কন্যাশিশু।
×