ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় তিন ফসলি জমিতে ইটভাঁটি ॥ দেখার কেউ নেই

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১ ডিসেম্বর ২০১৭

নওগাঁয় তিন ফসলি জমিতে ইটভাঁটি ॥ দেখার কেউ নেই

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ সীমান্তবর্তী ধামইরহাট উপজেলায় ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন-নতুন ইটভাঁটি। ভূমির যথেচ্ছ ব্যবহারে একদিকে যেমন ফসলহানি ঘটছে, অন্যদিকে দূষণের কবলে পড়ে পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে উঠছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এসব দেখার কেউ নেই। ২০১৩ সালের নীতিমালা অনুসরণ না করে জমির ধরন কাগজ কলমে পরিবর্তন করে সংশ্লিষ্ট দাফতরিক পরিদর্শকদের ধোঁকা দিয়ে ৩ ফসলি জমিতে ইটভাঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা সদর থেকে ১ কিমি. দক্ষিণে পৌরসভার সীমানা ঘেঁষে বিহারিনগর তালঝাড়ি মৌজায় ‘এসএফ ব্রিক ফিল্ড’ নামে একটি ইটভাঁটি নির্মাণ করা হয়েছে। যা পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। ৬ একর জমির ওপর প্রভাবশালী ব্যক্তি মোঃ ফজলুর রহমান এই ব্রিক ফিল্ড নির্মাণ করেন। চারপাশে বাড়িঘর, ধানক্ষেত, গাছপালা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া ওই মাঠে ধানক্ষেত, আলু, সরিষা, গম, পাট, শাকসবজিসহ নানা রকম ফসল উৎপাদন হয়। ওই ইটভাঁটি নির্মাণে পরিবেশ অধিদফতরের কোন ছাড়পত্র নেই বলে জানা যায়। সাময়িকভাবে ইটভাঁটির অনুমতি পেতে না পেতেই জ্বালানি কাঠের স্তূপ গড়ে তোলা হচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যে ভাঁটিতে আগুন দেয়া হবে। সরকারী বিধিতে বলা আছে, কোন ক্রমেই ইটভাঁটিতে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা যাবে না। গাছপালা উজাড় করে থরে-থরে কাঠের স্তূপ গড়ে তোলা হচ্ছে। ওই ভাঁটির ম্যানেজার জানান, চলতি বছর ১ কোটি ইট পোড়ানোর লক্ষ্যমাত্র নিয়ে কাজ করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীতারা গ্রামের সাত্তার, ইসমাইল, তালঝাড়ি গ্রামের মোকলেছ, বিহারিনগর গ্রামের মুকুল, জিন্নাহ, সালাম, হারুন চৌধুরী, আলমগীর, গজিমদ্দীন, ও ঘুটু বলেন, চারিপাশে আমন ধান ও বোরো উৎপাদন করা হয়। এই ইটভাঁটি চালু হলে তাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। সে সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, ২০১৩ সালের নীতিমালায় বলা হয়েছে, ফসলি জমিতে কোনক্রমেই ইটভাঁটি নির্মাণ করা যাবে না। একমাত্র নদীনালা, খালবিল, বালুচর পরিত্যক্ত অনাবাদি ও লোকালয়ের বাইরে ইটভাঁটি গড়ে তুলতে পারে। যাতে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘিœত না হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডাঃ রাশেদুল জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতর ইটভাঁটি নির্মাণের জন্য সুপারিশ বাধ্যগত প্রয়োজন। সিভিল সার্জন পরিদর্শন না করে ঘরে বসে এরূপ স্থানে ইটভাঁটি নির্মাণের সুপারিশ করতে পারেন না। ৩ ফসলি জমিতে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়াই অবৈধ ইটভাঁটি নির্মাণের যেন হিড়িক পড়ে গেছে। ভাঁটি মালিক ফজলুর রহমান জানান, পরিবেশ অধিদফতরে আবেদন করা হয়েছে। লাইসেন্স বের হয়েছে। তবে তিনি প্রতিবেদককে তা দেখাতে পারেননি।
×