ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুসলিমবিরোধী ভিডিও রিটুইট করে ট্রাম্প ঠিক করেননি ॥ মে

ইরাকে ঝটিকা সফরে টেরেসা মে

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ১ ডিসেম্বর ২০১৭

ইরাকে ঝটিকা সফরে টেরেসা মে

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বুধবার ইরাক সফর করেছেন। তার এই সফরের বিষয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়। সেদেশ সফর শেষে সৌদি আরব যাওয়ার আগ পর্যন্ত এ খবর প্রকাশ করা হয়নি। তিনি প্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যিনি ২০০৮ সালের পর দেশটি সফর করলেন। তিনি বাগদাদের নিকটবর্তী একটি সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শন করেন ও ইরাকী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। গার্ডিয়ান ও এবিসি অনলাইন। টেরেসা মে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই আরও জোরদার করতে যুক্তরাজ্যের চেষ্টা বৃদ্ধি করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বুধবার সকালে জর্দান থেকে হার্কিউলিস বিমানে উত্তর বাগদাদের তাজি বিমানঘাঁটিতে নামেন। নিরাপত্তার কারণে ইরাক ছাড়ার আগ পর্যন্ত তার পুরো সফরের বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে। ইরাকের তাজি বিমানঘাঁটিতে শখানেক কিংবা তার চেয়ে বেশি সেনা সদস্যদের সঙ্গে তিনি দেখা করেন। এসব সেনারা ইরাকী বাহিনীকে প্রশিক্ষণে সহায়তা করেন। আইএসের হাত থেকে মসুল উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া সেনা সদস্যদেরও তারা প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। টেরেসা মে ওই অভিযানে অংশ নেয়া ইরাকী সেনাদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তিনি সৌদি আরবে চলে যাওয়ার আগে বাগদাদে ইরাক প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদির সঙ্গে বৈঠক করেন। টেরেসার সফরের পাশাপাশি ডাউনিং স্ট্রিট যৌথভাবে ইরাকের সঙ্গে কয়েক দফায় নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ নেয়ার কথা ঘোষণা করে। এছাড়াও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উদ্যোগে এক কোটি ডলারের অতিরিক্ত তহবিল, আন্তঃসীমান্ত নিরাপত্তা ও ইন্টারনেট ভিত্তিক উগ্রপন্থী বিষয়বস্তু মোকাবেলায় কাজ করার কথাও জানানো হয়েছে। ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রে ছয় শ’ সেনা সদস্য রয়েছে। তাদের কাজ হচ্ছে, স্থানীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ দেয়া। তাজি সামরিক ঘাঁটিতে টেরেসা মে বলেন, প্রয়োজন মাফিক ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করাই এখানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ব্রিটেনের স্কাই নিউজকে টেরেসা মে বলেন, ইরাকী বাহিনীর সঙ্গে আমাদের অব্যাহত কাজ করে যেতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে দেশটির নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে তারা ভূমিকা রাখতে পারেন। টেরেসা মে ও হায়দার আল-আবাদির মধ্যে বাগদাদের সরকারী প্রাসাদে প্রায় পৌনে একঘণ্টা আলাপ হয়। আবাদি বলেন, আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাজ্যের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তার এই সফর সেটাই প্রমাণ করে। সৌদি আরব সফরে রাজ্যের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে টেরেসা মে’র। দুর্নীতির অভিযোগে কয়েক ডজন প্রিন্স ও ধনাঢ্য ব্যক্তিকে আটক করে ইতোমধ্যে নিজের সিংহাসনে আরোহনের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছেন বিন সালমান। তার সঙ্গে টেরেসার বৈঠকে ইয়ামেন প্রসঙ্গ মূল কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে। ইয়ামেনে তিন বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে সৌদি আরবের ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। ইরাকে অবস্থানকালে টেরেসা মে বলেন, আমি সৌদিকে পরিষ্কার বার্তা দিতে চাই যে, মানবিক সহায়তা সরবরাহের জন্য ইয়ামেনের হোদাইদা বন্দর অবশ্যই খুলে দিতে হবে। দেশটিতে মানবিক সঙ্কটের বিষয়ে আমি পুরোপুরি সজাগ, বিশেষভাবে সম্প্রতি যা ঘটছে। এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে তীব্র সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রিটেন ফার্স্ট নামে একটি উগ্রডানপন্থী গোষ্ঠীর নেতার টুইট করা ভিডিও শেয়ার দিয়ে ট্রাম্প ভুল কাজ করেছেন, টেরেসা মে’র এমন মন্তব্যের জেরে ট্রাম্প তার প্রতি সমালোচনার তীর ছোড়েন। বৃহস্পতিবার সকালে টেরেসা মে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ট্রাম্প লিখেন, আমাকে হাইলাইট করবেন না, বরং ব্রিটেনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা ধ্বংসাত্মক উগ্র ইসলামপন্থীদের দিকে তাকান। আমরা সবকিছু ভালভাবেই করে যাচ্ছি। ভিডিওটি প্রথম পোস্ট করেছিলেন ব্রিটেনের ফার্স্ট ডেপুটি লিডার জায়দা ফ্রানসেন। তিনি বলেন, মুসলিমদের একটি গ্রুপ এক ডাচ্ কিশোর বালককে পিটিয়ে হত্যা করেছে। খ্রীস্টানদের একটি ভাস্কর্যও ধ্বংস করে তারা। মের মুখপাত্র জেমস সøাক বলেন, ভিডিওটি টুইটারে ছড়িয়ে দিয়ে ট্রাম্প ভুল কাজ করেছেন। ব্রিটেন ফার্স্ট নামে ওই গ্রুপটি সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করতে চাচ্ছে। তারা ঘৃণা ছড়াচ্ছে ও উত্তেজনায় ইন্ধন যোগাচ্ছে। হোয়াইট হাউস আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে বলেছে, অভিবাসীদের নিয়ে আলোচনা শুরু করতে ট্রাম্প ভিডিওটি শেয়ার দিয়েছেন। ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন টুইটারে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঘৃণ্য ভাষা অপপ্রচারের কোন সুযোগ নেই।
×