ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেসরকারী মেডিক্যালে ভর্তি

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১ ডিসেম্বর ২০১৭

বেসরকারী মেডিক্যালে ভর্তি

সরকারী ৩১টি মেডিক্যাল কলেজে ৩ হাজার ৩১৮টি আসনে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর এবার ৬৯টি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের ৬ হাজার ২৫টি আসনে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর সারাদেশে অনুষ্ঠিত হয় মেডিক্যাল কোর্সে ভর্তি পরীক্ষা। কয়েক লাখ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করলে এবার ৪০ বা তার বেশি নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন ৪০ হাজার ১৩২ জন। সরকারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়ার জন্য লড়াই করতে হবে ন্যূনতম পাস নম্বরপ্রাপ্ত প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীকে। ফলে দেখা যাচ্ছে যে, এ ক্ষেত্রেও বিরাজ করছে তীব্র ও অসম প্রতিযোগিতা। ফলে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম, অসততা ও দুর্নীতি বিরাজ করছে ভর্তিযুদ্ধে। প্রতি বছরই এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হলেও বাস্তবে এসব সমস্যা সমাধানের কোন প্রয়াস নেই বললেই চলে। প্রকৃতপক্ষে সরকারী মেডিক্যাল কলেজের তুলনায় বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির ফি ও আনুষঙ্গিক খরচ কয়েকগুণ বেশি। ফলে মেধাবী হলেও অপেক্ষাকৃত দরিদ্র ও নি¤œ মধ্যবিত্তের শিক্ষার্থীরা সেখানে সহজে ভর্তি হতে পারে না। এই সুযোগে অপেক্ষাকৃত ধনী ও সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরা সুযোগ পেয়ে থাকে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোতে। ফলে ঘুষ-দুর্নীতি অনিয়ম প্রবেশাধিকারের সুযোগ পায়। দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ হলেও কমপক্ষে ১১ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র কিনে মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অনুরূপ প্রায় নিয়মিত অভিযোগ পাওয়া যায় বিপুল অর্থ ব্যয়ে বেসরকারী মেডিক্যালে ভর্তিতে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সূত্রে জানা যায়, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ থেকে একজনকে পাস করিয়ে আনতে ন্যূনতম ২৫-৪০ লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে। অথচ এক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ফি ও ইন্টার্নি বাবদ মোট খরচ ১৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তদুপরি ইন্টার্নশিপ করার পর এ বাবদ গৃহীত অর্থ লভ্যাংশসহ ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও প্রায় কোন কলেজই তা ফেরত দেয় না। তদুপরি রয়েছে উন্নয়ন ফি, ব্যবহারিক ফিসহ নানা ছলছুতোয় অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ধান্দা। অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতাল পর্যন্ত নেই। একদিকে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে গোপনে মোটা অঙ্কের লেনদেন, তদুপরি ভর্তি ও টিউশন ফি আদায়ের নামে যখন তখন নানা অসিলায় অতিরিক্ত অর্থ আদায়। ফলে স্বভাবতই একজন শিক্ষার্থী তথা অভিভাবকের এমবিবিএস ডিগ্রী পেতে নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম ঘটে। সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রতি বছরই এ বিষয়ে সার্বিক নজরদারি ও দেখভালের কথা থাকলেও যথারীতি ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি চলছেই। মেডিক্যাল শিক্ষা ও সেবা জনকল্যাণমূলক হলেও প্রকারান্তরে তা পরিণত হয়েছে নিছক ব্যবসা বাণিজ্যে। আত্মপক্ষ সমর্থনে অবশ্য বেসরকারী মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলেন যে, মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সেহেতু তারা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকেন শিক্ষার্থী তথা অভিভাবকদের কাছ থেকে। সে ক্ষেত্রে ভর্তি থেকে শুরু করে এমবিবিএস ডিগ্রী দেয়া পর্যন্ত সর্বত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হয় কিনা, সে প্রশ্ন অনিবার্য না হয়ে পারে না। তদুপরি শিক্ষার মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন, যা সঙ্গত ও সমীচীন। পাড়ায় পাড়ায় ব্যঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে মেডিক্যাল কলেজ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শিক্ষক, ল্যাবরেটরি, হাসপাতালসহ অবকাঠামো পর্যন্ত নেই। দুঃখজনক হলো কোন কোন সরকারী মেডিক্যাল কলেজেও বিরাজ করছে প্রায় একই অবস্থা। ফলে দেশে শিক্ষার মান ও বিপুল ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই, উঠছেও। পর্যায়ক্রমে হলেও এ অবস্থা থেকে উত্তরণ প্রত্যাশিত, তা না হলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে থাকতে বাধ্য।
×