হাইটেক পার্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২৫ সাল নাগাদ আইসিটি রফতানি ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে তার সরকার সারাদেশে হাই-টেক পার্ক স্থাপন করছে। আমরা ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশের লক্ষ্যে হাই-টেক পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে আইসিটি খাতে কর্মসংস্থান ৩০ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্য আমরা নির্ধারণ করেছি।
বুধবার ‘বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের বোর্ড অব গবর্নরস’-এর ২য় সভায় এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আইসিটি বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
১৩ বছর আগের থেকে বর্তমান পর্যন্ত ডিজিটাল বাজার থেকে আয়ের তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৩ বছর আগে ডিজিটাল অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ২৬ মিলিয়ন ডলার। আর বর্তমানে তা ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০২৫ সালে আইসিটি রফতানি ৫ বিলিয়ন ডলার এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে আইসিটি খাতে কর্মসংস্থান ৩০ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্য আমরা নির্ধারণ করেছি।’
তিনি বলেন, আমরা আশাকরি এটা আমরা করতে পারব আর এই লক্ষ্য নিয়েই আইসিটি অবকাঠামো গড়ে তোলার পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের তরুণ প্রজন্মের মেধা বিকাশ ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগ আমাদের করে দিতে হবে। কেননা তরুণ প্রজন্মের সুপ্ত প্রতিভাকে কাজে লাগানোর মাধ্যমেই দেশ এগিয়ে যেতে পারে, যেজন্য তার সরকার নানা পদক্ষেপও নিয়েছে।
গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং প্রধানমন্ত্রীর সিনিয়র সচিব মোঃ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন এবং শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারসহ বাংলাদেশ হাই-টেক পার্কের অন্যান্য বোর্ড অব গবর্নরস সদস্য আইসিটি বিভাগে উপস্থিত ছিলেন বলে পিএমও প্রেস উইং সূত্র জানায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে হলে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমাদের চলতে হবে এবং প্রযুক্তি আমাদের সেই সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত করে দেয়। যে কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলাম এবং ’৯৬ সালে প্রথমবার সরকারে এসেই কম্পিউটার শিক্ষায় আমরা গুরুত্ব দেই। পাশাপাশি এ্যানালগ টেলিফোনকে ডিজিটালে রূপান্তরসহ আন্তর্জাতিক সংযোগ স্থাপনেও তার সরকার নানা উদ্যোগ নেয় এবং আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষা ও সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেয়।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালেই প্রধানমন্ত্রী বহির্বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে জাতির পিতার উদ্যোগ প্রসঙ্গে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্য পদ লাভ করে। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন তিনিই উদ্বোধন করেন বেতবুনিয়ায় স্যাটেলাইটের আর্থ স্টেশন। এরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার সরকার মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শেই এ দেশে কম্পিউটারসহ বিভিন্ন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশ ঘটে, তেমনি হাই-টেক পার্ক স্থাপনেও ছিল তারই পরামর্শ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে ৯২টি হাই-টেক পার্ক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক/আইটি ট্রেনিং এ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নয়টি পার্ক স্থাপনের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। হাই-টেক পার্কগুলোতে হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করার জন্য ইতোমধ্যে ট্যাক্স মওকুফ, কাস্টম ডিউটি মওকুফসহ ১৪টি প্রণোদনা সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
হাই-টেক পার্কসমূহে বেসরকারী উদ্যোগে ২০২১ সাল নাগাদ ৫৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে বলে আমি আশা করি।
সরকারপ্রধান বলেন, গার্মেন্টস পণ্যের ন্যায় আমাদের ডিজটাল ডিভাইসগুলো ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগ নিয়েই রফতানি হবে, সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্বের খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের ১৫টি কোম্পানির মোবাইল ফোন এবং আমাদের দেশে তৈরি ল্যাপটপ ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগ নিয়ে যে বিদেশে রফতানি হচ্ছে তাতে আমাদের ব্যাপক কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হচ্ছে। পাশাপাশি দেশেরও সুনাম বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে দেশকে আইটি খাতে আরও এগিয়ে নেয়ার জন্য ৬৪ জেলায় স্থাপন করা হচ্ছে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের সরকার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন করেছে। পর্যায়ক্রমে জেলাভিত্তিক যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সেখানে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রতিষ্ঠা করা হবে। যাতে করে আমাদের ছেলে-মেয়েরা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পায়।
শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইওটি, রোবোটিক্স, সাইবার সিকিউরিটিসহ উচ্চ প্রযুক্তির ৩৩টি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেন্টার ফর ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলিউশন এবং গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যেখানে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বিগ ডেটা এ্যানালাইটিক্স, ব্লকচেইন, রোবোটিক্সসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বিষয়ে গবেষণা ও উদ্ভাবন হবে। কেননা তার সরকার গবেষণাকে গুরুত্ব দেয় এবং এজন্য বাজেটে একটা থোক বরাদ্দও রেখেছে।