ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্মার্ট সিটি সপ্তাহ ক্যাম্পেন উদ্বোধন

স্মার্ট সিটি গড়তে সব সংস্থার কাজে সমন্বয়ের তাগিদ

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৩০ নভেম্বর ২০১৭

স্মার্ট সিটি গড়তে সব সংস্থার কাজে সমন্বয়ের তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সচেতন ও স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা, সেবাদানকারী সকল সংস্থার সমন্বয় করা, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সময়মতো বাস্তবায়ন করা ও ফাঁকা স্থানকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর পাশাপাশি সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলেই কেবল স্মার্ট সিটি গড়ে তোলা সম্ভব। বুধবার দুপুরে রাজধানীর বিজয় সরণিতে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারে ইউএনডিপি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ টু আই প্রকল্পসহ কয়েকটি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে স্মার্ট সিটি সপ্তাহের ক্যাম্পেনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তাদের আলোচনায় এসব মতামত উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) ও একসেস টু ইনফর্মেশন (এ টু আই ) প্রকল্পের পরিচালক কবির বিন আনোয়ারের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত চারলোটা স্কালাইটার, ইউএনডিপি আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী ও মিউনিসিপাল এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এইএম ওয়াহিদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাসযোগ্য আধুনিক নগর নির্মাণে সপ্তাহব্যাপী স্মার্ট সিটি ক্যাম্পেন শুরু করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের নগর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের নক্সা তুলে ধরেছেন। স্মার্ট সিটি সপ্তাহ চলবে আগামী ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে ৪০টির বেশি পৌরসভা অংশ নিয়েছে। এছাড়া সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা তাদের নক্সা তুলে ধরেছে। এসব নক্সায় স্মার্ট সিটি কিভাবে গড়া যেতে পারে তার রূপরেখা দেখানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, শুধু সমন্বয়হীনতা না থাকার কারণেই এদেশে আধুনিক সিটি গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যান্য সেবা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবে সিটি কর্পোরেশনগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়হীনতাই আমাদের কাজের প্রধান অন্তরায়। তিনি বলেন, স্মার্ট সিটি নির্মাণ করতে হলে স্মার্ট নাগরিক দরকার। সেই নাগরিকদের সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল স্মার্ট সিটি গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এজন্য তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমাদের প্রতিটি সিটিতে বহু সরকারী জমি রয়েছে। এসব জমি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বরাদ্দ না দিয়ে সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করা গেলে স্মার্ট নগর উপহার দেয়া সহজ হবে। এসব জায়গা পাওয়া গেলে সেখানে পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান করা যাবে, খেলার মাঠ করা যাবে। এছাড়া নারীদের অবাধ চলাচলেল ব্যবস্থা করা, রাতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা, অধিক মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। পাশপাশি শহরকে পুরোপুরি নারীবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তবেই কেবল স্মার্ট সিটি বলা যাবে। আইভী বলেন পানির সুষ্ঠু সমস্যা সমাধান, বর্জ্য ব্যবস্থা আধুনিক ও পরিবেশ সম্মত করার পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ করা স্মার্ট সিটি গড়ার অন্যতম শর্ত। ধনীদের পাশপাশি ক্ষুদ্র আয়ের মানুষের থাকার স্থান হিসেবে বস্তিতে বসবাসকারীদের জীবনমান উন্নয়নের দিকেও তাকাতে হবে। এজন্য তিনি সরকারকে সকল শহর নয় মডেল হিসেবে প্রাথমিকভাবে বড় ৫ টি শহরকে চিহ্নিত করে স্মার্ট সিটি গড়ার অনুরোধ জানান। অনুষ্ঠানে স্থপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, আমাদের অনেক সম্পদ রয়েছে। এই ঢাকা শহরই চারদিকে নদীবেষ্টিত। এসব নদী যদি বাঁচানো যায় আর খাল যদি উদ্ধার করা যায় তাহলে ঢাকার চেহারাটাই পাল্টে দেয়া যাবে। তিনি বলেন, স্মার্ট নগর গড়ার জন্য পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান দরকার। বর্তমানে ঢাকা শহরে ১ কোটি ৭০ লাখ লোকের বাস। যে হারে জনসংখ্যা বেড়ে চলছে তাতে ২০৬০ সালে জনসংখ্যা দাঁড়াবে ২শ’ ৫০ মিলিয়ন। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আমাদের ভূমির স্বল্পতাও দেখা দেবে। কেননা, বিশাল ভূমিখ- সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। ফলে কৃষিজমির একটা বড় অংশ সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে। এতে খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখন মাস্ট র‌্যাপিড ট্রানজিট প্ল্যান হচ্ছে। এটি অনেক দেরিতে শুরু হয়েছে। অনেক আগে এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল; নানা কারণে সেটি শুরু করতে দেরি হয়েছে। এমআরটি, মেট্রোরেল এসব কাজ শেষ করতে পারলে স্মার্ট সিটির একটা চিত্র ধীরে ধীরে ফুটে উঠবে। ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার জন্য বিভিন্ন সংস্থার কার্যকর ভূমিকার অভাব ও ব্যর্থতাকেই দুষলেন তিনি। সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের অভাবেই খাল, জলাশয় দখল হয়ে গেছে। নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এসব রক্ষা করতে না পারলে স্মার্ট সিটি গড়ার পরিকল্পনা কিভাবে বাস্তবায়ন হবে ? তিনি বলেন, আমরা একটা মাস্টার প্ল্যান করেছিলাম। এই পুরাতন বিমানবন্দরের ১০ হাজার একর জমি রয়েছে। এখানে একটা বড় উন্মুক্ত স্থান হতে পারত বিনোদনের কেন্দ্র। পরিকল্পনা করার পরও সেটি বাস্তবায়নে কোন অগ্রগতি আর নেই। সভাপতির বক্তব্যে কবির বিন আনোয়ার বলেন, স্মার্ট সিটি গড়তে সঠিক মোটিভেশন ও আইনের প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, বায়ু ও শব্দ দূষণ বন্ধ করা, সঠিক পদ্ধতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করতে হবে। ঢাকার চারদিকে চার লেনের সার্কুলার রোড করার পরিকল্পনা রয়েছে। স্মার্ট সিটি নির্মাণে সরকার কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে আহ্বায়ক ও নৌপরিবহনমন্ত্রীকে সদস্য সচিব করে ১০ সচিব ও বিভিন্ন সংস্থার ১০ ডিজিকে সদস্য করে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নে স্বল্প মেয়াদী, মধ্য মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে। মাস্টার প্ল্যান করতে গিয়ে দেখা গেছে ঢাকা শহরের চারদিকে যেসব বাঁধ রয়েছে তার পাশে অন্তত ৫০টি স্থান রয়েছে যেগুলো সরকারী জায়গা, যা অন্যের দখলে চলে গেছে। এগুলো অধিগ্রহণ করে খেলার মাঠ, পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া স্মার্ট সিটি গড়তে খালি স্থানের ব্যবহার করা ও প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে। তবে আধুনিক স্মার্ট সিটির পরিকল্পনায় শুধু ঢাকা নয় দেশের অন্যান্য শহরকেও যুক্ত করতে হবে। এজন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। আর এভাবেই এমডিজি আর্জনের মতো আমরা এসডিজিও অর্জন করতে সক্ষম হব।
×