ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৫ রেশম ও বস্ত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা, ২৫ হাজার টন সার আমদানির সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৩০ নভেম্বর ২০১৭

৫ রেশম ও বস্ত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা, ২৫ হাজার টন সার আমদানির সিদ্ধান্ত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে সারের মজুদ বাড়াতে ৮০ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সৌদি আরব থেকে ২৫ হাজার টন ডিপিএ সার আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিটিএমসি ও রেশম বোর্ডে লোকসান কমানোর জন্য দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ৫ শিল্প প্রতিষ্ঠান সচল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। সৌদি আরবের মাডেনের সঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় এ সার আমদানি করা হবে। এ জন্য প্রতি টন সারের দাম ৩৮৯ দশমিক ২৫ ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ৮০ কোটি ২২ লাখ টাকা। বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান। ওই সময় তিনি বলেন, আসন্ন রবি মওসুমের চাহিদা মেটানোসহ দেশে সারের মজুদ বাড়াতে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির আলোকে বিএডিসি ২৫ হাজার টন সার আমদানির একটি প্রস্তাব সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করলে কমিটি তা অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের ‘বিদ্যুত ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০’ এর আওতায় ‘রূপকল্প-৯: ২ডি সাইসমিক প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে সিসমিক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে বিভিন্ন গ্রেডের ৯০০ জন জনবল সরবরাহের জন্য সার্ভিস প্রোভাইডার নিয়োগের একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। মেসার্স আর্নিফ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এ জনবল সরবরাহ করবে। এতে মোট ব্যয় হবে ২৬ কোটি ১৫ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রূপকল্প -২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘বিদ্যুত ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০’এর আওতায় রূপকল্প-৩ শীর্ষক প্রকল্পের অধীন কসবা-১ (গ্রুপ-এ) এবং রূপকল্প-১ শীর্ষক প্রকল্পের অধীন সালদা (নর্থ)-১ (গ্রুপ-বি) জন্য বিভিন্ন পণ্য ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যয় হবে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। তিনি জানান, বৈঠকে রূপকল্প-১ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সালদা নর্থ-১ কূপ খননের কাজটি বাপেক্সের নিজস্ব রিগ দ্বারা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ৫টি লটে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ জন্য মোট ব্যয় হবে ১৫৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বেসরকারীকরণের জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যস্ত ৫টি মিল বিক্রয়ের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তা মন্ত্রণালয়ের কাছে ফেরত আনা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবসহ তিনটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। বন্ধ ৫ শিল্প প্রতিষ্ঠান ফেরত পেল মন্ত্রণালয় বিটিএমসি ও রেশম বোর্ডে লোকসান কমানোর জন্য দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ৫ শিল্প প্রতিষ্ঠান সচল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রির জন্য দেয়া ওই ৫ শিল্প প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফেরত দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো-রাজশাহী রেশম কারখানা, ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা, সিলেট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, কুড়িগ্রাম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ও চট্টগ্রামের ভালিকা উলেন মিলস লিমিটেড। তথ্য মতে, নব্বই দশকের গোড়ার দিকে রাষ্ট্রায়ত্ত লোকসানি বা বন্ধ শিল্প, কল-কারখানাগুলো বেসরকারীকরণ তথা বিক্রির নীতি গ্রহণ করে সরকার। সে অনুযায়ী-‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সাবেক প্রাইভেটাইজেশন কমিশন) নিয়ন্ত্রণে দেয়া হয় বন্ধ শিল্প, কল-কারখানা। কিন্তু এ নীতি সামনে অগ্রসর হয়নি। বরং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনের (বিটিএমসি) প্রায় ৯৩ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ রেশম বোর্ডকে ৩২ লাখ টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। বৈঠকে উত্থাপিত প্রস্তাবনায় বলা হয়-বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বন্ধ এসব শিল্পকারখানা সচল করার পরিকল্পনা হাতে নেয়। সে অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চতুর্থ সভায় ‘ভবিষ্যতে কোন কারখানা বিক্রয় বা হস্তান্তরের বিষয়ে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনকে দায়িত্ব না দিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে স্বাধীনভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করার দায়িত্ব দিতে সুপারিশ করা হয়। একই কমিটির পরবর্তী প্রাইভেটাইজেশন কমিশনে ইতোপূর্বে ন্যস্ত মিল-কারখানা এবং বস্ত্র ও পাট খাতের সমুদয় সম্পত্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফিরিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। আরও বলা হয়েছে-শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সাবেক বেসরকারীকরণ কমিশন) দীর্ঘ সময় ন্যস্ত থাকায় কারখানাগুলোর অত্যাবশ্যকীয় জনবল ও নিরাপত্তাকর্মীদের বেতন-ভাতাসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাকে বহন করতে হচ্ছে। ফলে বছরে বিটিএমসিকে প্রায় ৯৩ লাখ টাকা এবং ও রেশম বোর্ডকে ৩২ লাখ টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। পাশাপাশি কারখানা বন্ধ থাকায় যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হয়ে পড়ছে ও উৎপাদন না থাকায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। শ্রমিকরাও বেকার থাকছে, তাদের উৎপাদনশীলতাও হ্রাস পাচ্ছে। তাই কারখানাগুলো চালু করা প্রয়োজন। পরে বন্ধ শিল্পকারখানা ফেরত চেয়ে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনকে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবর এক চিঠিতে কমিশন জানায়, অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া উল্লেখিত পাঁচটি কারখানা ফেরত দেয়ার কোন সুযোগ নেই।
×