ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পোপের মঞ্চ প্রস্তুত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

কারও প্রতি অবিচার নয়, শান্তি ও সম্প্রীতির আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩০ নভেম্বর ২০১৭

কারও প্রতি অবিচার নয়, শান্তি ও সম্প্রীতির আহ্বান

মোরসালিন মিজান ॥ নতুন করে সেজেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। অন্য সভা-সমাবেশের জন্য যেভাবে মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়, এবার তার বিপরীত। সব সময় দেখা মঞ্চের মতো নয়। সামনের খোলা জায়গাটুকুও স্বতন্ত্র ভাবনা থেকে বিন্যস্ত করা হয়েছে। আয়োজনের সর্বত্রই ভাবগাম্ভীর্য ধরে রাখার চেষ্টা। সেই সঙ্গে বহু আকাক্সক্ষার মানুষ প্রিয় অভিভাবককে কাছে পাওয়ার আনন্দঘন অপেক্ষা। আগামীকাল শুক্রবার এখানেই শান্তি ও সম্প্রীতির কথা বলবেন পোপ ফ্রান্সিস। বিশ্ব ক্যাথলিকদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাকে স্বাগত জানাতে থাকবে নানা আনুষ্ঠানিকতা। পোপের তিন দিনের সফরে কর্মসূচী অনেক থাকলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আয়োজন ঘিরে রয়েছে বাড়তি কৌতূহল। প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে সেভাবেই। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় খ্রীস্টান ধর্মযাজকরা এদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। শিক্ষা বিস্তারে, স্বাস্থ্য সেবায় ও সমাজ কল্যাণে এখনও ভূমিকা রেখে চলেছেন তারা। ১৯৭০ সালের ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের পর ঢাকায় এসেছিলেন পোপ ষষ্ঠ পল। ১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রীয় সফরে আসেন পোপ দ্বিতীয় জন পল। সেই ধরাবাহিকতায় তিন দিনের সফরে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসছেন রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রধান ধর্মগুরু ফ্রান্সিস। ২৬৬তম পোপ তিনি। ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ নির্বাচিত হন। রোমের বিশপ বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চ এবং সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটির প্রধান। যে কোন দেশই পোপের আগমনকে বিশেষ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করে। বাংলাদেশের বেলায়ও এর কোন ব্যতিক্রম হচ্ছে না। তদুপরি এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরে আসছেন পোপ। তিন দিনের সফরে থাকছে নানা কর্মসূচী। তবে সকলের সামনে তিনি আসবেন শুক্রবার। এদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তি ও সম্প্রীতির কথা বলবেন তিনি। এদিন সকাল দশটা থেকে বারোটা পর্যন্ত সর্বসাধারণকে দর্শন দেবেন। এ সময় ১৬ যাজককে অভিষিক্ত করা হবে। খ্রীস্টান সম্প্রায়ের মানুষ ছাড়াও সব ধর্মাবলম্বী মানুষ আয়োজনে যোগ দিতে পারবেন। আয়োজকদের প্রতিনিধি প্যাট্রিক ডি রোজারিও জানান, সমাবেশ থেকে সম্প্রীতি ও শান্তির বার্তা ঘোষণা করবেন পোপ। সফরের মূল ভাবটিও ‘সম্প্রীতি ও শান্তি।’ পোপ এদেশের জনগণের জীবন-বাস্তবতার আলোকে সুন্দর ও মঙ্গলজনক দিক তুলে ধরবেন। পাশাপাশি দেশের যুবসমাজ, ছাত্র সমাজকে নতুন স্বপ্নে উদ্বুদ্ধ করবেন। মানবতা, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো উল্লেখ করে তা মোকাবেলায় কাজ করে যাওয়ার পরামর্শ দেবেন বলে জানান তিনি। তারও আগে এক ভিডিওবার্তায় পোপ একই ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, আর কয়েকদিনের মধ্যে বাংলাদেশ সফরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষকে আমি শুভেচ্ছা ও বন্ধুত্বের বার্তা জানাতে চাই। আমি অপেক্ষায় আছি সেই সময়ের, যখন আমরা মিলিত হব। বুধবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, উদ্যানের গ্লাস টাওয়ারের দক্ষিণ পাশে কুঁড়ে ঘরের আদলে মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। মূল অবকাঠামোটি সাদামাটা। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশ, কাঠ আর ছন। মঞ্চের ডিজাইন করেছেন বুয়েটের স্থাপত্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ক্যাথরিন গোমেজ। তিনি জানান, মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৮০ফুট। ৫০ ফুট প্রস্থ। মূল ছাউনিটি দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ৩০ফুট বাই ২০ফুট। পোপ ফ্রান্সিস যেখানে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেবেন সে জায়গাটি লাল কার্পেট দিয়ে সাজিয়ে নেয়া হয়েছে। পোপের হাঁটার পথেও কার্পেট বিছানো থাকবে। পোপ সকাল দশটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশুপার্ক সংলগ্ন ভিআইপি গেট দিয়ে মাঠে প্রবেশ করবেন। মূল গেট থেকে তাকে বহন করে নিয়ে যাবে বিশেষ ধরনের গাড়ি। পোপ যে গাড়িতে চড়ে মোটর শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন সেটির নিরাপত্তা দেবে ভ্যাটিকান থেকে আগত নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। পোপ এই মোটর শোভাযাত্রা সহকারে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছবেন। ভক্তদের উদ্দেশে হাত নাড়তে নাড়তে মঞ্চে উঠবেন। তার আগে সকাল সাতটা থেকে গেট খুলে দেয়া হবে। সিবিসিবির সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন ক্যাথলিক চার্চের মাধ্যমে আমন্ত্রিত খ্রীস্টান ক্যাথলিকরা সমাবেশে যোগ দেবেন। এক লাখ ভক্তের নামে বিশেষ কার্ড বিলি করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রবেশ করার সময় এই কার্ড ব্যবহার করতেই হবে। কার্ড যিনি বহন করবেন, তার গতিবিধি সহজেই চিহ্নিত করা যাবে। ভেন্যু থেকে বের হয়ে পুনরায় কার্ড ব্যবহার করে দ্বিতীয়বার প্রবেশ করার কোন সুযোগ থাকবে না। বিশেষ প্রার্থনা সভার পাশাপশি মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিল্পীরা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। বিশেষ শিশুদের বৃহৎ দল অনুষ্ঠানে অংশ নেবে। আয়োজন ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সমাবেশস্থলে ও বাইরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে। পোপের সফরে দেড় লাখ বিশেষ ধরনের নিরাপত্তা কার্ড তৈরি করা হচ্ছে। কার্ডগুলো তৈরি করেছে টাইগার আইটি। ৯ রঙের কার্ড তৈরি করা হয়েছে। পোপের অনুষ্ঠানগুলোতে এই কার্ড ব্যবহার হবে। আয়োজন সংক্রান্ত তথ্যের যোগান দিতে একটি ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য ভিজিট করা যাবে : ঢ়ড়ঢ়বনফ.রহভড়-তে। এরই মধ্যে সফর নিয়ে একাধিক প্রকাশনা বের করা হয়েছে। ‘শাস্তির দূত পোপ ফ্রান্সিস’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। তিন দিনের সফর শেষে শনিবার রাত এগারোটায় রোমের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন পোপ ফ্রান্সিস।
×