ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় এশিয়ান আরচারিতে অংশ নেয়া ফিলিপিন্সের আমায়া কোজুয়াঙ্গকোর অভিব্যক্তি

‘দেশে ফিরে বাংলাদেশী খাবার রান্না করব’

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৩০ নভেম্বর ২০১৭

‘দেশে ফিরে বাংলাদেশী খাবার রান্না করব’

রুমেল খান ॥ কথায় আছে, ‘যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে।’ ফিলিপিনো তীরন্দাজ আমায়া কোজুয়াঙ্গকোর বেলায় প্রবাদটি যেন ভালভাবেই প্রযোজ্য। ৩২ বছর বয়সী সুদর্শনা ও এই দীর্ঘাঙ্গী আরচার খেলার সুবাদে এ পর্যন্ত ২০টির মতো দেশ সফর করেছেন। বাংলাদেশ আপাতত তার সর্বশেষ দেশ। যে দেশেই যান সে দেশের খাবার আস্বাদন করেন, সেটার রেসিপি লিখে নেন এবং দেশে ফিরে তা রান্না করে সবাইকে ভুরিভোজন করাতে ভালবাসেন। ঢাকায় চলমান ‘এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপ’ আসর খেলতে ঢাকায় এসেছেন ১২ নবেম্বর, ১৯৮৫ সালে ফিলিপিন্সের টারলাকে জন্ম নেয়া আমায়া। বুধবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রতিযোগিতা শেষে কথা হয় তার সঙ্গে। হাসতে হাসতে জানান, ‘আমি খেতে খুব পছন্দ করি। পছন্দ করি খাওয়াতেও। তবে সেটা কিনে নয়, নিজ হাতে রেঁধে। আমি বেশ ভাল রান্না করতে পারি। এবার দেশে ফিরে পরিবার এবং বন্ধুদের কিছু বাংলাদেশী খাবার রান্না করে খাওয়াব।’ কি কি খাবার খাওয়াবেন, সেটাও জানিয়ে দেন কম্পাউন্ড ইভেন্টের এই আরচার, ‘ডাল, আলু ভর্তা, সব্জি, রুটি...!’ ব্যবসায়ী বাবা জেপি। গৃহিণী মা দেদা। একমাত্র ছোট ভাই জন। মোটামুটি স্বচ্ছল ও সাধারণ পরিবার। আরচারি শুরুটা কিভাবে? স্মৃতি হাতড়ে আমায়ার জবাব, ‘২০০২ সালে আমি আরচারি খেলা শুরু করি। তখন আমার বয়স ১৭। একটু দেরিতেই শুরু করি। আরচারিতে আসার আগে স্কুল ও কলেজে সুইমিং এবং ফুটবল খেলতাম। ফুটবলে খেলতাম ডিফেন্ডার পজিশনে। বাবা বাস্কেটবল খেলতেন। তবে তিনি আরচারি খেলাটা অনেক পছন্দ করতেন। মূলত তার উৎসাহেই আমার আরচারিতে আসা। পরে আমারও খেলাটি অনেক ভাল লেগে যায়। তাছাড়া এই খেলাটি বেছে নেয়ার আরেকটি কারণ হলো এটা অনেক চ্যালেঞ্জিং খেলা।’ দীর্ঘ ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে আমায়ার আরচারি-সাফল্য নেহায়েত কম নয়। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলোতে এ পর্যন্ত ২০টিরও বেশি স্বর্ণ জিতেছেন একক ও দলগত ইভেন্টে। তার বর্তমান বিশ^ র‌্যাঙ্কিং ৩০, দেশে ১। যদিও প্রথম স্বর্ণপদক জয় করেন শুরু করার বছর পাঁচেক পর, ‘সালটা ঠিক মনে নেই। ২০০৬ বা ২০০৭ সাল হবে, চীনে একটি টুর্নামেন্ট হয়, ওই আসরের নামও ভুলে গেছি। যাহোক, ওই আসরেই প্রথমবারের মতো কম্পাউন্ড ইভেন্টের এককে স্বর্ণপদক জিতেছিলাম।’ বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হচ্ছে তার সর্বশেষ এবং ২০তম দেশ। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখানকার খাবারের স্বাদ অসাধারণ। মানুষগুলো দারুণ মিশুক ও অতিথিপরায়ণ। সবাই ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে বিরক্ত হলেও আমার কাছে বেশ মজা লেগেছে। কারণ রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও জ্যাম লাগছে। সবধরনের গাড়ি একই রাস্তায় আটকা পড়ে আছে... এগুলো দেখে বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে। তবে এই দেশের আবহাওয়ার প্রশংসা করতেই হবে।’ আমায়া বিবাহিত। বিয়ে করেন ২০১০ সালে। ব্যবসায়ী স্বামী এনরিকে স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত ফিলিপিনো। একমাত্র ছেলে সন্তান আলফানসো, বয়স ৮। ছেলেকেও কি আগামীতে আরচার বানাবেন? ‘না, ওর পছন্দ ফুটবল। খেলাটা ভালই খেলে সে। তবে আরচারি নিয়েও মোটামুটি আগ্রহ আছে তার।’ খেলার সুবাদে প্রায়ই বিদেশ যেতে হয় আমায়াকে। পরিবারকে মিস করেন কতটা? ‘দারুণ মিস করি। বিশেষ করে ছেলেটাকে। তবে ফোনে ও ইন্টারনেটে সবসময়ই কথা হচ্ছে। তাই বেশিক্ষণ মন খারাপ ভাবটা স্থায়ী হয় না।’ আমায়ার আদর্শ আরচার তার প্রথম ও বর্তমান কোচ চোই ওন তে (দক্ষিণ কোরিয়া)। তিনি গত ১০ বছর ধরে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন আমায়াকে। স্মরণীয় অভিজ্ঞতা? ‘এ বছরের জুলাইয়ে পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব আরচারি গেমস। অলিম্পিকের মতো এই আসরও অনুষ্ঠিত হয় চার বছর পরপর। এতে অংশ নেয় বিশ্বের সেরা ২৪ আরচার। এদের একজন ছিলাম আমিও। ওখানে আমার রেজাল্ট ছিল না। কিন্তু সেরাদের সঙ্গে একই আসরে অংশ নেয়ার বিষয়টা আমি খুব উপভোগ করেছিলাম।’ অবসরে বই পড়েন আমায়া। প্রিয় লেখক যুক্তরাজ্যের নেইল গাইম্যান। স্বপ্ন একটাই। বিশ্বকাপ আরচারিতে এককে স্বর্ণ জেতা। ২০০৬ বিশ্বকাপে দলগত তাম্রপদক জিতেছিলেন। অলিম্পিকে কেন নয়? ‘অলিম্পিকে আরচারিতে কম্পাউন্ড ইভেন্ট নেই, তাই অলিম্পিকে খেলার কোন সুযোগ-সম্ভাবনা নেই।’ এখন দেখার বিষয় অবসর নেয়ার আগে বিশ্বকাপ আরচারিতে অংশ নিয়ে কম্পাউন্ড এককে স্বর্ণ জিতে স্বপ্ন পূরণ হয় কি না আমায়ার।
×