ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লিয়াকত হোসেন খোকন

বাতাসে বিষ

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ৩০ নভেম্বর ২০১৭

বাতাসে বিষ

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, বায়ুদূষণের শীর্ষে রয়েছে ভারতের দিল্লী, তারপরই আমাদের এই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। ঢাকার বাতাসে এখন মারাত্মক বিষ। নির্মল ও বিশুদ্ধ বাতাস ঢাকাবাসী পায় না বলেই হাঁটা চলা করার সময় বা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাতায়াতের সময় আমাদের চোখ-মুখ কেমন যেন জ্বালা পোড়া করে। নির্মম হলেও চরম সত্য যে, দূষিত বাতাসের কারণেই এইসব হচ্ছে। চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বায়ুদূষণের অর্থ বাতাসে ভাসমান কণা ও বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং তা সহনশীলতার বাইরে চলে যাওয়া। ইদানীং আবার তা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তা রীতিমতো ভয়ের ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষকরা বলছেন, বাযুদূষণের ফলে যে শুধুমাত্র শ্বাসনালী বা ফুসফুস আক্রান্ত হতে পারে, তা নয়, বায়ুদূষণ শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপরেও প্রভাব ফেলে। কারণ বায়ুর বিষাক্ত উপাদান ফুসফুস থেকে সারা শরীরেই ছড়িয়ে পড়ে। সেজন্য শ্বাসরোগ থেকে হৃদরোগ পর্যন্ত হতে পারে। এমন কী স্থায়ীভাবে হার্টেও অসুখ ও ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিও হতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে, ধূলিকণার মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে দিনে গড়ে হওয়া উচিত ১০০ মাইক্রোগ্রাম। কিন্তু বায়ুদূষণের কবলে পড়া দেশগুলোতে এই মাত্রা অত্যধিক। কোথাও কোথাও ৩ গুণ বা ৪ গুণ বা এর চেয়েও বেশি। এই তালিকায় রয়েছে চীন, ভারত, বাংলাদেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশ। আরও জানা যায়, বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস হলো কয়লা ও জৈব জ্বালানি। এছাড়াও নির্মাণকার্য আরেকটি বড় কারণ। দেখা যায়, নির্মাণ সামগ্রীকে উপযুক্তভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না, এগুলো যেখানে সেখানে উন্মুক্ত স্থানে ফেলে রাখা হয়। এর ফলে বাতাসও দূষিত হয়। শুধু তাই নয়, নির্মাণের জন্য সহায়ক ইটভাটাগুলি থেকেও অনবরত ধোঁয়া বের হতে থাকে। এতে করে ইটভাটার কাছাকাছি কৃষি জমি যেমন অনুর্বর হচ্ছে, তেমনি কাছাকাছি থাকা ফলবাগিচাগুলোও দূষণের কবলে পড়ে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতি বছর শুধুমাত্র বায়ুদূষণের কারণে সারা পৃথিবীতে লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। ইদানীং আমার মুখে মাস্ক দেখে ঢাকায় আসা একজন বিদেশীর মন্তব্য, ‘দেখছি তোমাদের দেশের পরিবেশ দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।’ ভয়াবহ আকার যে নিয়েছে, তাতে তো কোন সন্দেহ নেই। তাহলে উপায়? এর হাত থেকে বাঁচতে সত্যিই কি কোন উপায় নেই? উপায় হিসাবে এই মুহূর্তে, পরিবেশ বিজ্ঞানী থেকে পরিবেশকর্মী যারা পরিবেশ নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন ও করতে ভালবাসেন তাদের বলতে হবে, অবিলম্বে বাতাসের দূষণ কমাতে হবে। এজন্য বাতাসে যাতে ধূলিকণার পরিমাণ কমে সে জন্য কয়লা ও জৈব জ্বালানির ব্যবহার কমাতেই হবে। ব্যক্তিগত গাড়ির উপরে অত্যধিক পরিমাণ কর বসিয়ে ছোট গাড়ির ব্যবহার কমাতে হবে। পৃথিবীর বহু দেশ ইতোমধ্যে এই উপায় অবলম্বন করে সুফল লাভ করেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, বায়ুদূষণের মাত্রা যদি ঘনমিটার পিছু ১০ মাইক্রোগ্রাম কমানো যায় তাহলে অন্তত ৩ শতাংশ মানুষের শ্বাসরোগ ও হৃদরোগের পরিমাণ কমতে পারে। একইভাবে মান্ধাতা আমলের ইটভাটাগুলোকেও আধুনিকীকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণকার্যে অংশগ্রহণকারীদের নির্মাণ সামগ্রীও উপযুক্তভাবে রক্ষণাবেক্ষণে বাধ্য করাতে হবে। তা হলে হয়তো অন্তত ঢাকায় বায়ুদূষণজনিত রোগ ভোগের পরিমাণ কিছুটা হলেও কমতে পারে। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকাবাসীর জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ানক দুর্দিন। রূপনগর, ঢাকা থেকে
×