ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাগত পোপ ফ্রান্সিস

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৩০ নভেম্বর ২০১৭

স্বাগত পোপ ফ্রান্সিস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে পোপ ফ্রান্সিস তিন দিনের জন্য বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তাঁর এই সফরটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। ভ্যাটিকান ও পোপ সম্পর্কে যা জ্ঞাতব্য তা হলো ইতালির রোমনগরে অবস্থিত ১০৯ একর জমিতে ভ্যাটিকান একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং এর রাষ্ট্রপ্রধান হলেন পোপ। তিনি বিশ্বের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের অন্যতম একজন এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ১২৮ কোটি খ্রিস্টধর্মে ক্যাথলিক বিশ্বাসীদের অবিসংবাদী ধর্মগুরু। রাজনীতিবিদ না হলেও তার ব্যক্তিত্ব, বক্তব্য ও আহ্বান বিশ্ব রাজনীতি তথা আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সুবিশাল প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এখানে স্মরণ করা আবশ্যক যে, ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অসহায় নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর নির্মম, নৃশংস, বর্বর ও পৈশাচিক গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাট চলাকালে ভ্যাটিকান এর বিরুদ্ধে সর্বদাই ছিল সোচ্চার ও নিন্দায় মুখরিত। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর প্রথম দিকে বিশ্বে যে কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে এগিয়ে আসে তার মধ্যে ভ্যাটিকান অন্যতম। এর বাইরেও বাংলাদেশের বিপদ-আপদ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভ্যাটিকান সব সময়ই বাংলাদেশের পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে ভ্যাটিকানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যবহ বৈকি। পোপ এমন এক সময়ে বাংলাদেশে আসছেন যখন দেশটি রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যায় জর্জরিত। উল্লেখ্য, ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম হত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠন, ধর্ষণ সর্বোপরি পোড়ামাটি নীতির কারণে সীমান্ত অতিক্রম করে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ ভূখ-ে। এই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ তার সীমিত সম্পদ ও সাধ্য নিয়ে যথাসাধ্য করলেও অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ থেকে যৎসামান্য যা সাহায্য এসেছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ঘটনার পরপরই পোপ রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এহেন অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছেন এবং বক্তব্যে জাতিগত পরিচয় হিসেবে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এতে যথেষ্ট কাজ হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হয়। কেননা, অচিরেই রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যাটি জাতিসংঘ, ওআইসি, আসিয়ান, আসেমসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে উপস্থাপিত এবং বাংলাদেশের পক্ষে জনমত ও ব্যাপক সমর্থন লাভে সমর্থ হয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফান্স, ইইউসহ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের কথা এক্ষেত্রে স্মর্তব্য। ভারত, চীন ও রাশিয়া তেমন জোরালো ভূমিকা না রাখলেও বিশ্ব জনমতের চাপে অন্তত নমনীয় হয়েছে। এর পেছনে ভ্যাটিকান তথা পোপের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। কেননা, পোপ খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি সবার। ভ্যাটিকান সর্বদাই ন্যায় ও শান্তির পক্ষ অবলম্বনকারী এবং বিশ্বের সর্বত্র সহিংসতা, হত্যা ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে। তিনি সবসময় মানুষ ও মানবতার কথা বলেন এবং যারা দরিদ্র, অসহায়, দুস্থ, দুর্ভাগা, শরণার্থী এমনকি জলবায়ুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের স্বপক্ষে অবস্থান নেন। বাংলাদেশে পোপের আগমন শান্তি ও সম্প্রীতির উদাহরণ হয়ে থাকবে নিশ্চয়ই। বাংলাদেশে আসার আগে পোপ মিয়ানমার সফর করে সে দেশের সেনাপ্রধান এবং রাষ্ট্রের উপদেষ্টা আউং সান সুচির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। সেখানে তাকে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানানো হয় কার্ডিনালের পক্ষ থেকে। তবে পোপ ফ্রান্সিস রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আগেই যথেষ্ট ইতিবাচক বিবৃতি ও বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের ভাই ও বোন বলে অভিহিত করেছেন। বাংলাদেশ সফরে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধিদল পোপের সঙ্গে দেখা করবেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ-মিয়ানমান দ্বিপক্ষীয় সবঝোতাও হয়েছে। অতঃপর রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার একটি ইতিবাচক সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে আশা করা যায়। আমরা পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশ সফরকে স্বাগত জানাই।
×