ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্গম চরাঞ্চলে আস্তানা গড়ছে জঙ্গীরা

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৯ নভেম্বর ২০১৭

দুর্গম চরাঞ্চলে আস্তানা গড়ছে জঙ্গীরা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ একের পর এক অভিযানে কোণ্ঠাসা হয়ে পড়া জঙ্গীদের নিরাপদ আস্তানা গড়ে তুলছে দুর্গম চরাঞ্চল। জঙ্গীরা এসব নির্জন এলাকাকে ট্রেনিং সেন্টারও বানিয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের সদস্যরা দুর্গম অঞ্চলে নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করছে। আর নতুন সদস্যদের সেখানেই প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। গত ৬ মাসে শুধু পদ্মার চরেই দুটি আস্তানার সন্ধান মেলে। র‌্যাব পুলিশের অভিযানে নিহত হয় ৭ জঙ্গী। আর পুরো অঞ্চলে আরও ৪ জঙ্গী আস্তানার পাওয়া যায়। আর এ এলাকা থেকেই আটক হন জেএমবির দুর্ধর্ষ ক্যাডার সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা সোহেল। পুলিশ সূত্র জানায়, পদ্মার দুর্গম চারাঞ্চলে পুলিশী নজরদারি কম। আর এ সুযোগটাই নিচ্ছে তারা। তবে লাভবান হতে পারছে না। স্থানীয় সোর্সের মাধ্যমে পরপর দুটি আস্তানা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১১ মে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের গোদাগাড়ীর রেলগেট বাইপাস থেকে উত্তরে ৭ কিলোমিটার চারাঞ্চলের বেনীপুরে গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। অভিযানের সময়ই এক নারী জঙ্গীর চাপাতির কোপে নিহত হোন ফায়ার সার্ভিস কর্মী আব্দুল মতিন। ওই অভিযানে আহত হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমিত চৌধুরী, এসআই লুৎফর রহমান ও কনস্টেবল উৎপল। পুরো অভিযানে নিহত হয় ৪ জঙ্গী। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বাড়িটির মালিক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে মিষ্টু নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়ার পর থেকেই তার বাড়ি হয়ে উঠে আস্তানা। নব্য জেএমবির সদস্যরা একদিকে যেমন তার বাড়িতে থাকত তেমনি প্রশিক্ষণের জন্যও ব্যবহার করত। ছদ্মবেশে জঙ্গীরা এলাকা থেকে সদস্য সংগ্রহের কাজও করছিল। এর আগে একই বছরের ২৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে মারা পড়ে ৪ জঙ্গী। এই আস্তানায় নিহত চারজনের মধ্যে গুলশান হামলার অন্যতম সমন্বয়ক বাশারুজ্জামান ও ছোট মিজানও রয়েছে। অভিযানের নাম দেয়া হয় ঈগল হান্ট। এ অভিযানকে অন্যতম সফল অভিযান বলে মনে করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজমের কর্মকর্তারা। আর ১১ জুন রাজশাহীর তানোরে জঙ্গী আস্তানার খবর পায় পুলিশ। পুলিশ ওই আস্তানায় অভিযান না চালালেও সেখান থেকে অস্ত্রসহ প্রথমে ১২ জনকে আটক করলেও পরে ৩ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়। বাকিদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার গোদাগাড়ীর আলাতলি চরে সন্ধান মেলে আরেক আস্তানা। র‌্যাব গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পাওয়ার অভিযানে যাওয়া মাত্রই ঘরের ভেতর থেকে র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড বোমা এমনকি পিস্তলের গুলি ছুড়তে থাকে জঙ্গীরা। র‌্যাবও সতর্ক অবস্থানে থেকে পাল্টা জবাব দেয়। র‌্যাব আত্মসমর্পণের জন্য আহ্বান জানালে আত্মঘাতী হয়ে উঠে জঙ্গীরা। বিস্ফোরক দ্রব্যের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো বাড়িই জ্বালিয়ে দেয়। পরে র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল টিম ভেতরে প্রবেশ করে। পরে সেখান থেকে খন্ড- খন্ড- তিনজনের লাশ উদ্ধার করে। রাজশাহী র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহাবুবুল আলম বলেন, পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ার সুবাদে তারা এটাকে নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। যেহেতু এটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটু নজরদারির বাইরে তাই এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা এখানে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ও বিস্ফোরক তৈরির কারখানা হিসেবে ব্যবহার করছিল। স্থানীয় সোর্সদের খবরের ভিত্তিতে খবর পাওয়ার পরই আমরা এ অভিযানে নামি। তিনি আরও বলেন, দুর্গম এলাকা হওয়াতে সবসময় নজরদারির আওতায় আনা যায় না। এর এ সুযোগ কাজে লাগাতে চায় জঙ্গীরা। কিন্তু আমরা স্থানীয় লোকদের এদের বিষয়ে সচেতনতা করে আসছি। যার ফলাফলও আমরা পায়। এদিকে স্থানীয় লোকজন বলছেন, মাঝে মধ্যেই অচিন মানুষের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় তারা এনজিওর লোক পরিচয় দেয়। এ কারণে প্রথমে তাদের সন্দেহ করা যায় না। লোকজন বলেন, র‌্যাবের অভিযান পরিচালিত বাড়িটি রাশিকুলের। এর বাড়িতে যখন লোকজন আসত তখন তারাও এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয় দিয়েছিল। এদের থেকে আমরা সচেতন। যখনই অপরিচিত লোকদের আনাগোনা আমরা দেখি তখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অবহিত করি। এদিকে উত্তরাঞ্চলকে জঙ্গীরা তাদের নিরাপদ আস্তানা মনে করে। নাটোরে আস্তানা গড়ার কয়েকদিনের মধ্যেই আটক হয় দুর্ধর্ষ জঙ্গী হাতকাটা সোহেল ওরফে সোহেল মাহফুজ। এছাড়াও চাঁপাইয়ের শিবগঞ্জে নিহত হয় আরো দুই দুর্ধর্ষ জঙ্গী রাশেদুজ্জামান ও ছোট মিজান। মোস্ট ওয়ানটেড জঙ্গীরা নিজেদের নিরাপদে রাখতেই এ অঞ্চলকে বেছে নিয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
×