ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খুলনায় মানস ঘোষ

একাত্তরের গণহত্যা, নির্যাতনের কথা মনে হলে এখনও শিউরে উঠি

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৯ নভেম্বর ২০১৭

একাত্তরের গণহত্যা, নির্যাতনের কথা মনে হলে এখনও শিউরে উঠি

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনায় স্থাপিত ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে মঙ্গলবার বিকেলে খুলনার বিএমএ ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ভারতীয় সাংবাদিক মানস ঘোষের ‘আমার দেখা ৭১’ শীর্ষক একক বক্তৃতা। বাংলাদেশ সরকার যে কজন বিদেশী বন্ধুকে বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান করেছে মানস ঘোষ তাদের অন্যতম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সম্পাদক ডাঃ শেখ বাহারুল আলম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহযোগী অধ্যাপক শংকর কুমার মল্লিক। মানস ঘোষ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ভারতের স্টেটসম্যান পত্রিকার একজন সাংবাদিক হিসেবে তিনি প্রথম চুয়াডাঙ্গা প্রতিরোধ প্রত্যক্ষ করেন। মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। বিজয়ের প্রাক্কালে তিনি খুলনা-যশোর এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে প্রবেশ করেন। ফুলতলা-শিরোমনির যুদ্ধ এবং ১৭ ডিসেম্বর খুলনা সার্কিট হাউসে পাক সেনাদের আত্মসমর্পণও দেখেছেন। শুধু প্রত্যক্ষ করা নয়, স্টেটসম্যান পত্রিকায় তার পাঠানো নিউজ সাড়া ফেলেছিল। তিনি বলেন, পূর্ববঙ্গের সঙ্গে আমার বা আমার পরিবারের কোন সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু শুধু বিবেকের তাগিদে ১০০ টাকা পকেটে নিয়ে অফিসকে না জানিয়েই বেরিয়ে পড়ি। বিদেশী সাংবাদিকদের মধ্যে তিনি প্রথম ২৮ মার্চ সাতক্ষীরা পৌঁছান। ২৯ মার্চ যশোর আসেন। সেখানে গণহত্যা-নির্যাতনের যে চিত্র দেখেছি তা মনে হলে এখনও শিউরে উঠতে হয়। আমাদের ফটোগ্রাফার সুধীন রায় সঙ্গে ছিলেন। তিনি ওই দৃশ্য দেখে কেঁদে ফেলেন এবং বলেন, ‘তার পক্ষে এই ছবি তোলা সম্ভব নয়।’ মানস ঘোষ তার বক্তব্যে অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেন। হলভর্তি বিভিন্ন পেশার মানুষ তার বক্তব্য গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বাঙালী জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে হেনস্থা এবং হেয়প্রতিপন্ন করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারতীয়দের মধ্যেও কেউ কেউ এমনটা করছেন, যা খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, বাঙালী জাতীয়তাবাদকে ধরে রাখতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে হবে। এ জন্য নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। যারা মিছেমিছি মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার চেষ্টা করছেন তাদের চিহ্নিত করে একঘরে করা উচিত। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য ইতিহাস বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে। এগুলো তুলে আনতে হবে। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের নেতৃত্বে এই প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের আরও বেশি সম্পৃক্ত হওয়া দরকার। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, বিজয়ের ৪৬ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধ বিশেষ করে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তার দোসরদের সংঘটিত গণহত্যা-নির্যাতন এখনও প্রাসঙ্গিক। জেনারেল জিয়ার ক্ষমতা দখলের পর, জেনারেল এরশাদ ও খালেদা-নিজামী পর্যন্ত বাংলাদেশের পাকিস্তানীকরণ হয়েছে। রাজাকারদের ক্ষমতায় বসানো হয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক করে দেখানো হয়েছিল। আমাদের এখন মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার সত্য প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই করতে হচ্ছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ক্ষমতায় না এলে আজ আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভুলে যেতাম। তার অমর কীর্তি যুদ্ধাপরাধের বিচার, যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। অন্যদিকে, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে গণহত্যা-নির্যাতন চলছে। সে জন্য এখনও গণহত্যা-নির্যাতন প্রাসঙ্গিক। ড. মামুন আরও বলেন, পৃথিবীর যে কোন দেশে গণহত্যা হোক; সিভিল সমাজকে এর বিপক্ষে মতামত সংঘটনে এগিয়ে আসতে হবে। শেখ হাসিনার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে গণহত্যার অপরাধীদের বিচার করতে হবে।
×