ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফজলুল হক খান

সততায় তৃতীয় স্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২৯ নভেম্বর ২০১৭

সততায় তৃতীয় স্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

“বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। জনসংখ্যার চাপ, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত। এসব প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও আমাদের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ৮৭% মার্ক পেয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করা সম্ভব হয়েছে শুধু তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা, নিষ্ঠা ও সততার কারণে। মানুষের সদিচ্ছা থাকলে প্রতিকূল পরিবেশেও বিজয় অর্জন সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর এই বিজয় তারই একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।” পানামা পেপার্স এবং প্যারাডাইস পেপার্স সাম্প্রতিককালে অফশোর ব্যাংকিংয়ের নামে বিদেশে টাকা পাচারের তথ্য প্রকাশ করে মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। অফশোর ব্যাংকিংয়ের নামে টাকা পাচারের তালিকায় বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীদের নাম উঠে এসেছে। রাজনীতিবিদদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন দেশের সরকারে আছেন। আবার কেউ কেউ সরকার প্রধানও। প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখিত কেলেঙ্কারিতে কেউ কেউ সরকারী পদ হারিয়েছেন আবার কেউ কেউ অভিযোগের ভিত্তিতে পদত্যাগ করেছেন। এক কথায় বিশ্ব রাজনীতিতে যাদের সৎ বলে মনে করা হতো তাদের অনেকেই হয়েছেন কলঙ্কিত। তালিকায় প্রকাশিত রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক, কখন কে মানিলন্ডারিং কেসে ফেসে যায় এই ভয়ে। এবার পিপল্স এ্যান্ড পলিটিক্স বিপরীতধর্মী এক পদক্ষেপ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। উক্ত প্রতিবেদনে বিশ্বের ৫ জন সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানকে চিহ্নিত করা হয়েছে যাদের কোন দুর্নীতি স্পর্শ করেনি। যাদের বিদেশে কোন ব্যাংক হিসাব নেই। এমনকি উল্লেখ করার মতো কোন সম্পদও নেই। উক্ত প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ৫টি প্রশ্নের উত্তরে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে। প্রশ্ন ৫টি হলো ১. সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে তিনি কি তার রাষ্ট্রের বাইরে কোন ব্যাংক এ্যাকাউন্ট করেছেন? ২. ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর তার সম্পদ কতটুকু বেড়েছে? ৩. গোপন সম্পদ গড়েছেন কিনা? ৪. সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ আছে কিনা? এবং ৫. দেশের জনগণ তার সম্পর্কে কি ভাবেন? এই ৫টি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে পিপল্স এ্যান্ড পলিটিক্স ১৭৩টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের কর্মকা- বিশ্লেষণ করেছে। গবেষণা সংস্থাটি মাত্র ১৭জন সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান পেয়েছেন যারা ৫০ ভাগ দুর্নীতিমুক্ত হিসাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন অর্থাৎ পাসের হার মাত্র ৯.৮২ ভাগ। ১৭৩ জন সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে সবচেয়ে সৎ ও পরিচ্ছন্ন সরকার প্রধান হিসেবে ৯০% মার্ক পেয়ে প্রথমস্থান অধিকার করেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মারকেল। ৮৮% মার্ক পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং। ৮৭% মার্ক পেয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮৫% মার্ক পেয়ে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ইরনা সোলবাগ। ৮১% মার্ক পেয়ে ৫ম স্থান অধিকার করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানী। উত্তরপত্র সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে, সন্দেহ নেই। প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে এমন কোন অভিযোগও উত্থাপিত হয়নি। তবে একটি বিষয় বিবেচনার যথেষ্ট দাবি রাখে। রাজধানী শহরের একটি নামি-দামি স্কুলের শিক্ষার মান এবং মফস্বল এলাকার একটি স্কুলের শিক্ষার মান কখনও এক নয়। রাজধানীর নামি-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৯০% মার্ক পেয়ে প্রথম হওয়ার চেয়ে মফস্বল এলাকার একটি স্কুলের একজন ছাত্র ৮৭% মার্ক পেয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করা মেধা, অধ্যবসায়, প্রজ্ঞা, নিষ্ঠার দিক থেকে শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে। জার্মান, সিঙ্গাপুরের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক পরিবেশের ক্ষেত্রে প্রতি সূচকেই আমরা পিছিয়ে আছি একথা অস্বীকার করতে পারি না। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। জনসংখ্যার চাপ, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত। এসব প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও আমাদের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ৮৭% মার্ক পেয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করা সম্ভব হয়েছে শুধু তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা, নিষ্ঠা ও সততার কারণে। মানুষের সদিচ্ছা থাকলে প্রতিকূল পরিবেশেও বিজয় অর্জন সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর এই বিজয় তারই একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন। জার্মান সিঙ্গাপুরের মতো উপযুক্ত পরিবেশ পেলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রথম স্থানের অধিকারী হতেন একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বাংলাদেশের ৭৮ ভাগ মানুষ মনে করে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৎ ও ব্যক্তিগত লোভ লালসার উর্ধে। তাঁর কোন গোপন সম্পদ নেই। একথা যেমন সত্য তেমনি দেশের মানুষ আরও জানে তিনি সৎ, নির্ভীক ও ধার্মিক। তার যেমন সততা আছে, তেমনি সাহস আছে। সাধারণত মানুষ সৎ থাকলে যা হয়। তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রচুর পড়ালেখা করেন, ধর্ম নিয়েও প্রচুর চর্চা করেন বলে শোনা যায়। ধর্মীয় মতে রাজ্য শাসন ও প্রজাপালন একটি অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ কাজ। মহান আল্লাহ তায়ালা যাকে এই বিরাট দায়িত্বপূর্ণ কার্যের পুরোপুরি হক পালন করার সুযোগ ও ক্ষমতা অর্পণ করেন তিনি ভাগ্যবান। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত ধর্মীয় বিষয়গুলো খুব ভালভাবে আত্মস্থ করতে পেরেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা প্রধানমন্ত্রীকে তিন তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সুযোগ ও ক্ষমতা অর্পণ করেছেন। এটা তাঁর জন্য বড় পাওয়া এবং মনে হয় তিনি সন্তুষ্ট। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ধানম-ির ৩২ নম্বরে ঘটে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়। মীর জাফরের রক্তের কণিকা বহনকারী কিছু উচ্চবিলাসী, বিপদগামী ও উচ্ছৃঙ্খল সেনাসদস্য স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের সহায়তায় নৃশংসভাবে হত্যা করে প্রধানমন্ত্রীর পিতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, চাচা শেখ নাসের, ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, ভ্রাতৃবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল এবং অতি আদরের ভাই শিশু রাসেলকে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর অনেক আপনজন, পরম আত্মীয়দেরও সেদিন হত্যা করা হয়। স্বজন হারাবার ব্যথায় ক্ষতবিক্ষত তাঁর হৃদয়, বিভীষিকাময় ও দুর্বিষহ কালরাতের স্মৃতি আজ তাঁর জীবনের একমাত্র সম্বল। প্রধানমন্ত্রী আজ নিঃস্ব, চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। তাঁর জীবনের একটাই স্বপ্ন, একটাই ব্রত বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সোনার বাংলা গড়ে তোলা। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো এবং বাংলার মানুষের মাঝেই বেঁচে থাকা। যার জীবনের ব্রত এমন মহৎ এমন সুন্দর তাঁকে দুর্নীতি স্পর্শ করতে পারে না- পিপল্স এ্যান্ড পলিটিক্সের প্রতিবেদন তারই প্রমাণ করে। শেখ হাসিনা এই গৌরবময় অর্জন বাংলাদেশ এবং বাঙালী জাতিকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার স্থান করে দিয়েছে তবে নিজ দলের মধ্যে এর একটা নেতিবাচক প্রভাবের সম্ভাবনা রয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীরা যদি মনে করেন শেখ হাসিনার এই অর্জন আগামী নির্বাচনে জয়লাভের জন্য যথেষ্ট। আমাদের আর তেমন কাজ করার দরকার নেই। তবে সেটা হবে মারাত্মক ভুল। এ প্রসঙ্গে আমি একটা উদাহরণ উপস্থাপন করছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন চার্চিল। তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ছিলেন জেনারেল এবং ময়দানে যুদ্ধ করা সেনাপতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ছিলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এবং একজন শক্তিশালী নেতা। চার্চিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয় নিশ্চিত করেছিলেন। যুদ্ধের পর ১৯৪৫ সালে ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে ব্রিটেনবাসী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তার অবদান অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা বিবেচনায় আনেনি। তারা ভোট দিয়ে জিতিয়ে দিয়েছিল শ্রমিক দলকে। এই দৃষ্টান্তকে স্মরণ রেখে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের কাজ করতে হবে, শুধু নেত্রীর সাফল্যের ওপর ভর করে রাজনীতিতে এগুনো যাবে না। আরও একটি বিষয় লক্ষণীয় যে প্রধানমন্ত্রীর সততার অর্জন নিয়ে প্রচার-প্রচারণা তেমন নেই। শুধু যারা পত্র-পত্রিকা নিয়মিত পড়েন তারাই খবরটা জানেন। ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করার পর যেমন ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে এক্ষেত্রেও তেমন প্রচারণা চালানো উচিত। প্রবাদ আছে, এক বালতি দুধকে নষ্ট করার জন্য একফোঁটা গো-চনাই যথেষ্ট। পিপলস এ্যান্ড পলিটিক্সের প্রতিবেদনে যেহেতু সরকারের বিরুদ্ধে কিছু দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সেহেতু সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রয়োজনীয় দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। কারণ, সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী এর দায়-দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। তাছাড়া আমাদের দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বড় বড় দুর্নীতি সম্পর্কে খোঁজ-খবর না রাখলেও ছোট ছোট দুর্নীতি তাদের দৃষ্টি এড়ায় না। সরকারের কোন ব্যক্তি কিংবা দলীয় নেতা-কর্মীদের কর্মকা-ের ফলে প্রধানমন্ত্রীর এত বড় সাফল্য প্রশ্নবিদ্ধ হোকÑ তা আমাদের কারও কাম্য নয়। লেখক : ব্যাংকার
×