ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসবমুখর আর্ট ক্যাম্প শিল্পকলায়

জলরঙের জাদু দিনভর ছবি আঁকা

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২৯ নভেম্বর ২০১৭

জলরঙের জাদু দিনভর ছবি আঁকা

মোরসালিন মিজান আর্ট ক্যাম্প নিয়মিতই হয়। হচ্ছে। তবে মঙ্গলবার শিল্পকলা একাডেমিতে যে আয়োজনটি ছিল, আলাদা করে বলার মতো। প্রায় আড়াইশ’ শিল্পী এতে অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে এসেছিলেন তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীরা। তাদের কেউ চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী। কেউ আছেন নিজস্ব চর্চা নিয়ে। সবাই সমবেত হয়েছিলেন জাতীয় চিত্রশালা প্লাজায়। ওয়াটার কালারে কত সহজে সুন্দর কাজ হয়! দ্রুত কাজ হয়! মনোযোগ দিয়ে তারা সেগুলো দেখেছেন। টেকনিকগুলো রপ্ত করেছেন। তারপর নিজেরাই এঁকেছেন ছবি। এভাবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উৎসবমুখর ছিল গোটা এলাকা। জলরং কর্মশালার আয়োজন করে আলকাতরা নামের একটি সংগঠন। শিল্পীদের এই প্ল্যাটফর্ম থেকে শিল্প-শিক্ষা প্রসারে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আর্ট এডুকেশন প্রজেক্ট নিয়ে তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখছেন সংগঠকরা। সেই লক্ষ্যে আয়োজন করা হয় জলরং কর্মশালার। এটি তাদের প্রথম উদ্যোগ। কর্মশালা চলাকালীন সময় চিত্রশালা ভবনের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় পুরোটাজুড়ে নবীন শিল্পীদের আনন্দঘন উপস্থিতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, ঢাকা আর্ট কলেজ, ইউডা, বাফা, নারায়ণগঞ্জ আর্ট কলেজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা দল বেধে এসেছিলেন। ছেলেরা মেয়েরা হাঁটু ভাঁজ করে মেঝেতে বসেছিলেন। সবার দৃষ্টি ছিল শাহনূর মামুনের দিকে। জলরঙে সুন্দর কাজ করে প্রশংসিত হওয়া শিল্পী ছিলেন প্রশিক্ষকের ভূমিকায়। শিক্ষার্থীদের সামনে মাত্র ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা খরচ করে ছবি আঁকেন তিনি। কম সময়ে চমৎকার চিত্রকর্ম। ছবি আঁকার পাশাপাশি জলরঙের টেকিনিকগুলা হাতে কলমে শিখিয়ে দেন। এরপর অংশগ্রহণকারীদের ছবি আঁকার পালা। জলরঙে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আঁকেন তারা। টেকনিকগুলো যে যার মতো করে যাচাই করে নেন। এরপর রং শুকোনোর জন্য ছবিগুলো মেঝেতে ছড়িয়ে দেয়া হলে ফলটা তৎক্ষণাত দেখা হয়ে যায়! কারও কারও কাজ এত ভাল যে, মনেই হয় না জলরঙে নতুন তারা! কর্মশালার প্রাথমিক সাফল্য বলা চলে ওই কাজগুলোকে। বাফার শিক্ষার্থী সুপর্ণা গমেজ কর্মশালায় যোগ দিতে পেরে বেশ আনন্দিত। বললেন, এখানে ওয়াটার কালারে কাজ করার কিছু টেকনিক দেখানো হয়েছে। কালার গ্রেড দেখেছি। এটা খুব কাজে দেবে আমার। নারায়ণগঞ্জ আর্ট কলেজ থেকে এসেছিলেন মশিউর রহমান। চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী বলেন, এখানে এসে অল্প সময়ে ওয়াশ পদ্ধতিতে দ্রুত কাজ করতে দেখলাম। কালারের ব্যবহারটা লক্ষ্য করলাম। আমি কী বলব? অভিভূত হয়ে গেছি। নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ আমাদের জন্য খুব হেল্পফুল হয়। কর্মশালার প্রশিক্ষক শাহনূর মামুনও খুব সন্তুষ্ট। বললেন, বাংলাদেশ জলরঙের দেশ। এখানে প্রকৃতি সুন্দর। বর্ষা এবং শীত সুন্দর। আমাদের নদী আছে। জল আছে। সমতল ভূমি পাহাড় কজী নেই! এসব আঁকার জন্য ওয়াটার কালরের কোন তুলনা হয় না। কিন্তু এখন তো জলরঙে কাজ কম হয়। কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা যে কেন হলো জানি না। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, এসএম সুলতান শফিউদ্দীন আহমদের মতো কিংবদন্তি শিল্পীরা কী সুন্দর ওয়াটার কালার করেছেন! এখন চর্চাটা হারিয়ে যেতে বসেছে। ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আরও কাজ করা হবে বলে জানান আলকাতরার অন্যতম সদস্য। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিল্পী প্রদ্যোৎ কুমার দাস। কর্মশালা সফল করতে পরিশ্রম করেছেন। সব মিলিয়ে কেমন হলো? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এত শিল্পী অংশগ্রহণ করবেন আমরা ভাবিনি। একশ’র মতো আশা করেছিলাম। এসেছেন দুই শতাধিক। এটা বড় পাওয়া। জলরং নিয়ে তাদের মধ্যে বিপুল আগ্রহ দেখেছি। এই আগ্রহ আমরা কাজে লাগাতে চাই। শিল্প শিক্ষা প্রসারে তাদের সংগঠন আরও অনেক কাজ করবে বলে জানান তিনি।
×